Tuesday, January 20, 2015

অবরোধ চলছে চলবে:যুগান্তর

চলমান ‘রাজনৈতিক সংকট’ সমাধানে উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। একই সঙ্গে তিনি বলেন, অবরোধ কর্মসূচি চলছে, পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত এটি চলবে। সব প্রতিকূলতার মধ্যেই অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে বিএনপিসহ ২০ দলের সব নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।
et='_blank'> খালেদা জিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন পর্যায়ে যে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, তার প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। দেশের চলমান সংকট নিছক কোনো আইনশৃংখলার সমস্যা নয়। এটি রাজনৈতিক সংকট। এর রাজনৈতিক সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমরা আবারও আহ্বান জানাচ্ছি।’ গুলশান কার্যালয় থেকে রোববার গভীর রাতে পুলিশি ব্যারিকেড সরিয়ে নেয়ার পর সোমবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বিএনপি চেয়ারপারসন। ৫ জানুয়ারি অবরুদ্ধ অবস্থায় অবরোধ ডাকার পর সোমবার প্রথম সাংবাদিকদের সামনে এলেন খালেদা জিয়া। ৩ জানুয়ারি থেকে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ ছিলেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনের আগে স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। সন্ধ্যা থেকে ঘণ্টাখানেক চলা বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আরএ গণি, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, নজরুল ইসলাম খান ও সারোয়ারি রহমান উপস্থিত ছিলেন। তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই সংবাদ সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে তারা ছাড়াও চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল উপস্থিত ছিলেন। অবরোধে দেশব্যাপী নাশকতার জন্য সরকারকেই দায়ী করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অতীতেও এ ধরনের কাজ করেছে। তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সম্পর্কে দেশে-বিদেশে বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ক্ষমতাসীনরা নাশকতা ও অন্তর্ঘাতের পথ বেছে নিয়েছে। পুলিশি প্রহরার মধ্যে নারী, শিশু, ছাত্রছাত্রীদের বহনকারী যানবাহনে পেট্রলবোমা মেরে অনেক নিরপরাধ মানুষকে হতাহত ও দগ্ধ করা হয়েছে। এসব পৈশাচিক বর্বরতার আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’ খালেদা জিয়া বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা যদি শুভবুদ্ধি প্রণোদিত হয়ে বিনা ঘোষণায় কার্যালয় থেকে গতকাল (রোববার) গভীর রাতে অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়ে থাকে তাহলে আমি স্বাগত জানাই। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অত্যাচার, দমন অভিযান, গণগ্রেফতার বন্ধ করুন। মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা বন্দিদের মুক্তি দিন। গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকারের ওপর থেকে সব বাধা তুলে নিন। যে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন তা স্বাভাবিক করুন। মানুষকে স্বস্তি ও শান্তি দিন। উসকানি, ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচারের অপরাজনীতি বন্ধ করুন। জনগণের ভোট দেয়ার যে অধিকার কেড়ে নিয়েছেন তা ফিরিয়ে দিন এবং অবিলম্বে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদক্ষেপ নিন।’ অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হওয়ার পর আপনি বাসায় যাবেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এটা আমার অফিস। এখানে কাজ করব। আমার যখন, যেখানে খুশি যেতে পারলেই বোঝা যাবে অবরুদ্ধ নই। তার দাবি, সাংবাদিকরা নয়, সরকারই অবরোধ কর্মসূচি দিতে বাধ্য করেছে। অন্য কোনো কর্মসূচি দেবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবরোধ কর্মসূচি চলছে, চলবে। এ মুহূর্তে অন্য কোনো কর্মসূচি নয়। সরকার আলোচনা করলে অবরোধ প্রত্যাহর করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি প্রধান বলেন, তার আগে পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে। সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, তাকে এখানে অবরুদ্ধ করে রাখার আগেই ক্ষমতাসীনরা সারা দেশকে অবরুদ্ধ করে ফেলেছিল। ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল সব যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে। এরপর তিনি ৫ জানুয়ারি এই কার্যালয় থেকে বেরোনোর চেষ্টা করলে তাকে তালাবন্দি করে রাখা হয়। ট্রাক, জলকামান, সাঁজোয়া যান দিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয়। অবরুদ্ধ অবস্থায় তাদের ওপর নিষিদ্ধ পিপার স্প্রে ছোড়া হয়। এর বিষক্রিয়ায় তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। কী অমানবিক আচরণ তাদের ওপর করা হয়েছে, তা সবাই দেখেছেন। এর বিস্তারিত বিবরণ দিতে চাই না। