চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ছাত্রদল নেতা নিহত হয়েছেন। নিহত মতিউর রহমান এম (২৬) উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের বাজিতপুর গুহিপাড়া গ্রামের মন্টু আলীর ছেলে এবং শ্যামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি। ছাত্রদল নেতাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার প্রতিবাদে জেলায় আগামীকাল থেকে সোমবার পর্যন্ত টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে জেলা বিএনপি। এদিকে মতিউরের মৃত্যুর শোকে মারা গেছেন নানা ভোগু
বিশ্বাস। তিনি শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে মারা যান বলে পরিবার সূত্র জানায়। র্যাবের চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর কামরুজ্জামান পাভেল জানান, কানসাটে অব্যাহত সন্ত্রাসের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে যৌথবাহিনী অভিযানে ছাত্রদল নেতা কানসাট সোলেমান ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র মতিউর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে তাকে নিয়ে র্যাবের সদস্যরা অস্ত্র উদ্ধারে কানসাটে যায়। এ সময় তার সহযোগীরা র্যাবকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ও ককটেল নিক্ষেপ করলে র্যাবও পাল্টা গুলি করে। একপর্যায়ে মতিউর পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। ঘটনাস্থল থেকে তার লাশ ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। লাশটি শিবগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়। শিবগঞ্জ থানা পুলিশ শুক্রবার দুপুরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চাঁপাইনবাবগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- একটি পিস্তল, একটি রিভলবার, দুটি বন্দুক, পাঁচ রাউন্ড গুলি, তিনটি ম্যাগাজিন, ১৭টি ককটেল, ১০টি পেট্রলবোমা ও পাঁচটি বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র। র্যাবের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, মতিউর তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী এবং তার নেতৃত্বে শিবগঞ্জে ট্রাকে আগুন ও পুলিশের ওপর হামলাসহ নাশকতা চালানো হয়। জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক মো. শাহজাহান মিঞা বলেন, মতিউরকে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় আটক করে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা বা জিডি নেই। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা অস্ত্র সাজানো নাটক মাত্র। আইনশৃংখলার নামে হত্যাকারীদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি। শাহজাহান মিঞা আরও অভিযোগ করেন, শিবগঞ্জে আইনশৃংখলা রক্ষার নামে যৌথবাহিনী মানুষকে হয়রানি করছে। এমনকি বাড়িঘরে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করছে। এর প্রতিবাদে রোববার ও সোমবার জেলায় টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল আহ্বান করা হল। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে যৌথবাহিনীর অভিযান শুরুর পর থেকেই পুরো শিবগঞ্জে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। শুক্রবার সকালে উপজেলার মুসলিমপুর, ধোবড়া, শ্যামপুর, কানসাট ও রসুলপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায় মানুষজনের নেই তেমন আনাগোনা। এলাকার হাটবাজার, দোকানপাট ও সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। জরুরি কাজ ছাড়া নারীরাও ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। মুসলিমপুর গ্রামের বৃদ্ধা সুলতানা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘বাবারে হামার বাড়িতে কোনো ব্যাটা ছাইলা (ছেলে) নাই। বাড়িতে কোনো বাজার নাই, দোকানপাট সব বন্ধ, কী খেয়ে বাঁচব। হামরা সরকারের কাছে কিছু চাহি না, শুধু একটু শান্তি চাই।’
No comments:
Post a Comment