Sunday, March 15, 2015

ক্যাপটিভ নিয়ে ষড়যন্ত্র:যুগান্তর

ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টে গ্যাস সংযোগ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ খাতে গ্যাস অপচয়ের অজুহাত দেখিয়ে নতুন সংযোগ না দেয়ার বিষয়টি জানুয়ারি মাসের সাত তারিখ সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে সারা দেশের ছোট-বড় ২ হাজারের বেশি শিল্প-কারখানার মালিক। সরকারের আকস্মিক এ সিদ্ধান্তে তাদের মাথায় হাত পড়েছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে শিল্প স্থাপন সংক্রান্ত সব কাজ গুছিয়ে আনার পর শিল্পোদ্যোক্তারা জেনেছেন, তাদ
ের ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টে গ্যাস দেয়া হবে না। ফলে নতুন শিল্প-কারখানাগুলো শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এদিকে পুরনো ক্যাপটিভগুলোতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানোর চিন্তাভাবনা চলছে। একই সঙ্গে এ ধরনের পাওয়ার প্লান্টগুলোকে পর্যায়ক্রমে গ্যাস থেকে তেলে রূপান্তরের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে শিগগিরই বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সংশ্লিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। ব্যবসায়ীরা বলেন, গ্যাসচালিত ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টকে তেলে রূপান্তর ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ কাজ। এজন্য প্লান্টের পুরো সিস্টেম নতুন করে সাজাতে হবে। এতে যে পরিমাণ অর্থের ব্যয় হবে তার ধাক্কা সামাল দেয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই প্রায় অসম্ভব। এতে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে বেকার হয়ে যাবে হাজার হাজার কর্মক্ষম মানুষ। এর প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতে। ব্যবসায়ীরা বলেন, আমাদের বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে কিছুই জানেন না। যারা এ ধরনের অপরিপক্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনার জন্য ব্যবসায়ীরা জোর দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, এটা সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র। চলমান নাশকতা এবং দেশবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতদের ইন্ধনে সরকারি কর্মকর্তাদের একটি অংশ এ ধরনের কাজ করছে বলে তারা মনে করেন। প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম বলেন, দেশে গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে গ্যাস পাওয়া গেলেও তা গ্রাহক পর্যায়ে আসতে কমপক্ষে ১০ বছর লাগবে। এই দশ বছর কঠিন সময়। তাই গ্রাহকদের গ্যাস ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে হবে। তিনি বলেন, ক্যাপটিভ পাওয়ার এবং গিজারে আর নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে না। যারা গিজার ব্যবহার করছেন তাদেও নোটিশ দেয়া হবে, যাতে তারা সোলার সিস্টেমে রূপান্তর করে নেয়। আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশে এলএনজি আসবে বলে তিনি জানান। অথচ গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো বলেছে, জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের চাপ বাড়ছে। এ অবস্থায় ক্যাপটিভে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে তা গ্রিডে দেয়া হয়, তবে জাতীয় গ্রিডে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এতে সারা দেশে নতুন বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। পেট্রোবাংলার এক পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, টানা অবরোধ ও হরতালে নাশকতার কারণে শিল্প খাতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এ মুহূর্তে ক্যাপটিভ পাওয়ারে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিলে এ খাতটি বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে সরকারের নির্দেশে অপচয় কমাতে অধিকাংশ শিল্প মালিক ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে উন্নত মানের জেনারেটর বসিয়েছে। এতে তাদের ব্যয় আরও বেড়েছে। জানা গেছে ২০০৯ সালের ২১ জুলাই থেকে শিল্প ও বাণিজ্যিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়ার পর শিল্পোদ্যোক্তারা নিজেদের উদ্যোগে ক্যাপটিভ জেনারেটর বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেন। এর