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সবাই দেখেছে, অতীতের ধারাবাহিকতায় এক বছর ধরে তাদের এবং দেশবাসীর ন্যূনতম অধিকারগুলো সরকার কিভাবে হরণ করেছে। কিভাবে জুলুম-নির্যাতন, গুম-খুন, হামলা-মামলা চালানো হয়েছে। কেমন জঘন্য ও উস্কানিমূলক ভাষায় তাদের ক্রমাগত আক্রমণ করা হয়েছে। তারপরও তারা বারবার একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। আলোচনার ভিত্তি হিসেবে ৭ দফা প্রস্তাব পেশ করা হয়। তারা আমাদের আহ্বান ও প্রস্তাবকে তাৎক্ষণিকভাবে নাকচ করে দিয়ে অস্ত্রের ভাষায় সব দমিয়ে দেয়ার পথ বেছে নিয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ সারা দেশে নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার করেছে। সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। মিছিলের ওপর গুলি করেছে। টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করেছে। জনগণের প্রতিবাদের নিয়মতান্ত্রিক সব পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। খালেদা জিয়া বলেন, এ অবস্থায় তারা বাধ্য হয়ে সারা দেশে শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালনের ডাক দিয়েছে। কর্মসূচি চলছে এবং পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত তা চলতে থাকবে। তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের কোনো সুযোগ না দিতে ক্ষমতাসীনরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। সারা দেশে বিএনপি ও ২০ দলের নেতাকর্মীরা সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণ বিরাট মিছিল নিয়ে রাস্তায় নামছেন। সঙ্গে সঙ্গে মিছিলে গুলি চালানো হচ্ছে। কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করা হচ্ছে। পুলিশের ছত্রছায়ায় ক্ষমতাসীনদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরাও হামলা করছে। এর মধ্যে গুলিতে বেশ কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন। অনেকে আহত হয়েছেন। আমরা তাদের প্রতি গভীর সহানুভূতি জানাচ্ছি। বোমা হামলা ও বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারার ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগ দায়ী বলে দাবি করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, বিএনপি ও ২০ দল নিরীহ নিরপরাধ জনগণকে হত্যা ও তাদের ওপর আক্রমণ করা কিংবা তাদের পুড়িয়ে মারার নৃশংস অপতৎপরতায় বিশ্বাস করে না। মানুষের জীবনের বিনিময়ে আমরা রাজনীতি করতে চাই না, কখনও করিনি। অতীতে যাত্রীবাসে গানপাউডার দিয়ে আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারা, বোমা মেরে ও লগি-বৈঠার তাণ্ডব চালিয়ে মানুষ হত্যা এবং পুলিশ খুনের অপরাজনীতি আওয়ামী লীগই করেছে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, এখনও তারাই সুপরিকল্পিতভাবে এসব নৃশংস ঘটনা ঘটাচ্ছে। এর মাধ্যমে বিএনপি ও ২০ দলের নেতাকর্মীদের হত্যা, গ্রেফতার ও অত্যাচারের পথ প্রশস্ত করছে। যৌথ বাহিনীর অভিযানের নামে বিভিন্ন জনপদে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপি প্রধান বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ঘাতক বোমাবাজদের গ্রেফতার না করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ঘরবাড়িতে হানা দিয়ে তাদের আটক করা হচ্ছে। মহিলাসহ পরিবারের সদস্যদের হেনস্থা করা হচ্ছে। যৌথ বাহিনীর অভিযানের নামে বিভিন্ন জনপদে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হচ্ছে। এসব হত্যা-নির্যাতনের ঘটনার জড়িতদের আগামীতে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতীত নিরপেক্ষ ঐতিহ্য বহাল রেখে আইনসম্মতভাবে কর্তব্য পালনের আহ্বান জানাচ্ছি। আপনারা জানেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এখনও তালাবদ্ধ। দলের নেতাকর্মীরা কেউ নিরাপদে বাসায় থাকতে পারে না। হত্যার উদ্দেশ্যে রিয়াজ রহমানের ওপর গুলি হয়েছে। তার গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। বিএনপি নেতা সাবিহউদ্দিনের গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। দলের অনেক সিনিয়র নেতার বাসা ও অফিসে গুলি ও বোমা হামলা হয়েছে। অনেক জায়গায় অফিস পোড়ানো হয়েছে। কাউকে ধরা হয়নি। ঘটনাস্থল থেকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা অনেক জায়গায় অস্ত্র, বোমা ও গুলিসহ ধরা পড়েছে। তাদের সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বক্তব্যের শুরুতেই সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘গত ১৬ দিন ধরে আপনারা আমার এ অফিসের সামনে খোলা আকাশের নিচে তীব্র শীত, বৃষ্টি ও কুয়াশা উপেক্ষা করে রাস্তায় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। ২৪ ঘণ্টা পেশাগত কর্তব্য পালন করেছেন। নানা কড়াকড়ি ও সেন্সরশিপ উপেক্ষা করে সবাইকে দ্রুত সংবাদ পৌঁছে দিয়েছেন। টিভি সেটের সামনে বসে কিংবা সংবাদপত্রের পাতায় আমাদের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর রাখার জন্য উৎকণ্ঠিত দেশবাসীর প্রতিও আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’ একই সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, দেশী-বিদেশী বন্ধুরা, অন্যান্য ব্যক্তি ও সংগঠন উদ্বেগ ও সহানুভূতি প্রকাশ করায় তাদের এবং জোটের নেতাকর্মী সারা দেশে যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে চলেছেন, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছেন তাদেরও ধন্যবাদ জানান তিনি। ১৬ দিন পর যান চলাচল শুরু : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানে নিজ কার্যালয়ে টানা ১৬ দিনের অবরুদ্ধ অবস্থার অবসান হয়েছে। রোববার রাত আড়াইটার দিকে হঠাৎ করেই গুলশান কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশের ভ্যান ও জলকামান সরিয়ে নেয়া হয়। আস্তে আস্তে চলে যায় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। প্রধান ফটকে রাতে ৪ জন পুলিশ সদস্য থাকলেও সোমবার সকালে সব পুলিশই সরে যান। গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গুলশান-২-এর ৮৬ নম্বর সড়কটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। কার্যালয়ের সামনে থাকা পুলিশ নেই। সেখানে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনীর (সিএসএফ) সদস্যরা ডিউটি করছেন। সিএসএফের একটি গাড়ি ফটকের সামনে আড়াআড়িভাবে রাখা আছে। ফটকের ভেতরেও সিএসএফের একটি গাড়ি রাখা রয়েছে। সেখান দিয়ে চলছে সব ধরনের গাড়ি। সাধারণ মানুষের চলাচলে ছিল না কোনো বাধা। কার্যালয়ের ভেতরে নেতাকর্মীসহ সবাই প্রবেশ করতে পারছেন।  

No comments:

Post a Comment