Wednesday, January 14, 2015

রিয়াজ রহমান গুলিবিদ্ধ:যুগান্তর

সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে গুলশানে ‘অবরুদ্ধ’ বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করে ফেরার পথে ২ নম্বর গোল চত্বরের অদূরে ৪৩ নম্বর রোডে তিনি দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন। এ সময় সন্ত্রাসীরা তার প্রাইভেটকারটিতেও আগুন ধরিয়ে দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আইনশৃংখলা বাহিনীর কড়া ন
িরাপত্তাবেষ্টিত অভিজাত গুলশান এলাকায় এ ধরনের হামলার ঘটনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এদিকে রাতে এক বিবৃতিতে এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি এ সন্ত্রাসী ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের উসকানিতে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সাবেক এ কূটনীতিকের ওপর হামলার ঘটনায় বৃহস্পতিবার সারা দেশে ২৪ ঘণ্টা হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার যুগান্তরকে বলেন, রাত ৮টার দিকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। ৮৬ নম্বর রোডে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে প্রায় আধ ঘণ্টা অবস্থানের পর তিনি রাত সাড়ে ৮টার পরপরই বেরিয়ে আসেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যে তার গাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং গুলি ছোড়ার খবর পাই। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী গুলশানের ৪৩ নম্বর রোডে ধানসিঁড়ি হোটেলের নিরাপত্তাকর্মী সিদ্দিকুর রহমান জানান, রাত পৌনে ৯টার দিকে হোটেল ওয়েস্টিনের অদূরে পার্কিং করা গাড়িতে উঠছিলেন রিয়াজ রহমান। এ সময় তিনটি মোটরসাইকেলে আট যুবক এসে গাড়িটি ঘিরে ধরে। মোটরসাইকেলের পেছন থেকে কয়েক যুবক নেমে রিয়াজ রহমানের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছঁড়ে গ্লাস ভেঙে ফেলে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই যুবকদের একজন অস্ত্র বের করে খুব কাছ থেকে রিয়াজ রহমানকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। বাকি যুবকদের কয়েকজন অস্ত্র বের করে ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতংক ছড়িয়ে দেয়। ততক্ষণে গাড়িটির চালক দৌড়ে পালিয়ে যায়। গুলি ছোড়ার পাশাপাশি দুর্বৃত্তরা রিয়াজ রহমানের গাড়িতে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘটনার অপর প্রত্যক্ষদর্শী মোশারফ হোসেন জানান, সন্ত্রাসীরা চলে যাওয়ার পর স্থানীয় লোকজন গুলিবিদ্ধ  রিয়াজ রহমানকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। ইউনাইটেড হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, রিয়াজ রহমানের ডান পায়ে দুটি এবং কোমরের নিচে দুটি গুলি লেগেছে। হাসপাতালে আনার পর তাকে দ্রুত অপারেশন থিয়েটারে পাঠানো হয়। অস্ত্রোপচার শেষে রাত সাড়ে ১১টায় এইচডিইউ জরুরি বিভাগ থেকে রিয়াজ রহমানকে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটের (এইচডিইউ)  ৯ নম্বর কেবিনে নেয়া হয়। সেখানে তিনি মেডিসিন ও অর্থোপেডিকস বিভাগের দু’জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। তিনি  জানান, প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে, তাই তাকে শংকামুক্ত বলা যাচ্ছে না।   এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে সাবেক এ কূটনীতিকে দেখতে স্ত্রী জিনাত চৌধুরী, মেয়ে আমিনা রহমান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য জেবা রহমান ও শামা ওবায়েদ হাসপাতালে ছুটে যান। রিয়াজ রহমানের মেয়ে আমিনা রহমান চিকিৎসকদের উদ্ধৃত করে বলেন, তার বাবা শংকামুক্ত। অবরোধের মধ্যে রিয়াজ রহমানের আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের আরও একজন উপদেষ্টা সাবিহউদ্দিন আহমেদের গাড়িতে আগুন দেয়া হয়। তিনিও অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক। খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে পুলিশের অবস্থানের মধ্যেই গত শনিবার তার গাড়ি পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। তিনি কার্যালয়ের কাছে পুলিশ ব্যারিকেডের কাছে গাড়ি রেখে দলীয় চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। এর পরদিন গুলশানের কূটনীতিকপাড়ায় দুটি দূতাবাসের অদূরে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তখন থেকে ওই এলাকায় নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে পুলিশ। এদিকে ঘটনার পর আগুনে পুড়ে যাওয়া রিয়াজ রহমানের গাড়িটি রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে গেছে। গুলশান থানা পুলিশ রাত ১২টায় ওই গাড়িটির কোনো হদিস দিতে পারেনি। রিয়াজ রহমান গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের উসকানিতেই এ হামলা হয়েছে। বিরোধী দলের ওপর এভাবে নগ্ন হামলা চালিয়ে শেষ রক্ষা হবে না বলে হুশিয়ারি দেন তিনি। মঙ্গলবার রাতে এক বিবৃতিতে খালেদা জিয়া বলেন, ‘রাতে আমাকে অবরুদ্ধ অবস্থায় দেখে বাড়ি ফেরার পথে পুলিশ বেষ্টনীর অদূরে রিয়াজ রহমানের ওপর এই কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় আমি ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন। এ হামলা ও প্রাণনাশের অপচেষ্টার নিন্দা ও প্রতিবাদের কোনো ভাষা নেই। সরকারি উচ্চ মহল থেকে উসকানিমূলক বক্তব্যের পরই রিয়াজ রহমান এই ধরনের সন্ত্রাসী হামলার শিকার হলেন।’ সরকারকে হুশিয়ারি দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন আরও বলেন, এভাবে বিরোধী দলের ওপর নগ্ন হামলা চালিয়ে এবং ভীতি প্রদর্শন ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের পরিনাম শুভ হবে না। এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। রিয়াজ রহমানের সুস্থতাও কামনা করেন তিনি।  

No comments:

Post a Comment