আগে বড় বড় শিল্প-কারখানা ক্যাপটিভ পাওয়ারের মাধ্যমে চলছে। ওই সময় অনুমোদন পাওয়া ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টের সংখ্যা দেড় থেকে দুই হাজার। এরা ছয়টি বিতরণ কোম্পানির কাছ থেকে গ্যাস পাচ্ছে। তিতাসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, শিল্পে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়ার পরও সরকার মাঝারি থেকে বড় শিল্প কারখানাগুলোতে ক্যাপটিভ পাওয়ারে উৎসাহিত করে আসছিল। এ কারণে ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টে গ্যাস সংযোগ দেয়ার জন্য অনেকেই বিতরণ কোম্পানিগুলোতে আবেদন করেন। বর্তমানে সারা দেশের ১২শ’র বেশি আবেদন জমা আছে বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় ৭ জানুয়ারি হঠাৎ পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষের এক নির্দেশে তিতাসসহ সব গ্যাস কোম্পানিকে ক্যাপটিভ পাওয়ারে নতুন গ্যাস সংযোগ না দেয়া নির্দেশ দেয়। এ কারণে আবেদনকারী শিল্প-কারখানার মালিকরা বিপাকে পড়েছেন। এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহম্মেদ কথা বলতে রাজি হননি। পেট্রোবাংলার জনসংযোগ কর্মকর্তা তারেকুল ইসলাম বলেন, স্যারের কাছে কিছু জানতে হলে আগে থেকে চিঠি দিতে হবে। তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী নওশাদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শিল্প-কারখানায় গ্যাস সংযোগ বন্ধ আছে। তবে সরকারের বিশেষ কমিটির অনুমোদন নিয়ে অনেকে ক্যাপটিভ পাওয়ারে গ্যাস সংযোগ নিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে শিল্প-কারখানা চালাচ্ছেন। বর্তমানে তিতাসের আওতায় প্রায় হাজারখানেক ক্যাপটিভ পাওয়ার রয়েছে। ৩শ’ থেকে ৪শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস লাগছে এসব ক্যাপটিভ পাওয়ারে। আরও ৫/৬শ’ ক্যাপটিভ পাওয়ারের আবেদন তিতাসের বিবেচনাধীন আছে। তবে কেন কি কারণে ক্যাপটিভ পাওয়ারে গ্যাস সংযোগের অনুমোদন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এ প্রসঙ্গে তিনি কিছুই বলতে রাজি হননি। অভিযোগ উঠেছে, হঠাৎ করে ক্যাপটিভ পাওয়ার নিয়ে এই ষড়যন্ত্রের মূলে পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি বিভাগ। পর্যাপ্ত গ্যাস থাকার পরও পেট্রোবাংলার নির্দেশেই বিতরণ কোম্পানিগুলো ক্যাপটিভ পাওয়ারে নতুন করে গ্যাস সংযোগ দিতে পারছে না। বিশেষ কমিটির অনুমোদন নিয়েও পেট্রোবাংলার নির্দেশনার কারণে অনেক ক্যাপটিভ পাওয়ারে গ্যাস সংযোগ দিতে পারছে না বিতরণ কোম্পানিগুলো। জ্বলানি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যাহত না করে কিভাবে ক্যাপটিভ প্ল্যান্টগুলোতে ধীরে ধীরে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পেট্রোবাংলাকে যৌথভাবে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তীব্র বিদ্যুৎ ঘাটতির মধ্যে সরকারের এই চিন্তা কার্যকর করা যায়নি। খোদ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ওই সিদ্ধান্ত থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সরে এসেছিলেন। সংশ্লিষ্টরা বলেন, দেশে ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টে ব্যবহৃত জেনারেটরগুলোর দক্ষতা সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ দক্ষতার জেনারেটর দিয়ে ব্যবসায়ীরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করছেন। ফলে প্রতিদিন গড়ে কোটি কোটি টাকার গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, সিপিপিগুলোতে দৈনিক প্রায় ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা এই ক্যাপটিভ পাওয়ার ব্যবহারের কারণে পিডিবিকে শিল্প-কারখানাগুলোতে ৪শ’ থেকে ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম দিতে হচ্ছে। পেট্রোবাংলার হিসেবে দেশে প্রায় এক হাজার ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট রয়েছে। এ খাতে গড়ে দৈনিক ২৬৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এ সব ক্ষুদ্র কেন্দ্র থেকে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। শিল্পোদ্যোক্তারা শুধু নিজেরাই এ বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে না। তারা প্রায় ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পিডিবির কাছে বিক্রিও করছেন। