Friday, March 13, 2015

এপ্রিলের শেষার্ধে ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন:কালের কন্ঠ

নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগামী মাসের শেষ দিকে ঢাকার দুই (উত্তর ও দক্ষিণ) সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ অনুযায়ী শুক্র ও শনিবার বাদ রেখে ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। ভোটগ্রহণের দিন ও এর আগে-পরে চার দিন এইচএসসি পরীক্ষা না রাখতে সম্মত হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এদিকে পুলিশ ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে ইসিকে জানানো হয়েছে, এপ্রিলের শেষ দিকে এ নির্বাচন
অনুষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত সময়। এর আগেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি গত ৬ জানুয়ারির আগের স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসবে। স্বশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকেও নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে মাঠে রাখতে চাইলে কমিশনের সে চাহিদা পূরণ করা হবে। গতকাল সকালে অনুষ্ঠিত ঢাকার দুই ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের প্রাকনির্বাচনী সমন্বয় সভায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত জানার পর ইসি ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে একই দিনে সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সভায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে তিন সিটির নির্বাচন পৃথক তিনটি দিনে অনুষ্ঠানের প্রস্তাব দেওয়া হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভিন্নমত প্রকাশ করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, তিনটি পৃথক দিনে তিন সিটির নির্বাচন হলে বেশিসংখ্যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করতে হবে না। কিন্তু একই দিনে হলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে থেকে বাহিনীর সদস্যদের আনতে হবে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, একাধিক দিনে ভোটগ্রহণ করা হলে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠানে বেশি সমস্যা হবে। পরে নির্বাচন কমিশন ঢাকার দুই সিটি একই দিনে এবং চট্টগ্রাম সিটির নির্বাচন অন্যদিনে রোজার আগেই করার ব্যাপারে সম্মত হয়। এ বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত অনুসারে এপ্রিলের মধ্যেই ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। আমরা নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে। আগামী সপ্তাহের যেকোনো দিন তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।' গতকালের ওই সভা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, হয়তো চলতি মাসেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচনের তফসিল দিতে হবে। কারণ রোজার আগেই নির্বাচন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে তফসিল ঘোষণার পর ভোটগ্রহণের জন্য অন্তত ৩৭ দিন সময় হাতে রাখতে হবে। সিইসির সভাপতিত্বে সভায় নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক, মোহাম্মদ আবু হাফিজ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী, মো. শাহ নেওয়াজ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে. জে. আবু বেলাল মো. শফিউল হক, ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব স্বপন কুমার সরকার, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. শামসুল হক পিএসসি, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল এম মকবুল হোসেন, অতিরিক্ত মহা পুলিশ পরিদর্শক (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, অতিরিক্ত মহা পুলিশ পরিদর্শক (পুলিশ হেডকোয়ার্টার) মো. মোখলেসুর রহমান, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ডিজিএফআইয়ের পরিচালক ব্রি. জে. শামসসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনার ও নির্বাচন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভাসূত্র জানায়, সভায় পুলিশের পক্ষ থেকে কমিশনকে এই আশ্বাস দেওয়া হয় যে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসছে। নির্বাচনে কোনো সমস্যা হবে না। কমিশন ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় তফসিল ঘোষণা করতে পারে। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন প্রসঙ্গে প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার বলেন, আগের সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোয় কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী সেনা মোতায়েন করা হয়। তবে মাঝে কয়েকটি সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হয়নি। তবে কমিশন চাইলে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ সেনা মোতায়েনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, নির্বাচন আয়োজন করলে কোনো সমস্যা হবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে বলা হয়, ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়ে ১১ জুন শেষ হবে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে শুক্রবার ও শনিবার এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এমন অবস্থা যদি চলতে থাকে তবে যেন শুক্রবার ও শনিবার ছাড়া ভোটের দিন নির্ধারণ করা হয়। নির্বাচনের জন্য পরীক্ষার সময়সূচিতে কিছুটা পরিবর্তন আনলে অসুবিধা হবে না। র‌্যাবের ডিজি জানান, কমিশন তফসিল ঘোষণা করলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। এনএসআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, সবকিছুই সহনীয় পর্যায়ে আছে। ডিজিএফআইয়ের পক্ষ থেকেও বলা হয়, এখন ভালো সময়, নির্বাচন আয়োজন করা যায়। তিন সিটির নির্বাচনী তথ্য : গতকালের ওই সভায় ঢাকার দুই সিটি এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে উপস্থাপিত তথ্যানুসারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাধারণ ওয়ার্ডের সংখ্যা ৩৬। নারীদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১২টি। গত ১ মার্চ পর্যন্ত এ সিটির মোট ভোটার ২৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে নারী ১১ লাখ ২১ হাজার ৭৪২ জন এবং পুরুষ ১২ লাখ ২৭ হাজার ৫৭১ জন। সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র (২০১২ সালে নির্ধারণ করা) এক হাজার ৮৭টি এবং ভোটকক্ষ পাঁচ হাজার ৮২৫টি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাধারণ ওয়ার্ড ৫৭টি। সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংখ্যা ১৯। গত ১ মার্চ পর্যন্ত এ সিটির মোট ভোটার ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৩৬৩ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার আট লাখ ৬১ হাজার ২৯৩ জন এবং পুরুষ ভোটার ১০ লাখ ৯ হাজার ৭০ জন। সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র (২০১২ সালে নির্ধারণ করা) ৮৭৩টি এবং ভোটকক্ষ চার হাজার ৪৩৯টি। সর্বশেষ ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে এর আগে নির্বাচন হয় ২০১০ সালের ১৭ জুন। ওই নির্বাচনে মেয়র পদে আটজন, সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ২৫৩ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৫৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন।      

No comments:

Post a Comment