Friday, January 2, 2015

বড় নাশকতার আশংকা:যুগান্তর

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ওপর নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘হিজবুত তাহরির’র হামলা হতে পারে। বাংলাদেশে খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে এ হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ধর্মানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে দেশে অরাজকতার লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরেও সংগঠনটি বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে চায় বলে আশংকা প্রকাশ করেছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এ সংক্রান্
ত একটি প্রতিবেদন সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে সংস্থাটি। ‘হিজবুত তাহরির’র সব ধরনের প্রচারণা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়াসহ ছয় দফা সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়- ‘হিজবুত তাহরির বাংলাদেশে খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ওপর হামলা করার চেষ্টা করতে পারে। নিষিদ্ধ ঘোষিত এই সংগঠনটি ইসলাম ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করে সাধারণ জনগণের ধর্মানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে দেশে বিশৃংখলা ও অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে।’ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বর্তমানে সেনাবাহিনীতে কর্মরত ইসলাম ধর্মের প্রতি দুর্বল ও ধর্মভীরু সেনা কর্মকর্তা-সদস্য ‘হিজবুত তাহরির’ প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি সেনা কর্মকর্তাদের আত্মীয়-স্বজনদের জিম্মি করে তাদের স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা করতে পারে। বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে হিজবুত তাহরির যে কোনো সময় নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে অনাকাক্সিক্ষত পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করা হয় প্রতিবেদনে। এতে আরও বলা হয়- ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে লিফলেট এবং পোস্টারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সংগঠনটি নানা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে ‘হিজবুত তাহরির’র বিতরণ করা লিফলেট প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়- ‘হে দেশবাসী! কোথায় সেই সেনা অফিসার যে বলবে, ...দেশবাসীর ওপর আর একটা গুলিও বরদাস্ত করা হবে না?’ শিরোনামের লিফলেটে পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ও কয়েকটি হাদিসের তরজমা করে বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর সমালোচনা করে বিরূপ মন্তব্য করা হয়। এতে সরকারের প্রতি ঘৃণা, ধিক্কার ও অভিশাপ জানিয়ে তাদের প্রত্যাখ্যান করারও আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া বর্তমান সরকারকে গুম, খুনের জন্য দায়ী ও সাধারণ জনগণের হত্যাকারী উল্লেখ করে কোরআনের একটি আয়াতও তুলে ধরা হয় লিফলেটে। হিজবুত তাহরিরের লিফলেট প্রসঙ্গে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বর্তমান সরকারকে ইসলামের শত্র“ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশী মদদদাতা ও মার্কিন-ব্রিটেন-ভারতের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উল্লেখ করা হয় লিফলেটে। এতে বলা হয়, ‘তাদের প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশকে খেলাফত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে ‘হিজবুত তাহরির’কে সহযোগিতা ও এই সংগঠনের নেতৃত্বে সংগ্রাম করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এক্ষেত্রে একটি হাদিসের উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া হিজবুত তাহরিরের লিফলেটে বাংলাদেশে খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সেনা কর্মকর্তা, বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ লিফলেটে বেশ কিছু অতি স্পর্শকাতর বিষয় উল্লেখ রয়েছে, যা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। হিজবুত তাহরিরের অপতৎপরতা রোধে ছয় দফা সুপারিশ করা হয়েছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। এগুলো হচ্ছে- ১. নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনটি যাতে নিজেদের প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারে সেজন্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সতর্ক ও তৎপর থাকা। ২. সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীসহ অন্যান্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীতে কর্মরত কর্মকর্তা-সদস্যদের ওপর যাতে এ নিষিদ্ধ সংগঠনের প্রভাব না পড়ে সে ব্যাপারেও সংশ্লিষ্টদের আরও সতর্ক থাকা। ৩. লিফলেট বিতরণ ও প্রচারণাকারীদের দেখামাত্র আটক করে দ্রুত শাস্তি দেয়া। ৪. হিজবুত তাহরিরের কার্যক্রমে যাতে সাধারণ জনগণ সম্পৃক্ত হতে না পারেন, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া। ৫. সংগঠনটির দলীয় কার্যক্রম বন্ধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো এবং ৬. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হিজবুত তাহরিরের কার্যক্রম বন্ধে ভিসিসহ প্রশাসনিক ও একাডেমিক কর্মকর্তাদের সর্তক করা।  

No comments:

Post a Comment