Tuesday, January 20, 2015

রাজধানীতে বাসে আগুন ভাঙচুর:নয়াদিগন্ত

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধের ১৪তম দিন গতকাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও গাড়িতে আগুন দেয়া হয়। বিভিন্ন এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ও ঝটিকা মিছিল করেছে বিএনপি-জামায়াতের সমর্থকেরা। এ ছাড়া রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করা হয়। রাজধানীর মোড়ে মোড়ে ছিল কড়া পুলিশি পাহারা। সকালে রাজধানীতে গণপরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করেছে। তবে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে যানবাহনের সংখ্যা কমতে
থাকে। এ ছাড়া গতকাল সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে নগরীতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তাদের সকাল পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন স্থানে টহল দেয়ার কথা রয়েছে। অবরোধে গতকাল বেশির ভাগ দূরপাল্লার বাস বন্ধ ছিল। পুলিশ পাহারায় দু-চারটি বাস-ট্রাক ছেড়ে গেলেও তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। লঞ্চ চলাচলও সীমিত হয়ে আসছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।   পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বেলা দেড়টার দিকে মতিঝিল মধুমিতা সিনেমা হলের সামনে একটি থেমে থাকা বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় কে বা কারা। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন জানান, ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।   পুলিশ জানায়, সিনেমা হলের সামনে জনতা ব্যাংকের একটি স্টাফ বাস থামানো ছিল। দুর্বৃত্তরা ওই বাসে পেট্রল ঢেলে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি।   মতিঝিল থানার এসআই আলমাস হোসেন বলেন, দুপরে সিনেমা হলের সামনে বাসটিতে আগুন দেয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। কাউকে আটক করাও যায়নি।   সকালে মিরপুর পূর্ব থানা জামায়াতের উদ্যোগে একটি মিছিল মিরপুরের মনিপুর স্কুলের সামনে থেকে শুরু হয়ে কাসেমের মোড় হয়ে দিগন্ত ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনে এসে সড়ক অবরোধ করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য মাহফুজুর রহমান, থানা সেক্রেটারি জসিমউদ্দিন, জামায়াত নেতা শাহ আলম তুহিন, আ: মুতাকাব্বির, মিজানুর রহমান প্রমুখ।   সকাল ৭টার দিকে নাখালপাড়া ফাইওভার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে তেজগাঁও থানা জামায়াত। মিছিলে নেতৃত্ব দেন জামায়াত নেতা আহমদউল্লাহ।   সকাল ৮টায় শাহজাহানপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে জামায়াত। মিছিলে নেতৃত্ব দেন জামায়াতের ঢাকা মহানগরী মজলিসে শুরার সদস্য মো: শামসুর রহমান ও শিবির নেতা মুস্তাফিজুর রহমান।   সকাল পৌনে ৮টায় মগবাজার রেল ক্রসিংয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও অবরোধ করে রমনা থানা জামায়াত। থানা সেক্রেটারি জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে কর্মসূচিতে আরো উপস্থিত ছিলেন জামায়াত নেতা আতাউর রহমান সরকার, সাঈদুর রহমান, আশরাফুল আলম, শিবির নেতা মুরাদ হোসেন, আকরাম হোসেন প্রমুখ।   কল্যাণপুরে প্রধান সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে জামায়াতে ইসলামী মিরপুর (পশ্চিম) ও দলের দারুসসালাম থানা শাখা। এ সময় পুলিশ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় এবং বেশ কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে।   এ ছাড়া ডেমরা থানার উদ্যোগে একটি মিছিল রানীমহল সিনেমা থেকে শুরু হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় বক্তৃতা করেন থানা আমির হাফিজুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন জামায়াত নেতা মোহাম্মদ আলী, মিজানুর রহমান, আবু হানিফ প্রমুখ।   সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় বাবুবাজার ব্রিজের নিচ থেকে মিছিলটি বের করা হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন কোতোয়ালি থানা জামায়াতের আমির আবু আব্দুল্লাহ, বংশাল থানা জামায়াতের আমির মাকবুবুর রহমান এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের অর্থ সম্পাদক এস হাসান প্রধান। মিছিলটি ইসলামপুর হয়ে পাটুয়াটুলি গিয়ে শেষ হয়। সেখানে দায়িত্বরত কোতোয়ালি থানা পুলিশ জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।    এদিকে রাজধানীর শাহবাগে যাত্রীবাহী মিনিবাসে ককটেল বিস্ফোরণে চালকসহ দু’জন আহত হন। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর হামলার সাথে জড়িত সন্দেহে একজনকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে জনতা।   হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইউনাইটেড পরিবহনের আহত বাসচালক রাশেদুল ইসলাম রাসেল (২৫) জানান, সদরঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে মিরপুর যাচ্ছিলেন। শাহবাগ মোড়ে গাড়ি স্লো করে যাত্রী ওঠানোর সময় হঠাৎ তার সামনে (বাসের বাইরে) ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। স্পি­ন্টার ছিটকে তার হাতে কপালে ঢুকে পড়ে। প্রথমে তাদের দু’জনকে বারডেম হাসপাতালে নেয়া হয়। তিনি মিরপুর ১০ নম্বর বেনারসি পল্লীতে থাকেন বলে জানান।   একই সময়ে পুরান ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে চা বিক্রেতা আবদুস সামাদ (৬৫) ককটেল বিস্ফোরণে আহত হন। তাকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি নিয়ে যান তার ছেলে আল আমিন। তার বাম পায়ে স্পি­ন্টার ঢুকে পড়ে।   হাসপাতালে আহত আবদুস সামাদ জানান, পশ্চিম ইসলামবাগের একটি ডিমের দোকানে বসে থাকাবস্থায় হঠাৎ ককটেল এসে পড়ে। এ সময় তিনি ছাড়াও আরো একজন আহত হন। তবে তার নাম জানাতে পারেননি তিনি।   এ দিকে সোমবার রাত সোয়া ৭টায় মতিঝিল সেনাকল্যাণ ভবনের সামনে একটি প্রাইভেট কারে আগুন ধরে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।   রাজধানীর গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট পৌনে এক ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। গতকাল সোমবার রাত ৯টায় এ ঘটনা ঘটে।   ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সদর দফতরের ডিউটি অফিসার আতাউর রহমান গত রাতে জানান, রাত ৯টার পরে ২১ নম্বর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বির্ল্ডিংয়ের সাত তলায় ধোঁয়া বের হতে দেখে স্থানীয় লোকজন ফায়ার সার্ভিসকে জানান। পরে পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করে। রাত ৯টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে আগুনের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।

No comments:

Post a Comment