Saturday, January 10, 2015

রাজধানীতে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ গুলি : গাড়িতে আগুন:নয়াদিগন্ত

অবরোধের চতুর্থ দিনে গতকালও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, গুলি, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবারের সাপ্তাহিক ছুটির কারণেই এমনিতে রাজধানীর দোকানপাট, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমা বন্ধ ছিল। রাস্তায় লোকসমাগমও ছিল কম। যানবাহন দেখা গেছে কম।   এ দিকে অবরোধের তৃতীয় দিন রাত থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারায় কিছু দূরপাল্লার যানবাহন ঢাকা ছেড়েছে। পুলিশ-র‌্যাব ও বিজিবি ওই সব যান
বাহন পাহারা দিয়ে পৌঁছে দিচ্ছে। বিজিবি সদর দফতর সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পাহারা দিয়ে দুই হাজার সাত শতাধিক বাস-ট্রাক গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছে।   অবরোধ সমর্থনে গতকালও বিভিন্ন স্থানে মিছিল করেছে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। এ সময় বিভিন্ন স্থানে অবরোধকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। অবরোধ ঠেকাতে মাঠে রয়েছে বিপুল পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি।   গাবতলী : গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে পুলিশ পাহারায় দূরপাল্লার স্বল্প সংখ্যক বাস ছেড়ে যায়। তবে বাসগুলোতে যাত্রীর সংখ্যা ছিল খুবই কম। বাসমালিকেরা জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে কয়েকটি কোম্পানির তিন-চারটি বাস একসাথে করে ছাড়ছেন। তবে যাত্রী ছিল না বললেই চলে। তারা আরো বলেন, বাস ছাড়লেও ভেতরে ভয় থেকেই যায়। এ দিকে অবরোধে বাস না ছাড়লে কাউন্টারে তালা লাগিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা। গতকাল গাবতলী বাস টার্মিনালে মালিক সমিতির নেতাদের সাথে বৈঠক করে তিনি এ কথা বলেন বলে বাসমালিকেরা জানিয়েছেন। রাঙ্গা মালিকদের বলেছেন, অবরোধের মধ্যে বাস ছাড়তে হবে। যেসব বাস না ছাড়বে তাদের কাউন্টারে তালা লাগিয়ে দেয়া হবে।   মিরপুর : বেলা সোয়া ১১টায় মিরপুর ১১ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে বিক্ষোভ করে অবরোধ সমর্থনকারীরা। এ সময় তারা রাস্তায় টায়ারে আগুন জেলে স্লোগান দিতে থাকে। পরে পুলিশ হামলা চালালে তারা চলে যায়। সকাল ৭টায় মিরপুর কাজীপাড়ায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ হামলা চালালে মিছিলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।   বাড্ডার শাহজাদপুরে শিবিরের অবরোধ : রাজধানীর বাড্ডা এলাকার শাহজাদপুরের রাজপথ অবরোধ করে ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরী উত্তর। এ সময় একটি প্রাইভেটকারে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।   শুক্রবার সকাল ৯টায় বাড্ডার শাহাজাদপুরে ইটপাটকেল ফেলে কয়েক মিনিট রাস্তা অবরুদ্ধ করে রাখে শিবিরকর্মীরা। এ সময় তারা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং অবরোধের পে স্লোগান দেয়।   অবরোধের সময় তারা বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ অবরোধকারীদের ওপর টিয়ারগ্যাস ও ফাকা গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।   ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি আনিসুর রহমান বিশ্বাসের নেতৃত্বে প্রায় দুই শতাধিক শিবিরকর্মী অবরোধে অংশগ্রহণ করে।   এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন দফতর সম্পাদক জামিল মাহমুদ, ভাটারা থানা সভাপতি আবদুর রহমান, বাড্ডা দণি সভাপতি জাকির হোসাইনসহ স্থানীয় শিবির নেতাকর্মীরা।   পাহারা দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে যানবাহন : আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে পাহারা দিয়ে যানবাহন বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া শুরু করেছে। গতকাল পর্যন্ত দুই হাজার সাত শতাধিক বাস-ট্রাক দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।   