Monday, January 12, 2015

১৭ ব্যাংক খেলাপি ঋণের ঝুঁকিতে:নয়াদিগন্ত

  খেলাপি ঋণের ঝুঁকিতে পড়েছে ১৭ বাণিজ্যিক ব্যাংক। ব্যাংকগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় বিশেষ তদারকির আওতায় নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ কারণে ব্যাংকগুলোর আয়ের ওপর ব্যাপক হারে প্রভাব পড়েছে। কেন খেলাপি ঋণ বেড়েছে তা খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক।   সূত্র মতে, যেকোনো উপায়ে খেলাপি ঋণ কমানোর নির্দেশনা ছিল ব্যাংকগুলোর ওপর। এ ক্ষেত্রে আদায় বাড়ানোর তাগিদ ছিল। ডিসেম্বরকে সামনে রেখে ব্যাংকগুলোতে তদারক
ি বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে যেসব ব্যাংকের অনাদায়ী ঋণ বেশি ওই সব ব্যাংকের তালিকা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের দৃষ্টিতে ১৭টি ব্যাংকের অনাদায়ী ঋণ অত্যন্ত বেশি, যা ব্যাংকগুলোকে ঝুঁকির সম্মুখীন করেছে বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর মধ্যেই বেশির ভাগই প্রথম ও দ্বিতীয় প্রজন্মের বাণিজ্যিক ব্যাংক। এ কারণেই ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তদারকির আওতায় আনা হয়েছে।   সূত্র মতে, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরকে সামনে রেখেও বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছিল। ওই সময় ঋণ নবায়নের বিশেষ ছাড় দেয়া হয়েছিল। এর ফলে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ ১৫ হাজার কোটি টাকা কমে গিয়েছিল। ২০১৩ সালের মতো ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ পদক্ষেপ নেয়। এ কারণে ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সাথে বৈঠক করা হয়। বিশেষ করে যেসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেশি ওই সব ব্যাংকের সাথে আলাদা আলাদা বৈঠক করা হয়। নগদ আদায় বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হয়। কিন্তু ব্যবসায়বাণিজ্য মন্দাজনিত কারণে ব্যাংকগুলোর পক্ষে শেষ সময়ে এসে নগদ আদায় বাড়ানো সম্ভব হয়নি। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা পরিপালন করতে বেশির ভাগ ব্যাংকই ঋণ নবায়ন করে অধিক হারে। কেউবা ঋণ অবলোপন করে বা ঋণের সুদ মওকুফ করে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনে।   নাম প্রকাশ না করার শর্তে, দেশের প্রথম প্রজন্মের একটি ব্যাংকের এমডি গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তাদের বিশেষ তদারকির মধ্যে রেখেছে। ঋণ আদায় বাড়ানোর জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। কেন অনাদায়ী ঋণ বেড়েছে তার ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ঋণ নবায়ন ও অবলোপনের ওপর বিশেষ জোর দিয়েছেন। ইতোমধ্যে তার ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কিছুটা কমেছে। অপর এক ব্যাংকের এমডি জানিয়েছেন, ব্যবসায়বাণিজ্য মন্দার কারণে ঋণ আদায় বাড়ছে না। অনেক ভালো গ্রাহকও এখন ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। এ কারণেই তার ব্যাংকের অনাদায়ী ঋণ বেড়ে গেছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান আরো উদ্বেগজনক অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটে যারা কিছু ঋণ পরিশোধ করতেন তারাও আর এখন ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। মনে হয় অনেকেই চলমান অবস্থা পর্যালোচনা করছেন। সব মিলিয়ে তার ব্যাংকের ঋণ ঝুঁকির মাত্রা কমছে না। তবে ইতোমধ্যেই নিয়মতান্ত্রিকভাবে ঋণ অবলোপন ও নবায়ন করে খেলাপি ঋণ কমাতে পেরেছেন। এতে লাভের মধ্যে খেলাপি ঋণ কিছুটা কমে যাওয়ায় কম পরিমাণ প্রভিশন রাখতে হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ঋণের গুণগত মান বাড়েনি বরং তাদের জন্য অনেকটা বোঝা হয়ে পড়েছে।   বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুসারে ঋণঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিশেষ কয়েকটি ব্যাংকের শাখা আরো ঝুঁকির মখে পড়েছে। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ কয়েকটি ব্যাংকের দ্বিগুণ, তিন গুণ বেড়ে গেছে। গত সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরে অগ্রণী ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখায় মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ সাড়ে ৫৫ কোটি থেকে ১৫৫ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। এ শাখায় এ সময়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ বেড়েছে ১৭৯ শতাংশ এবং খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৬ শতাংশ। ব্যাংক এশিয়ার প্রধান অফিসে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ বেড়েছে ১১৪ শতাংশ, যা ১১৬ কোটি থেকে বেড়ে ২৪৯ কোটি হয়েছে। বেসিকের শান্তিনগর শাখায় ১৫৪ কোটি থেকে ২৯৭ কোটি, ঢাকার প্রধান শাখায় ৪৩২ কোটি থেকে ৫৬৫ কোটি, সিটি ব্যাংকের গুলশান শাখায় ২২৬ কোটি থেকে ৬৭৪ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংকের বনানী শাখায় মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ ৪৭৮ শতাংশ বেড়ে ৩৮ কোটি থেকে ২২০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। আর খেলাপি ঋণ হয়েছে ৪৩ শতাংশ। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের প্রধান শাখায় মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ ৪২ কোটি থেকে বেড়ে ৩৩৩ কোটি, চট্টগ্রামের জুবলী রোড শাখায় ৭৯ কোটি থেকে বেড়ে ১৮০ কোটি, গুলশান শাখায় ৭ কোটি থেকে বেড়ে ১৫৫ কোটি এবং সোনালী ব্যাংকের শিল্প ভবন করপোরেট শাখায় ২১১ কোটি থেকে বেড়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ হয়েছে ৩৮৩ কোটি টাকা।   সূত্র জানিয়েছে, আলোচিত ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তদারকির মধ্যে আনা হয়েছে। যেকোনো উপায়ে আদায় বাড়িয়ে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সাথে ব্যাংকগুলোর মুনাফার ওপরও নজর রাখা হচ্ছে। কেননা, খেলাপি ঋণ বাড়লে বর্ধিত হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। এতে কাগজে-কলমে মুনাফা কমে যায়। এ জন্যই এ বিষয়ে তদারকি করা হচ্ছে।

No comments:

Post a Comment