Sunday, February 1, 2015

আলোচনায় বসলে সরকারের ক্ষমতা চলে যাবে না:প্রথম অালো

নাশকতা বন্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ এবং চলমান সংকটের রাজনৈতিক সমাধান চান ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, আলোচনায় বসলে সরকারের ক্ষমতা চলে যাবে না। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দুই নেত্রীকে সংলাপে বসারও আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। গতকাল শনিবার চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীদের মতবিনিময় সভায় এসব বক্তব্য উঠে এসেছে। খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে সংগঠনটির কার্যালয়ে এ সভায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যবসায়ী
সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। সভায় বলা হয়, কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা সরকার ব্যবসায়ীদের নিয়ে ভাবছে না। শিগগিরই রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় না এলে নিজেদের বাঁচাতে তাঁরা রাজপথে নামবেন। মহাসড়কে পণ্য পরিবহনে নিরাপত্তা, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ব্যাংকঋণ পরিশোধ সহজ করা এবং সুদ মওকুফেরও দাবি জানান তাঁরা। মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম চেম্বার ও খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, দাবি আদায়ের নামে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। টানা অবরোধের কারণে ব্যবসায়ীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। দরকার হলে আমরণ অনশনে যাবেন ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি বলেন, হরতাল অবরোধ পালনের অধিকার রাজনৈতিক দলগুলোর আছে। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচির বলি কেন ব্যবসায়ীরা হবেন? তিনি বলেন, ‘আমরা নির্দিষ্ট স্থানে পণ্য পৌঁছাতে পারছি না, ব্যবসা করতে পারছি না, প্রতিদিন জাহাজের ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে, ব্যাংকের সুদ বাড়ছে। এখন একটাই দাবি, আমাদের নির্বিঘ্নে ব্যবসা করার সুযোগ দিতে হবে।’ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক আবুল বশর চৌধুরী বলেন, রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, নলখাগড়ার প্রাণ যায়—ব্যবসায়ীদের অবস্থা এখন এমনই। ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তার খোঁজ রাজনীতিবিদেরা রাখেন না। বন্দরে এক দিন জাহাজের পণ্য খালাস করতে না পারলে প্রায় ১৬ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জাঁতাকলে ব্যবসায়ীদের ফেলবেন না। বাঁচার জন্য আমাদের এখন যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তা নেব। ব্যবসায়ীরা সব রাজনীতির ঊর্ধ্বে।’ খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, প্রতিদিনই ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ব্যাংকের টাকায় ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করেন। রাজনৈতিক অস্থিরতায় এখন ২০ শতাংশ ব্যবসাও হচ্ছে না। এভাবে কিছুদিন গেলে দেউলিয়া হয়ে যেতে হবে। ব্যবসায়ীদের দাবি, অচলাবস্থা নিরসনে দুই নেত্রী যেন ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সংলাপে বসেন। চট্টগ্রাম রাইস মিল সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সরকারের অনেক মন্ত্রী-সাংসদই বলছেন, এটি রাজনৈতিক সমস্যা নয়। কিন্তু এটি ঠিক নয়। একগুঁয়েমি মনোভাব থাকলে সমস্যার সমাধান হবে না। আন্দোলনকারী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসলে ক্ষমতা হাত থেকে চলে যাবে এটি ভাবার কোনো কারণ দেখি না। যত দিন অবরোধ থাকবে, সরকারকে তত দিন ঋণ মওকুফের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।’ চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন, যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে মনে হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিপক্ষ এখন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে ব্যবসায়ীরাই। তাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সহিংসতার বিরুদ্ধে কর্মসূচি দিতে হবে। ব্যবসায়ী নেতারা বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের দাবিতে মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। এ ছাড়া নাশকতার শিকার ব্যক্তিদের সরকারি সহায়তা, পুনর্বাসন ও হামলাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান। মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আবদুস সালাম, চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক কামাল মোস্তাফা চৌধুরী, জহরুল ইসলাম চৌধুরী, ব্যবসায়ী নেতা স ম বখতিয়ার, চট্টগ্রাম দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ছালামত আলী, টেরীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান, আড়তদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, মুরাদপুর ব্যবসায়ী সমিতির কামাল উদ্দিন তালুকদার প্রমুখ।

No comments:

Post a Comment