Saturday, January 10, 2015

জিরো টলারেন্সে সরকার:যুগান্তর

বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন, সন্ত্রাস ও নাশকতার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাবে সরকার। সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্তিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস আখ্যায়িত করে বিএনপির দেয়া কর্মসূচি ঘিরে সরকারের এ মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন, জঙ্গিবাদী তৎপরতা অব্যাহত রাখলে প্রয়োজনে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হবে।
elivery/ck.php?n=acd94d5f' target='_blank'> ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্তি হয়েছে। বিএনপি দিনটিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস আখ্যায়িত করে। এ উপলক্ষে দলটি ঢাকায় সমাবেশের ঘোষণা দেয়। কিন্তু সরকার তাতে অনুমতি দেয়নি। গত শনিবার রাত থেকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে পুলিশ। ৫ জানুয়ারির পর ওই কার্যালয়ের তালা খুলে দেয়ার পর নতুন করে তালাবদ্ধ করা হয়। দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীসহ দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদেও গ্রেফতারের মাধ্যমে সরকারের কঠোর মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকার বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনায় অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পাশাপাশি মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিও অনেক আগেই নাকচ করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার রাতে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অবরোধের নামে নাশকতার বিরুদ্ধে প্রশাসন ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টির যে কোনো অপচেষ্টায় আর কোনো ছাড় দেয়া হবে না। নাশকতার সব পরিকল্পনা এবং এর সঙ্গে জড়িতদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে। একই সঙ্গে সরকারবিরোধী যে কোনো সহিংসতা মোকাবেলায় রাজপথে সক্রিয় থেকে আইনশৃংখলা রক্ষা বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মামলা থেকে বাঁচার জন্য জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এতে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার আন্দোলন টিকবে না। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আগামী ২ থেকে ৪ দিনের মধ্যেই সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যে যে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন, তা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যুগান্তরকে বলেন, নাশকতার বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ সম্ভব কিনা- জানতে চাইলে সেতুমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে বসে যেসব মন্তব্য করছেন তা অত্যন্ত বিব্রতকর। আর তারেকের এই বক্তব্য সমর্থন করছেন খালেদা জিয়া। ওবায়দুল কাদের পাল্টা প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, এ অবস্থায় বিএনপির সঙ্গে এক টেবিলে সংলাপের জন্য তারা কিভাবে বসবেন? এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ যুগান্তরকে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন ও মিথ্যাচার বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে না। তিনি রাজনৈতিক সহিংসতাসহ যে কোনো নাশকতা প্রতিরোধে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানান। সূত্র জানায়, পশ্চিমা বিশ্বের অব্যাহত চাপ সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড নির্ধারিত সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অনড় রয়েছে। জানুয়ারির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিএনপি যাতে বড় কোনো শোডাউন করতে না পারে সেজন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল সরকার। আইনশৃংখলা বাহিনী খালেদা জিয়াকে গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে। অবরুদ্ধ অবস্থায় বক্তৃতা দেয়ার সময় পুলিশ সেখানে দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর পিপার স্প্রে করে। গুলশান কার্যালয় ঘিরে স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলো প্রথমদিকে সরাসরি সংবাদ প্রচার করলেও একদিন পর তা বন্ধ হয়ে যায়। এখন আর গুলশান থেকে সরাসরি (লাইভ) সংবাদ পরিবেশন হচ্ছে না। অন্যদিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে পুলিশ পল্টনের দলীয় কার্যালয় থেকে এ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে আসে। পরে অবশ্য তিনি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গিয়ে রক্ষা পান। বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে আসছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর পুলিশ তাকে রিমান্ডে নেয়। এর আগে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকেও রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে রিমান্ডে চেয়েছিল পুলিশ। আদালত তাকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকার প্রয়োজনে বিএনপির আরও বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করতে পারে বলে জানা গেছে। সেটা পরবর্তী পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানিয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সহিংসতায় এ পর্যন্ত সারা দেশে ৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীসহ তিনজন বিচারপতির বাড়িতে হামলা করেছে দুষ্কৃতকারীরা। হামলা হয়েছে রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল সোনারগাঁওয়েও। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সারা দেশে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশী নাগরিকদের সতর্কভাবে চলাফেরার পরামর্শ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস। এদিকে সহিংস পরিস্থিতিতে বিএনপিকে মোকাবেলায় মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার রাতে এ ব্যাপারে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। এর আগে সব এমপি ও জেলা নেতাদের বিশেষ বার্তা পাঠায় আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড। ফলে অবরোধ কর্মসূচিতে বিএনপির পরিবর্তে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দেখা যায়। ঢাকায় সরকারি দলের সেই টহল অব্যাহত রয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় সূত্রে জানা গেছে, এই মুহূর্তে তারা মহাসড়কগুলো চালু রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। সে অনুযায়ী ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। পুলিশ প্রহরায় ট্রাক ও যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে।  

No comments:

Post a Comment