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ক্যাপটিভ পাওয়ার না থাকলে বিদ্যুৎ খাতে দেশে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসত। এতে আবাসিক খাতে তীব্র লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি ব্যহত হতো শিল্পোৎপাদন। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, ৯০ দশকে দেশে গ্যাসের তেমন সংকট ছিল না। এ সময় ব্যাপকভাবে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে ওঠে। শিল্পোদ্যোক্তারা নিজস্ব প্রয়োজন মেটানোর জন্য গ্যাসভিত্তিক জেনারেটর দিয়ে স্বল্প পরিসরে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদন করেন। কিন্তু সম্প্রতি গ্যাস নিয়ে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র চলছে। শিল্প খাতকে বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়ার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের একটি গোষ্ঠী ক্যাপটিভ পাওয়ারে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়ার জন্য তৎপর। এক্ষেত্রে তারা গ্যাস সংকটের বিষয়টি খোঁড়া যুক্তি হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে। বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ক্যাপটিভে দেয়া গ্যাস থেকে বর্তমানে এক হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু এই গ্যাস বিদ্যুৎ প্ল্যান্টে দিলে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে সর্বোচ্চ এক হাজার মেগাওয়াট। বাকি ৪শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নানাভাবে লুটপাট হবে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর পধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাতের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ ধীরে ধীরে কমানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে পরে দেখা গেছে, এ ধরনের ঘটনা শিল্পাদ্যোক্তাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। এরপর সরকার সে উদ্যোগ থেকে সরে আসে। এখন আবার সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের চেষ্টা চালাচ্ছে ওই গোষ্ঠী। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এটি দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র ও হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করার পরিকল্পনা ছাড়া কিছুই নয়। পেট্রোবাংলার একজন কর্মকর্তা জানান, ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্ট তুলে দিয়ে শিল্প কারখানাগুলোতে গ্যাসের বদলে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে। এতে গ্যাসের অপচয় কম হবে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত হবে আÍঘাতী। কারণ বেসরকারি কোম্পানির আওতাধীন ক্যাপটিভ পাওয়ারে কখনও গ্যাসের অপচয় হয় না। উল্টো গ্যাস অপচয় ও লুটপাট হচ্ছে বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলোতে। তাদের মতে সরকারের হাতে চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত বিদ্যুৎ না থাকা পর্যন্ত ক্যাপটিভ পাওয়ারে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করা আত্মঘাতী হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যাপটিভের চেয়ে কম্বাইন্ড সাইকেল কেন্দ্রে একই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে দ্বিগুণ গ্যাসের প্রয়োজন হয়। এতে বিপুল পরিমাণ জ্বালানির অপচয় ও লুটপাট হয়। এখন ক্যাপটিভ বিদুৎ কেন্দ্রে ৪৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে ৩৮২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। আরও ১২শ’ ক্যাপটিভ পাওয়ারে গ্যাস সংযোগ দেয়ার জন্য আবেদন জমা আছে। এগুলোতে গ্যাস সংযোগ দিলে সর্বোচ্চ ৩শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হবে। তাদের হিসাবে সম্প্রতি বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্র থেকে ৩শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস নতুন যোগ হয়েছে জাতীয় গ্রিডে। আরও প্রায় ৩শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে ওই ফিল্ড থেকে। এছাড়া আরও নতুন নতুন গ্যাস ফিল্ড তৈরি হচ্ছে। খুব শিগগিরই এসব ফিল্ড থেকে গ্যাস যাবে জাতীয় গ্রিডে। কিন্তু এ নতুন গ্যাস ব্যবহারের কোনো ক্ষেত্র তৈরি হয়নি। নতুন কোনো কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হয়নি যে নতুন গ্যাস ব্যবহার করা যেতে পারে। সে ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরুর পর থেকে উৎপাদনে যেতে প্রায় তিন-চার বছর লেগে যায়। ফলে আগামী তিন-চার বছর নতুন গ্যাস ব্যবহারের তেমন কোনো ক্ষেত্র তৈরি হবে না। সেক্ষেত্রে অবৈধ সংযোগসহ নানাভাবে এই গ্যাস লুটপাটের আশংকা আছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, মূলত লুটপাটের জন্যই ক্যাপটিভে গ্যাস সংযোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ক্যাপটিভে গ্যাস না দেয়ায় শিল্পোদ্যোক্তাদের কল-কারখানা চালানোর জন্য বিদ্যুৎ দিতে হবে। নতুন কারখানায় বিদ্যুৎ দিতে গেলে চাহিদা বেড়ে যাবে অনেক। