টানা অবরোধ ও হরতালে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হওয়ায় অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচকে নেতিবাচক অবস্থা দেখা দিয়েছে। এর প্রভাবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হচ্ছে। এছাড়া প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবৃদ্ধি কমে গেছে, রফতানি আয়ে নেতিবাচক অবস্থা বিরাজ করছে। একই কারণে কমেছে আমদানি, ঋণ প্রবাহে এসেছে মন্থরগতি, শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানিতে প্রবৃদ্ধি কমেছে, শেয়ারবাজারে মন্দা
অব্যাহত আছে। এসবের প্রভাবে অর্থনীতির রক্তক্ষরণ বেড়েই চলেছে। হরতাল-অবরোধের ৬৮ দিনে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকা। প্রকৃত হিসাবে এর পরিমাণ আরও বেশি হবে। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব : সম্প্রতি বিদেশি কূটনৈতিকদের কাছে দেয়া ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) দেয়া তথ্যে দেখা গেছে, প্রতিদিন হরতাল-অবরোধের কারণে অর্থনীতিতে ক্ষতি হচ্ছে ২ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা। এ হিসাবে ৬৮ দিনে ক্ষতির পরিমাণ ১ লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে গার্মেন্ট খাতে একদিনে ক্ষতি ৯০৯ কোটি টাকা। এ হিসাবে ৬৮ দিনে ক্ষতি ৬১ হাজার ৯শ’ কোটি টাকা। পরিবহন খাতে দিনে ক্ষতি ২৮৮ কোটি টাকার হিসাবে ৬৮ দিনে ক্ষতি ১৯ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা। খুরচা ও পাইকারি বিক্রিতে প্রতিদিনের ক্ষতি ৪৫৪ কোটি টাকা। এ হিসাবে ৬৮ দিনে ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার ৯শ’ কোটি টাকা। আবাসন খাতে একদিনে ক্ষতির পরিমাণ ২৩৮ কোটি টাকা। এতে ৬৮ দিনে এ খাতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। কৃষি ও পোলট্রি খাতে একদিনে ক্ষতি ২৮৮ কোটি টাকা। এ হিসাবে ৬৮ দিনে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা। পর্যটন খাতে একদিনে ক্ষতি হচ্ছে ২০৪ কোটি টাকা, ৬৮ দিনে ক্ষতির পরিমাণ ১৩ হাজার ৯শ’ কোটি টাকা। উৎপাদন খাতে একদিনে ক্ষতির পরিমাণ ১৩১ কোটি টাকা। এ হিসাবে ৬৮ দিনে এ খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৮ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা। সূত্র জানায়, এসব টাকার বড় অংশই ব্যাংক ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে সরবরাহ না থাকলেও ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি করতে পারছেন না। এতে তাদের কাছে টাকার জোগান আসছে না। এদিকে ঋণের সুদ ও কিস্তি পরিশোধ এবং শ্রমিকদের বেতন দিতে হচ্ছে। এতে তারা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে। এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, পরিস্থিতি যেভাবে চলছে, তার শেষ কোথায় তা বলা মুশকিল। তবে এটুকু বলা যায়, দেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ব্যাংক ঋণের বড় অংশই যায় বেসরকারি খাতে। তাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ব্যাংকে এর প্রভাব পড়বে। এর প্রভাবে চক্রাকারে পুরো অর্থনীতি রুগ্ন হতে বাধ্য হবে। একই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, হরতাল-অবরোধে অর্থনীতির যে ক্ষতি হচ্ছে এগুলো নীতি সহায়তা দিয়ে মেটানো সম্ভব নয়। এগুলোর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সমাধান। মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছে : রাজনৈতিক অস্থিরতায় উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। ফেব্রুয়ারিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ঘটেছে ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। আগের মাস জানুয়ারিতে যা ছিল ৬ দশমিক ০৪ শতাংশ। ডিসেম্বরে এর হার ছিল ৬ দশমিক ১১ শতাংশ। নভেম্বরে ৬ দশমিক ২১ শতাংশ। ফেব্রুয়ারির আগে গত টানা ৮ মাস পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির হার কমে আসছিল। ফেব্রুয়ারিতে এসে বেড়েছে। বিশ্ববাজারে তেলের মূল্যের নিুমুখী প্রবণতায় মূল্যস্ফীতির হার কমছিল। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতায় আবারও তা ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে দেখা গেছে, আগের বছরের ফেব্র“য়ারিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এরপর কমতে থাকে। চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকে টানা ৮ মাস সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমতে থাকে। জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ৮ মাস পর জানুয়ারিতে ৬ দশমিক ০৪ শতাংশে নেমে এসেছিল। সংস্থাটি বলছে, মাছ, মাংস, ফল, মসলা, দুধ ও দুগ্ধজাতীয় এবং তামাকজাতীয় দ্রব্যাদির মূল্য বৃদ্ধির কারণে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। রাজস্ব আয়ে