Friday, January 2, 2015

সশস্ত্র বাহিনীতেও বেতন দ্বিগুণ করার সুপারিশ:প্রথম অালো

বেসামরিক সরকারি চাকরিজীবীদের বৃদ্ধির সঙ্গে মিল রেখেই সশস্ত্র বাহিনীর (সেনা, বিমান ও নৌ) সদস্যদের বেতনও প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে ‘সশস্ত্র বাহিনী বেতন কমিটি’।  সচিবালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন জমা দেয় এ কমিটি। কমিটির প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আনোয়ার হোসেনসহ অন্য সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি গঠিত সশস্ত
্র বাহিনী বেতন কমিটি আট সদস্যের এ কমিটিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিবসহ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর সাতজন প্রতিনিধি রয়েছেন। বেসামরিক সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে ২০ ধাপের (গ্রেড) পরিবর্তে ১৬ ধাপের সুপারিশ করেছে জাতীয় চাকরি ও বেতন কমিশন। সশস্ত্র বাহিনী বেতন কমিটিও নিজেদের জন্য ১৬ ধাপের সুপারিশ করেছে। প্রতিবেদন দাখিলের পর আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, জেনারেলদের জন্য সর্বোচ্চ এক লাখ, লেফটেন্যান্ট জেনারেলদের জন্য ৮৮ হাজার, মেজর জেনারেলদের জন্য ৮০ হাজার এবং সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত বেসামরিক চাকরিজীবীদের (নন-কমপেন্ডেট এনরোলমেন্ট) জন্য সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২০০ টাকা বেতনকাঠামোর সুপারিশ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে সেকেন্ড লেফটেন্যান্টদের জন্য ৩০ হাজার, লেফটেন্যান্টদের জন্য ৩২ হাজার, ক্যাপ্টেনদের জন্য ৩৭ হাজার, মেজরদের জন্য ৪৫ হাজার, লেফটেন্যান্ট কর্নেলদের জন্য ৫২ হাজার, কর্নেলদের জন্য ৬০ হাজার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেলদের জন্য ৭০ হাজার টাকা সুপারিশ করা হয়েছে। বেসামরিকের ক্ষেত্রে সচিবদের জন্য যেমন ৮০ হাজার টাকার বাইরে অতিরিক্ত আরও চার হাজার অর্থাৎ ৮৪ হাজার টাকার সুপারিশ রয়েছে, সামরিকের ক্ষেত্রে এই ৮৪ হাজার টাকা সুপারিশ করা হয়েছে মেজর জেনারেলদের জন্য। সৈনিক ও জুনিয়র কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বেতনকাঠামোও জানা গেছে। এর মধ্যে এনসি (ই) ৯ হাজার, সৈনিক ৯ হাজার ৫০০, ল্যান্স করপোরাল ১০ হাজার ৫০০, করপোরাল ১১ হাজার ৫০০, সার্জেন্ট ১৭ হাজার, ওয়ারেন্ট কর্মকর্তা ২৫ হাজার, সিনিয়র ওয়ারেন্ট কর্মকর্তা ২৭ হাজার, চিফ আর্টিফিশার ২৮ হাজার এবং মাস্টার ওয়ারেন্ট কর্মকর্তার বেতনকাঠামো ২৯ হাজার টাকা করার সুপারিশ করা হয়েছে। বাড়িভাড়া, ঝুঁকিভাতাসহ সব ধরনের ভাতা যৌক্তিকীকরণের গুরুত্ব তুলে ধরে কমিটির প্রধান আনোয়ার হোসেন বলেন, সুপারিশ তৈরিতে সশস্ত্র বাহিনীর তৃণমূল পর্যায়ের সদস্যদের মতামত নেওয়া হয়েছে। জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশনের সঙ্গেও বৈঠক করা হয়েছে একাধিকবার। বেসামরিকের সঙ্গে মিল রেখে বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করা হলেও সামরিক বেতনকাঠামোতে ভাতার পরিমাণ বেসামরিকের তুলনায় বেশি, ভাতার শ্রেণিও বেশি বলে জানা গেছে। বেতন কমিটির প্রধান আরও বলেন, বাহিনীর প্রধানেরা র্যাংক অনুযায়ী বেতন পাবেন। একজন বাহিনীর প্রধান যদি চার তারকা জেনারেল হন, তবে তাঁর বেতন হবে এক লাখ টাকা। মেজর জেনারেল থেকে সেকেন্ড লেফটেন্যান্টদের বেতনকাঠামো বেসামরিক চাকরিজীবীদের বেতনকাঠামোর ধাপগুলোর সঙ্গে মিল রাখা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ প্রশিক্ষিত কোর্স যেমন: সেনাবাহিনী কমান্ডো, প্যারা কমান্ডো, প্যারা ট্রুপস এবং স্নাইপারদের জন্য বিশেষ ভাতার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাতে সেনাসদস্যরা কাজ করতে আগ্রহী হন, সে জন্য সারা দেশে একই সমান বাড়িভাড়া এবং প্রতিবন্ধী সন্তানদের জন্য বিশেষ ভাতা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান আনোয়ার হোসেন। প্রতিবেদন পাওয়ার পর অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এটা তো আমি এখনো দেখিনি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে এর সমন্বয় দেখতে চাই।’ প্রতিটি সুপারিশেই কিছু না কিছু নতুন ও উদ্ভাবনী বিষয় থাকে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবকিছু দেখেই সিদ্ধান্ত নেব।’ জাতীয় বেতন কমিশনের সুপারিশ নিয়ে পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এটা ভালো। সমাজের যে অংশের কথা কমিশনের প্রতিবেদনে উঠে আসেনি, গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে তা উঠে আসছে।’ বেসামরিক ও সামরিকসহ দেশে মোট আটটি আলাদা বেতনকাঠামো রয়েছে। অন্যগুলো হচ্ছে বিচার বিভাগ, বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি), ব্যাংক ও অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান, স্বশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এবং বেসামরিক সেবিকা (নার্স)।

No comments:

Post a Comment