Saturday, January 31, 2015

হাবিবুর রহমান ছিলেন রেনেসাঁ মানব:প্রথম অালো

প্রয়াণের এক বছর পর গানে-আলোচনায় স্মরণ করা হলো বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানকে। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনের সন্ধ্যায় ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় এ আয়োজনে শোক নয়, বরং তাঁর অবদান স্মরণ করেই তাঁকে দীপ্তিময় করে তোলা হয়েছিল। প্রথম আলো আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের শুরুতেই বলা হয়, শোকের জন্য তাঁকে স্মরণ নয়। যাঁদের কাজ, চিন্তা ও মূল্যবোধ মানুষের জীবনকে গভীরভাবে স্পর্শ করে যায়, তাঁরা শারীরিকভ
াবে গত হলেও মানুষের জীবন ও চেতনায় থেকে যান। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ছিলেন তেমনই একজন মানুষ। কাজেই শোক নয়, তাঁর বৈচিত্র্যময় কাজের স্মরণের মধ্যে দিয়েই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। স্বজন, সুহৃদ ও কাছের মানুষদের নিয়ে এই অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের সূচনা বক্তব্যের পর হাবিবুর রহমানের প্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ এবং দেশাত্মবোধক গান ‘সময়ের দীর্ঘ পথে’ গেয়ে শোনান শিল্পী মাহমুদুজ্জামান বাবু। হাবিবুর রহমানের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠজন সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান স্মৃতিচারণা ও কাজের মূল্যায়ন করে বলেন, তাঁর জীবন থেকে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় আছে। বিচারপতি, রাষ্ট্র পরিচালক, ইতিহাসবিদ, ভাষা, শিল্প, সাহিত্য—এত বিচিত্র বিষয়ে এত গভীর চিন্তা করেছেন তিনি, যা এক কথায় বিস্ময়কর। অবসর নেওয়ার পর এত অল্প সময়ে এত বিচিত্র বিষয়ে লিখেছেন, যা অতুলনীয়। তাঁর লেখা কোনো বিশেষ প্রজন্মের জন্য নয়, যেকোনো সময়, যেকোনো প্রজন্মের উপযোগী। এটি তাঁর রচনার একটি বড় বৈশিষ্ট্য। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ তাঁর আলোচনায় তুলে ধরেছেন ব্যক্তিমানুষ হিসেবে হাবিবুর রহমানের গুণাবলি। বলেছেন, ‘তিনি ছিলেন সহজ-সরল, শিশুসুলভ মন ছিল তাঁর। ছিল সূক্ষ্ম রসবোধ। সবার সঙ্গে সমানভাবে মিশেছেন, পার্থক্য করেননি। যেমন আমি ভাবতাম, আমার সঙ্গে তাঁর বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। ভেবে খুব আনন্দ ও গর্ববোধ করেছি। পরে দেখি, সবার সঙ্গেই তাঁর এমন বিশেষ সম্পর্ক।’ অধ্যাপক মোরশেদ শফিউল হাসান স্মৃতিচারণা করেন ও প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের দুটি বই হরেক রঙের মানুষ, নাগরিকদের জানা ভালো নিয়ে আলোচনা করেন। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানকে রেনেসাঁ মানব হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, মানবজীবন সম্পর্কে ব্যাপক কৌতূহল ও পাণ্ডিত্য ছিল তাঁর অসাধারণ। ফলে এত বিচিত্র বিষয়ে তাঁর পক্ষে লেখা সম্ভব হয়েছে। তিনি জানতে এবং জানাতে ভালোবাসতেন। কাউকে ছোট-বড় বলে ভাবেননি। মনে করেছেন, সবার কাছেই তাঁর কিছু জানার আছে, সবাই তাঁকে কিছু না কিছু বলতে পারে। তিনি সেই কথা শুনেছেন, সমন্বিত করে তুলে ধরেছেন। গঙ্গাঋদ্ধি থেকে বাংলাদেশ বইটিকে তিনি বাংলাদেশের ইতিহাস জানার জন্য অতুলনীয় একটি বই হিসেবে মন্তব্য করেন। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের মেয়ে রুবাবা রহমান তাঁর বাবাকে নিয়ে এ ধরনের একটি আয়োজন করায় প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানান। বলেন, বাবার কাছ থেকে তাঁরা দেশ ও মানুষকে ভালোবাসার শিক্ষা পেয়েছেন। ব্যক্তিজীবনে সেই শিক্ষাই প্রয়োগ করছেন। বিচারপতি হাবিবুর রহমানের স্ত্রী অসুস্থ থাকায় অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের সঙ্গে প্রথম আলোর দীর্ঘদিন থেকে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তিনি নিয়মিত প্রথম আলোতে ও প্রথমা প্রকাশনে আসতেন। পত্রিকায় বিভিন্ন বিষয়ে লিখেছেন, অংশ নিয়েছেন প্রথম আলোর বিভিন্ন আয়োজনে। পত্রিকার সাংবাদিক থেকে শুরু করে নানা পর্যায়ের কর্মীদের আপনজনে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। সহজ-সরল ছিলেন, সবকিছু করতেন আনন্দের সঙ্গে। তবে যেখানে তিনি ‘না’ বলতেন, সেখানে ‘হ্যাঁ’ বলানো যেত না। এই অনন্য চারিত্রিক দৃঢ়তা ছিল তাঁর। অনুষ্ঠানে প্রথম আলোতে তাঁর বিভিন্ন সময়ে লেখা স্মৃতিকথা, ভ্রমণ, গল্প, কবিতা, অনুবাদ, সাক্ষাৎকার নিয়ে হরেক রঙের মানুষ এবং সমাজজীবনের বিভিন্ন জরুরি জ্ঞাতব্য বিষয় নিয়ে নাগরিকদের জানা ভালো বই দুটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত বই দুটি একুশের বইমেলাসহ বইয়ের দোকানগুলোতে পাওয়া যাবে।

No comments:

Post a Comment