ঘাটতি : হরতাল-অবরোধের কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। ফলে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এদিকে রাজস্ব আয়ের ঘাটতি মেটাতে গিয়ে সরকারকে ঋণ নিতে হচ্ছে। তবে সরকার এখন ব্যাংক ঋণের পরিবর্তে সঞ্চয়পত্র ও বন্ড বিক্রি করে বেশি ঋণ নিচ্ছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন অন্বেষণের মতে, টানা রাজনৈতিক অস্থিরতায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সরকারের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে আদায়ের পার্থক্য বাড়ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছর শেষে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি থাকতে পারে। সংস্থাটি বলছে, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে যাওয়ায় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে আয়কর, ভ্যাট এবং শুল্ক আদায় কমছে। একইভাবে এনবিআরবহির্ভূত খাতের রাজস্ব আদায়ও কমেছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, চলতি অর্থবছরে এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ছয় মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৫৯ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। রাজস্ব ঘাটতির কারণে বাজেট ঘাটতি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৭ শতাংশে যেতে পারে। চলতি বাজেটে ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে জিডিপির ৫ শতাংশ। আয়কর খাতেও আদায় এবং লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য হতে পারে। কারণ পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে সব কর অঞ্চলেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি হয়েছে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত শুধু আয়কর খাতেই ঘাটতির পরিমাণ ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩১টি কর অঞ্চলের কোনোটিই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। রেমিটেন্স কমেছে : রেমিটেন্স প্রবাহও কমতে শুরু করেছে। গত অক্টোবরের পর ফেব্রুয়ারিতেই রেমিটেন্স কমেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে রেমিটেন্স এসেছে ১১৭ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। জানুয়ারিতে এসেছিল ১২৪ কোটি ৩১ লাখ ডলার। গত জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে রেমিটেন্স কমেছে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি ডলার। ডিসেম্বরে রেমিটেন্স এসেছিল ১২৭ কোটি ৫১ লাখ ডলার। গত অক্টোবরে রেমিটেন্স এসেছিল ১০১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। অক্টোবরে রেমিটেন্স প্রবাহ কমার পর পরবর্তী তিন মাস তা আবার বেড়েছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে এসে আবার কমে গেছে। শিল্পের আমদানি কমেছে : রাজনৈতিক অস্থিরতায় শিল্প খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর ফলে শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির প্রবৃদ্ধির হার কমে গেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের ওই সময়ে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলা বেড়েছে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এলসি খোলা হয়েছিল ৫৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলা বেড়েছে ৯ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এলসি খোলা বেড়েছিল প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল প্রায় ১২ শতাংশ। এছাড়া সার্বিক আমদানিতেও নেতিবাচক অবস্থা। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ ব্যয় বেড়েছিল প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ। গত ও চলতি অর্থবছরের ওই সময়ে এলসি খোলার হার অভিন্ন রয়েছে। তবে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, টাকা ও ডলারের অবমূল্যায়ন বাদ দিলে এ প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক। রফতানি প্রবৃদ্ধি কমেছে : ফেব্রুয়ারিতে দেশে রফতানি আয় এসেছে ২৫১ কোটি ২৪ লাখ ডলার। জানুয়ারিতে এসেছিল ২৮৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ডিসেম্বরে রফতানি আয়ের পরিমাণ ছিল ২৮৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে রফতানির আদেশ যেমন কমেছে, তেমনি রফতানি আয়ের পরিমাণও কমে গেছে। রফতানির আদেশ বাতিল হওয়ায় কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে এফবিসিসিআইর সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, হরতাল-অবরোধে আর্থিক ক্ষতির চেয়েও আমাদের বড় ক্ষতি হয়েছে ইমেজের। বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার বন্ধ করে দিয়েছিল। বর্তমানে কিছুটা স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে