Monday, January 12, 2015

আলীগের জনসভা ঘিরে উত্তেজনা:যুগান্তর

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের আজকের জনসভাকে কেন্দ্র করে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। জনসভার দিন ঢাকাসহ ১৬ জেলায় ছাত্রদল হরতালের ডাক দেয়ায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে সমাবেশ ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রোববার বিকালে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে সমাবেশের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা বিষয় দেখে এসেছেন।
ritsads.com/ads/server/adserve/www/delivery/ck.php?n=acd94d5f' target='_blank'> বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ এই জনসভার আয়োজন করেছে। এ উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। হরতাল ও অবরোধ আহ্বানকারীদের ঠেকাতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা মোড়ে মোড়ে প্রস্তুত থাকবে। অন্যদিকে বিএনপির সহযোগী ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল আওয়ামী লীগের জনসভার দিন ঢাকাসহ ১৬ জেলায় আজ সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদে এবং গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে এ কর্মসূচি পালনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগের জনসভা ঠেকাতেই মূলত এ কর্মসূচি দিয়েছে ছাত্রদল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জোটের এক নেতা বলেন, সমাবেশে বাধা দিতেই হরতালের কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। জনসভার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রোববার রাতে যুগান্তরকে বলেন, আমাদের লাখ লাখ নেতাকর্মী থাকতে এ জনসভা কে ঠেকাবে। তিনি বলেন, জনসভা নিয়ে কোনো ভয় নেই। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্তি হয়েছে ৫ জানুয়ারি। এ দিনটিকে আওয়ামী লীগ ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ এবং বিএনপি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। এ দিবস পালন করা নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপি মুখোমুখি অবস্থান নেয়। ফলে পুলিশ সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ৩ জানুয়ারি রাত থেকেই গুলশানের কার্যালয়ে খালেদা জিয়াকে পুলিশ অবরুদ্ধ করে রাখে। যে কারণে ২০ দলীয় জোট তাদের কর্মসূচি পালন করতে না পেরে অবরোধের ডাক দেয়। ডিএমপির সেই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই বিএনপির অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। শুক্র ও শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি এবং বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মুনাজাতেও দলটি অবরোধ অব্যাহত রেখেছে। ডিএমপির নিষেধাজ্ঞার কারণে আওয়ামী লীগও রাজধানীতে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। এখন ১০ জানুয়ারি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আজ জনসভার কর্মসূচি ঘোষণা করে। এবার সেই কর্মসূচির দিন হরতালের কর্মসূচি দিয়েছে ছাত্রদল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে দুই পক্ষই কর্মসূচি সফল করার বিষয়ে দৃঢ় অবস্থানে থাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। কারণ হিসেবে তারা বলেন, সমাবেশ বা হরতালের দিন দলীয় নেতাকর্মীদের চেয়ে বেশি ক্ষতি হয় সাধারণ মানুষের। এছাড়া ঢাকার বাইরে থেকে যারা সমাবেশে আসবে হরতাল আহ্বানকারীরা তাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করবে। এতে ঘটনাস্থলেই সংঘর্ষের আশংকা আছে। এতে শুধু দু’পক্ষই নয়, অন্যরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর্থিক-শারীরিক উভয় ধরনের ক্ষতির আশংকাই আছে বলে তারা মনে করেন। তাদের মতে, দলীয় নেতাকর্মীরা যাতে সমাবেশে আসতে না পারেন সেজন্যই মূলত হরতালের কর্মসূচি। জনসভা সফল করার জন্য মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা আসতে চাইবে। আর হরতালকারীরা বাধা দেবে। ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ অনিবার্য বলে মন্তব্য করেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জোটের এক নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের জনসভার দিন হরতালের মধ্য দিয়ে গাজীপুরের ঘটনাই ফিরে আসছে। গত বছর ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরে বিএনপির পূর্বনির্ধারিত জনসভাস্থলে বিক্ষোভ সমাবেশ আহ্বান করেছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে উত্তেজনা দেখা দিলে স্থানীয় প্রশাসন সমাবেশস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করে। এতে উভয় সংগঠন কর্মসূচি পালন থেকে বিরত থাকে। তবে এ ঘটনার প্রতিবাদে গাজীপুরে হরতাল পালন করে বিএনপি। ঢাকাসহ এর পার্শ্ববর্তী জেলা নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর জেলা ও মহানগর, টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা উত্তর ও দক্ষিণ জেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর ও নেত্রকোনা জেলায় আজ হরতাল চলবে বলে রোববার ছাত্রদলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে ঢাকা মহানগরকে হরতালের আওতামুক্ত রেখেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এ ছাড়া বগুড়ায় হরতালের মেয়াদ আরও ২৪ ঘণ্টা বাড়িয়েছে স্থানীয় বিএনপি। ছাত্রদলের মতো একই কারণে (খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদ এবং গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি) মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সাভার ও ধামরাই উপজেলা এবং খালেদা জিয়ার নির্বাচনী এলাকা ফেনীর ফুলগাজীতে আজ সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে স্থানীয় বিএনপি। বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের আজকের জনসভা ঠেকাতে তারা (বিএনপি-ছাত্রদল) সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে। মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে জনসভায় আসতে না পারেন তার জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হবে। ‘মারা মারি হবে’ এমন গুজব সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগের জনসভা ‘ফ্লপ’ করার লক্ষ্যও রয়েছে বিএনপির। তবে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আজকের জনসভায় ব্যাপক শোডাউন করতেই হবে-এমন চিন্তা নেই দলটির নীতিনির্ধারকদের। বিএনপির অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে ঢাকার বাইরে থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে আসার চেষ্টাও তাদের নেই। এ বক্তব্যের সত্যতা স্বীকার করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাজীপুর আওয়ামী লীগের এক নেতা। তিনি যুগান্তরকে বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় যোগ দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। তবে তা কোনো অবস্থায় মাঠ ফাঁকা না করে। এলাকায় নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানের বিষয়েও কেন্দ্র থেকে জোর দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে আওয়ামী লীগের আজকের জনসভা অনুষ্ঠান নিয়ে আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল। গত ৪ জানুয়ারি ডিএমপি রাজধানীতে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আওয়ামী লীগকে আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়ে কার্যত সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিল ডিএমপি। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে সমাবেশ করার বিষয়ে রোববার সন্ধ্যায় পুলিশি অনুমতি পায় ক্ষমতাসীন দল। অবশ্য নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আগে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, আওয়ামী লীগ সবসময় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা আইন অমান্য করে কোনো কাজ করি না, করবও না। অনুমতি নিয়েই আমরা জনসভা করব। রোববার আওয়ামী লীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এ জনসভা সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থকসহ সব শ্রেণী-পেশা এবং সর্বস্তরের জনগণের প্রতি এ আহ্বান জানান তিনি। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ১০ জানুয়ারি এ জনসভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। বিশ্ব ইজতেমার কারণে শনিবারের ওই জনসভার তারিখ পরিবর্তন করে আজ করা হয়। এ জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।  

No comments:

Post a Comment