বিজিবি সদর দফতর সূত্র জানায়, বিজিবি এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সমন্বিত প্রহরায় গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার বেলা ২টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দুই হাজার সাত শতাধিক যাত্রীবাহী বাস, জরুরি পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও অন্যান্য যানবাহন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরাপদে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে ১১২টি, চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে ১,০৪৬টি, যশোর/সাতীরা-আরিচা-ঢাকা রুটে ১,৪০৬টি, রাজশাহী-বগুড়া-যমুনা ব্রিজ-ঢাকা রুটে ১১৮টি এবং রংপুর-বগুড়া-যমুনা ব্রিজ-ঢাকা রুটে ৭০টি বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও অন্যান্য যানবাহন বিভিন্ন গন্তব্যে নিরাপদে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।   এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তাবেষ্টিত যানবাহনের বহরের সাথে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আরো যানবাহন বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেছে বলে জানা গেছে।   রাতে গাড়িতে আগুন, আহত ৩   ২০ দলীয় জোটের ডাকা লাগাতার অবরোধের চতুর্থ দিনে গত রাতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যাত্রীবাহী বাসে আগুনে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রাইভেট কার লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে আগুনে পুড়ে দু’জন আহত হয়েছেন। তারা হলেন : হাফেজ মোহাম্মদ আব্দুল গফুর (৩০) ও মিজানুর রহমান (৩২)। ককটেল বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন প্রাইভেট কার চালক আবুল কালাম।   প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাত সাড়ে ১০টার দিকে মোহাম্মদপুরে ঢাকা উদ্যানে একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রল ঢেলে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে আহত হয় গফুর ও মিজান। পরে স্থানীয় লোকজন তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ বার্ন ইউনিটে ভর্তি করে।   আহত আব্দুল গফুর জানান, তিনি কামরাঙ্গীরচর পশ্চিম নবীনগর আল হোসাইনিয়া জামে মসজিদের মোয়াজ্জেন এবং মিজানুর ওই মসজিদের খাদেম। রাতে মসজিদের ইমামকে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে দিয়ে তারা সোহান পরিবহনের একটি বাসে কামরাঙ্গীরচরে ফিরছিলেন। এ সময় রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকা উদ্যানের সামনে পৌঁছলে কে বা কারা পেট্রল ঢেলে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে গাড়ির যাত্রীরা দ্রুত নেমে পড়েন। তারা নামতে গিয়ে আগুনে পুড়ে যান।   জানা গেছে, আগুনে গফুরের দুই পা পুড়ে যায়। আর মিজানের দুই হাত ও দুই পা পুড়ে যায়।   এ দিকে রাত ৭টার দিকে নাবিস্কোর সামনে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয়া হয়েছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ডিউটি অফিসার নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, রাতে নাবিস্কোর সামনে গাজীপুর-সায়েদাবাদ রুটের বলাকা পরিবহনের একটি বাসে (ঢাকা মেট্রো জ- ১১-১৭০৭) আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। খবর পেয়ে তেজগাঁও ফায়ার সার্ভিস আগুন নিভিয়ে ফেলে। তবে কেউ আহত হয়নি।   এ ছাড়া রাত পৌনে ১১টার দিকে মগবাজার সিলিভার কমিউনিটি সেন্টারের সামনে প্রাইভেট কার পার্ক করে গাড়ির মধ্যে বসেছিলেন চালক আবুল কালাম। এ সময় গাড়িটিকে লক্ষ্য করে পরপর কয়েকটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। ককটেল বিস্ফোরণে আবুল কালামের হাত, পা ও মুখমণ্ডল ককটেলের স্পিøন্টারে ঝলসে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করেন।

No comments:

Post a Comment