চলমান অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি আপাতত শিথিল করছে না বিএনপি। এমনকি এসএসসি পরীক্ষাকেও আমলে নেওয়া হচ্ছে না। ৭২ ঘণ্টার হরতাল শেষে বুধ ও বৃহস্পতিবারও হরতালের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। এ বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে আজ। জোটের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, আগামী শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও হরতাল দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। পরিবর্তিত সূচি অনুযায়ী, ওই দিন এসএসসির বাংলা প্রথম পত্রে
র পরীক্ষা অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। গত রোববার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ এক বিবৃতিতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে ইন্টারনেট সুবিধা, টেলিফোন ও ডিশ কেব্ল-সংযোগ অবিলম্বে পুনঃস্থাপন করা না হলে অবিরাম হরতাল ও অবরোধ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন। গতকাল এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এগুলোর সংযোগ পুনঃস্থািপত হয়নি। তবে কার্যালয়ের গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ-সংযোগ সচল আছে। বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া শাখার একজন সদস্য প্রথম আলোকে জানান, কার্যালয়ে ইন্টারনেট সুবিধা, টেলিফোন ও ডিশ কেব্ল-সংযোগ নেই। শুধু টেলিটক মোবাইলে কথা বলা যায়, অন্য মোবাইলে নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না। বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের তুলে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘ক্রসফায়ারের’ প্রতিবাদে আগামী শুক্রবার হরতাল ডাকার চিন্তা করা হচ্ছে। সালাহ উদ্দিন আহমেদ গতকাল এক বিবৃতিতে যৌথ বাহিনীর অভিযানের নামে নেতা-কর্মীদের ‘হত্যাকাণ্ডের’ নিন্দা জানান। বিবৃতিতে তিনি অভিযোগ করেন, সরকার মধ্যরাতের নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ চালাতে ‘দলীয়করণকৃত’ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রণসজ্জায় সজ্জিত করে শহর, বন্দর, গ্রামসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলকে ভয়াল জনপদে পরিণত করেছে। রাজধানীর শাহ আলী থানার শিবির নেতা এমদাদ উল্লাহকে ‘বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে ক্রসফায়ারের আষাঢ়ে গল্প সাজানো হয়েছে।’ সালাহ উদ্দিন বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের হত্যার জন্য ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হুকুমের আসামি করা হবে বলে হুঁশিয়ারি জানান। তিনি বলেন, ‘পৈশাচিক গণহত্যার দায় নিয়ে শেখ হাসিনাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। সেদিন আর বেশি দূরে নয়। নির্বিচারে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের হত্যা করার আদেশ দিয়ে তিনি সে দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেওয়ার প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছেন।’ বিবৃতিতে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালুকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে তাঁর মুক্তির দাবি করা হয়। এদিকে গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে গতকাল সোমবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বিএনপি বা ২০-দলের কোনো নেতা-কর্মী বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের আশপাশে যাননি। এর মধ্যে বিকেল চারটার পর পাশের মসজিদ থেকে চারজন মাওলানা কার্যালয়ে যান। কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর জন্য দোয়া করতে তাঁরা সেখানে যান। ঢোকার সময় তাঁদের নাম উপস্থিত গোয়েন্দা কর্মকর্তারা লিখে রাখেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল ওই কার্যালয়ে কাউকে ঢুকতে ও বের হওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। কর্তব্যরত কয়েকজন সাংবাদিককেও ভেতরে যেতে দেওয়া হয়নি। এত দিন কার্যালয়ের ভেতরে আত্মীয়স্বজনের পাশাপাশি সাংবাদিক, বিভিন্ন পেশাজীবী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রবেশের সুযোগ ছিল। রোববার রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে বের হওয়ার পর মোসাদ্দেক আলীকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। গত ৩ জানুয়ারি থেকে গুলশানে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আছেন খালেদা জিয়া। এখন তাঁর সঙ্গে আছেন সদ্য প্রয়াত ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও দুই মেয়ে। ওই কার্যালয়ে অন্যদের মধ্যে আরও আছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খানসহ তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মীরা। ছাত্রদলের ধর্মঘট: বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কাল বুধ ও পরদিন বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। গতকাল এক বিবৃতিতে ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। রাজনৈতিক সহাবস্থান নিশ্চিত, নেতা-কর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন বন্ধের দাবিতে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে বলে বিবৃতিতে তাঁরা উল্লেখ করেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ছাত্রলীগের আজ্ঞাবহ এবং ছাত্রলীগের অপকর্মের দোসর উপাচার্য এখন ছাত্রলীগকে রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। অবিলম্বে এসব অপকর্ম বন্ধ করুন। নইলে ছাত্রদল সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে লাগাতার ধর্মঘট দিতে বাধ্য হব।’
No comments:
Post a Comment