Tuesday, January 13, 2015

পণ্য পরিবহনে ক্ষতি বাড়ছে:প্রথম অালো

টানা অবরোধে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকামুখী কিংবা ঢাকা থেকে বিভিন্ন স্থানে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে করে পণ্য আনা-নেওয়া অনেক কমে গেছে। চালক ও সহকারীর জীবন ও যানের ঝুঁকি নিয়ে চলছে কিছু ট্রাক। পুলিশি পাহারায় রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল করলেও অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে কোনো নিরাপত্তা নেই। ফলে সেসব পণ্যের পরিবহনব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। আর ঢাকার বাইরে থেকে পণ্য ঢাকায় আসতে না পারার ক
ারণে সাধারণ মানুষের হাতে নিত্যপণ্য পৌঁছাতে পারছে না। আবার বিভিন্ন স্থলবন্দরে আটকে আছে শিল্পের কাঁচামাল। এতে উদ্যোক্তাদের ভোগান্তিও বেড়েছে। পণ্য পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিকদের দুই সংগঠন বলছে, অবরোধের কারণে পণ্য পরিবহন খাতে প্রতিদিন অন্তত ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান ট্রাক পণ্য পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিটি গাড়িতে খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন আয় হয় আড়াই হাজার টাকা। সে হিসাবে, প্রতিদিন গড়ে যদি ৪০ হাজার গাড়ি না চলে তাহলে অন্তত ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এর সঙ্গে শ্রমিকের মজুরিসহ আরও কিছু খরচ প্রতি মাসে দিতে হয়। আমাদের হিসাবে, ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ১৫ কোটি টাকা।’ আর বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী প্রথম আলোকে বলেন, একটি গাড়ি যদি এক দিন বসিয়ে রাখা হয় তাহলেও এর পেছনে ১ হাজার ২০০ টাকা খরচ হয়। ৪০ হাজার গাড়ি বসে থাকলে মালিকদের ক্ষতি হয় ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। মালিকদের দুই সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে ১ লাখ ২৭ হাজার ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান রয়েছে। এসব যান ১ থেকে ১৫ টন পর্যন্ত পণ্য পরিবহন করতে পারে। স্বাভাবিক সময়ে ৬০ হাজারের মতো ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান সারা দেশে পণ্য আনা-নেওয়া করে। তবে অবরোধের পর থেকে পণ্যবাহী এসব যান চলাচল করছে ১৫ থেকে ২০ হাজার। মালিকেরা বলছেন, এবারের অবরোধে সারা দেশে আনুমানিক ২৫০ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ভাঙচুর হয়েছে। পোড়ানো হয়েছে ২৫-৩০টা যান। রুস্তম আলী বলেন, একটা ট্রাক যদি আংশিক পোড়ানো হয় তাহলেও সেটা সারাতে লাখ পাঁচেক টাকা লাগে। আর যদি ইঞ্জিনসহ পুড়ে যায় তাহলে ক্ষেত্রবিশেষে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) গত শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে, সাম্প্রতিক অবরোধের কারণে পরিবহনব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দুই লাখের বেশি বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান অলস পড়ে আছে এবং ২০ লাখেরও বেশি পরিবহন শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়ছেন। সব মিলিয়ে পরিবহন খাতে দৈনিক প্রায় ২০০ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ উত্তরবঙ্গ: পণ্য পরিবহন মালিকেরা জানান, অবরোধের মধ্যেও তিনটি পথে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান বেশি চলাচল করতে পারছে। এগুলো হলো ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-বেনাপোল আর ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। প্রথম দুটি মহাসড়ক দিয়ে আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী যান চলাচল করে বলে সেখানে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আর ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে বিপুল পরিমাণ পাথর আর কয়লা আমদানি হওয়ায় এই পথও কিছুটা নিরাপদ। ৬ জানুয়ারি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নতুন কমিশনারের সঙ্গে পরিবহন মালিকদের বৈঠক হয়। ওই আলোচনায় পুলিশি পাহারায় রপ্তানি পণ্যবাহী যান চলাচলের সিদ্ধান্ত হয়। পরিবহন মালিকেরা বলছেন, ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতিদিন সকাল নয়টায় আর রাত নয়টায় সাইনবোর্ড থেকে রপ্তানিপণ্য পাহারা দিয়ে চট্টগ্রামের অলংকার পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয়। একইভাবে একই সময়ে অলংকার থেকেও ঢাকার উদ্দেশে পণ্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। পুলিশি পাহারায় সাভার থেকে বেনাপোল পণ্য আনা-নেওয়াও চলছে। দিনে ক্ষতি ৪৮ কোটি টাকানিরাপদ ওই তিন পথের বাইরে অন্য স্থানে পণ্য পরিবহনে ট্রাকমালিকদের আগ্রহ কম। উত্তরবঙ্গ আর নোয়াখালীতে পণ্য নিয়ে যাওয়াকে তাঁরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন। সে কারণে পণ্যবাহী অনেক ট্রাক উত্তরবঙ্গের রংপুর, দিনাজপুর ও বগুড়ায় আটকে আছে। ট্রাক আটকে আছে রাজশাহী আর চাঁপাইনবাবগঞ্জেও। গত বৃহস্পতিবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে পুলিশ, র্যা ব ও বিজিবির পাহারায় ৭৭টি ট্রাক ছেড়ে যায়। ট্রাকগুলো কানসাট এলাকায় পৌঁছালে দুর্বৃত্তদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় অন্তত ১৫টি ট্রাক। এর মধ্যে রানীহাটি ও শিবতলা এলাকায় দুটি ট্রাক পুড়িয়ে দেওয়া হয়। একইভাবে পাহারা দিয়ে ১৫টি ট্রাক নিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকটি ভাঙচুরের শিকার হয়, আহত হন দুজন। এসব ঘটনার পরই এই বন্দর দিয়ে আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এই খবর পৌঁছে যাওয়ায় শনিবার ও রোববার ভারত থেকে কোনো পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে আসেনি। উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকায় বেশি আসে সবজি ও পচনশীল পণ্য। এই পথ দিয়ে মূলত ঢাকামুখী পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানই বেশি আসে, যায় কম। বেড়ে গেছে ভাড়া: অবরোধের আগে গত মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে পণ্য পরিবহন করত ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান। এখন এসব যান পণ্য পরিবহন করতে ভাড়া হাঁকছে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা। মাঝে এক দিন ২০ থেকে ২২ হাজার টাকায় পণ্য পরিবহন করেছেন ট্রাকমালিকেরা। একইভাবে বেনাপোল থেকে পণ্যবোঝাই একটি ট্রাক অবরোধের আগে এসেছিল ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকায়। এখন আসছে ১৮ থেকে ২২ হাজার টাকায়। তবে ঢাকা থেকে বেনাপোল যাওয়ার পথের ভাড়া কিছুটা কম, ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা। রংপুরে যে অল্প কিছু পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করছে, তারা এখন ভাড়া হাঁকছে ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা। অবরোধের আগেও এসব ট্রাক ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় পণ্য পরিবহন করত। ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিকদের দুই সংগঠনের নেতাই ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করেন। রুস্তম আলী বলেন, ‘ট্রাকমালিকদের মধ্যে আতঙ্ক আছে। চোরাগোপ্তা হামলা হচ্ছে। ট্রাকে আগুন দিলে তার দায় নেবে কে? এখন ঝুঁকি নিয়ে পণ্য পরিবহন চলছে। সে হিসাবে ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে না।’

No comments:

Post a Comment