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে চাহিদার ব্যবধান তৈরি হবে। এতে লোডশেডিং বাড়বে। অথচ ক্যাপটিভ পাওয়ারে গ্যাস সরবরাহ করলে ব্যবসায়ীরা বিদ্যুতের জন্য সরকারের কাছে যেত না। তারা নিজেরাই প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করত। এদিকে গ্যাসের দাম না বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন ক্যাপটিভ পাওয়ার উৎপাদনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ স্মল অ্যান্ড ক্যাপটিভ পাওয়ার প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশন। তারা বলেছেন, ক্যাপটিভ পাওয়ারে নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়া কোনোভাবেই বন্ধ করা যাবে না। পাশাপাশি গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেলে ক্যাপটিভ পাওয়ারভিত্তিক স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সংগঠনের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোহসিন বলেন, বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের শুরু থেকেই ক্যাপটিভ থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের মূল্য এবং বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো থেকে নেয়া বিদ্যুতের মূল্যের মধ্যে বড় ধরনের ব্যবধান আছে। পিডিবি গ্যাস ক্রয় করে প্রতি ঘনমিটার ২ দশমিক ৮২ টাকা মূল্যে আর বিদ্যুৎ বিক্রয় করে প্রতি কিলোওয়াট ৬ দশমিক ৯৬ থেকে ১১ দশমিক ৮৫ টাকা। পক্ষান্তরে ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টগুলোকে গ্যাস ক্রয় করতে হয় প্রতি ঘনমিটার ৪ দশমিক ১৮ টাকা করে, আবার বিদ্যুৎ বিক্রয় করতে হয় প্রতি কিলোওয়াট ২ দশমিক ৩৭ টাকায়। মোহাম্মদ মোহসিন বলেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গ্যাস কোম্পানিগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিইআরসি গ্যাসের মূল্য ১০২ শতাংশ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিচ্ছে। গ্যাসের মূল্য একতরফাভাবে বৃদ্ধি করা হলে স্থানীয় ক্যাপটিভ পাওয়ারভিত্তিক শিল্প ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তিনি পুরো ক্যাপটিভ পাওয়ারে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম না বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন সংযোগ বন্ধের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) একজন কর্মকর্তা বলেন, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য লাইসেন্স ফি ও লাইসেন্স নবায়ন ফি দিয়ে তারা বিদ্যুৎ উপাদন করছে। সব হিসাব-নিকাশ করে বিইআরসিও এই কর্মকর্তা উল্টো ক্যাপটিভ বিদ্যুতের লাইসেন্সের নবায়ন ফি ১০ গুণ কমানোর কথা বলেন। তিনি বলেন, গ্যাসের অপব্যবহার বন্ধ ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ নিয়ে যে অবৈধ বাণিজ্য এবং অপচয়ের কথা বলা হচ্ছে তা ঠিক নয়। ইতিমধ্যে বিইআরসির কারিগরি কমিটির সদস্যরা এর প্রমাণও পেয়েছেন। ক্যাপটিভ নয়, উল্টো সরকারি প্ল্যান্টগুলোতে বিদ্যুৎ কেনাবেচা, সিস্টেম লস, অবৈধ সংযোগ এবং বিতরণের নামে শত শত কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। ডিসিসিআই সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে শিল্প প্রতিষ্ঠানে মান সম্মত ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রয়োজন। একমাত্র ক্যাপটিভ থেকেই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়ার সুযোগ আছে। ক্রমবর্ধনশীল শিল্পাঞ্চলগুলোতে দ্রুত মানসম্মত বিদ্যুৎ দিতে হবে। তবে বেশিরভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ফিডার থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হচ্ছে। নির্ভরযোগ্য ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহে শিল্প খাতকে অন্যান্য খাত থেকে আলাদা করা জরুরি। তিনি এলপি গ্যাসে ভর্তুকি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।  

No comments:

Post a Comment