রফতানির আদেশ পেলেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ব্যাংকি খাত : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। মোট ঋণের মধ্যে কৃষি খাতে ২৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। শিল্প খাতে মেয়াদি ঋণ ৭৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। শিল্প খাতের চলতি মূলধন ঋণ ৯১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। নির্মাণ খাতে ৪৩ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ শতাংশ। বাণিজ্য খাতে ১ লাখ ৯৭ হাজার ২৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪১ শতাংশ। পরিবহন খাতে ৫ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১ দশমিক ০৭ শতাংশ। ভোক্তা ঋণ ৩৪ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতে ১২ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২ দশমিক ৫৯ শতাংশ। প্রাপ্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঋণের বেশিরভাগই রয়েছে শিল্প, কৃষি ও বাণিজ্য খাতে। রাজনৈতিক অস্থিরতায় এসব খাতেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। ফলে এসব ঋণ খেলাপি হওয়ার আশংকা বেশি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র গবেষণা পরিচালক ড. জায়েদ বখত বলেন, অর্থনীতিতে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে। তা কাটিয়ে উঠার জন্য সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিশেষ করে সরকারি বিনিয়োগ চালু করলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ আসবে। এতে অর্থনীতিতে কিছুটা গতি আসবে। পাশাপাশি পদ্মা সেতুসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নে গতি বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা ঋণ বা সুদ মওকুফ এবং পুনঃতফসিলের সুযোগ চেয়েছে। তবে ঢালাওভাবে করা যাবে না। কেস টু কেস ভিত্তিতে গ্রাহকের সঙ্গে ব্যাংকের আস্থার ওপর নির্ভর করে কিছু করা যেতে পারে। শেয়ারবাজার : শিল্পায়নে পুঁজি সংগ্রহের জন্য মুদ্রাবাজারের বিকল্প উৎস পুঁজিবাজার। কিন্তু দুই মাসে এ খাতে নীরবে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ৫ জানুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। দুই মাসে ১৪ হাজার কোটি টাকা কমে ৩ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। আলোচ্য সময়ে ডিএসইর মূল্যসূচক ৪ হাজার ৯২৬ পয়েন্ট থেকে কমে ৪ হাজার ৬৬৪ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এ হিসাবে সূচক কমেছে ২৬২ পয়েন্ট। এছাড়া গড় লেনদেন ২শ’ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এ খাতে সরকারের রাজস্ব আয় কমছে। খরচ কমাতে বেশকিছু ব্রোকারেজ হাউস কর্মচারী ছাঁটাই করছে। আর্থিক সুবিধা দাবি : রাজনৈতিক অস্থিরতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকারের রাজস্ব আয়। বন্দরে আমদানি-রফতানি কমে যাচ্ছে। সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় কমছে উৎপাদন। ফলে ব্যবসায়ীরা সরকারকে বেশি কর দিত তারা ক্ষতিপূরণ চাচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতি মোকাবেলা করতে নানা ধরনের আর্থিক সুবিধা আদায়ের জন্য ব্যাংক ও বীমা কোম্পানিগুলোর ওপর ব্যবসায়ীদের চাপ বাড়ছে। তারা ক্ষতি মোকাবেলায় ঋণের সুদ মওকুফ, ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানো, কিস্তি পরিশোধ স্থগিত করা, সুদের হার কমানো, স্বল্পমেয়াদি ঋণ দীর্ঘমেয়াদি ঋণে রূপান্তর করা, বীমার প্রিমিয়াম কমানোর সুপারিশ করেছেন। এর বাইরে তারা রফতানিকারকদের জন্য কারেন্সি বা মুদ্রা বিনিময় হারের সুবিধা, বন্দর অবকাঠামোর চার্জ কমানোর দাবি জানিয়েছেন। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে এ ধরনের কিছু দাবি তুলে ধরেছেন তারা। এসব আদায়ে তারা বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কর্মসূচিও ঘোষণা করেছেন। ব্যবসায়ীদের অভিমত : জানতে চাইলে রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট প্রধান আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা অচিরেই বন্ধ না হলে ক্ষতির তালিকা আরও দীর্ঘ হবে। তখন আমাদের এখনকার তালিকা বাদ দিয়ে আবার নতুন তালিকা করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা চাই ব্যবসা করতে। দয়া করে আমাদের সে পরিবেশ দিন। এছাড়া চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, অস্থিরতায় তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ কারণে প্রতিবাদস্বরূপ তারা আগামী দুই কোয়ার্টারের সুদ পরিশোধ করবে না। এর আগে একই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিজিএমইএ। প্রচলিত নিয়মে ব্যাংকের ঋণের সুদ ৩ মাস পরপর পরিশোধ করতে হয়। এখন তারা তিন মাস করে ৬ মাসের সুদ পরিশোধ স্থগিত রাখবেন।
No comments:
Post a Comment