Thursday, March 12, 2015

এক বছরেও দোকান বুঝে পাননি ব্যবসায়ীরা:যুগান্তর

ঢাকা জেলা পরিষদের প্রশাসক হাসিনা দৌলার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার এক বছরেও চালু হয়নি নবাবগঞ্জ মার্কেট। অগ্রিম টাকা জমা দিয়ে দোকান নিলেও ব্যবসায়ীরা এখন নিরুপায়। জেলা পরিষদের কর্তাব্যক্তিদের কাছে জিম্মি বললেও ভুল বলা হবে না। তাদের অভিযোগ, প্রকৌশলীরা কাজ শেষে দোকান বুঝিয়ে দিতে চাইলেও জেলা পরিষদের প্রশাসক হাসিনা দৌলা রীতিমতো হয়রানি করছেন। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে প্রায়
১১ কোটি টাকা ব্যয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা সদরে ডাকবাংলো পুকুর ভরাট করে দ্বিতল মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। যার কাজ শেষ হয় ২০১৩ সালের শেষের দিকে। এ মার্কেটে ২০২টি দোকান রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হলেও বিনিয়োগকারীরা দোকান বুঝে পাননি। অভিযোগ রয়েছে, জেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে এ মার্কেটে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিএনপির নেতারাও একাধিক দোকান বাগিয়ে নিয়েছেন। এ তালিকায় প্রভাবশালীদের প্রত্যেকের নামে-বেনামে ১০-১২টি করে দোকান রয়েছে। এসব দোকান বরাদ্দ দেয়ার সময় জেলা পরিষদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের একটি সিন্ডিকেট দোকানপ্রতি এক থেকে দেড় লাখ টাকা করে ঘুষ আদায় করেন। কিন্তু এভাবে বাড়তি পয়সা দেয়ার পরও এক বছরেও দোকান বুঝে না পাওয়ায় ভুক্তভোগীদের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ বাড়ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরাদ্দ পাওয়া কয়েকজন দোকান মালিক যুগান্তরকে বলেন, দোকান বরাদ্দ পেতে গোপন ঘুষ ছাড়াও ২-৩ বছর আগে তারা দোকানপ্রতি ৫-৭ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন। এক্ষেত্রে প্রচলিত সব ধরনের নিয়মকানুন অনুসরণ করা হয়। কিন্তু মার্কেটটি চালু করার জন্য প্রস্তুত হলেও তারা দোকান বরাদ্দ বুঝে পাননি। এর কারণ জানতে চাইলে জেলা পরিষদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, প্রশাসক হাসিনা দৌলা না বলা পর্যন্ত কোনো দোকান হস্তান্তর করা হবে না। ৮৮নং দোকানের মালিক সাহিদুল হক খান ডাবলু জানান, দোকান বরাদ্দের টাকা পরিশোধ করলেও তিন বছর পর এখন ভ্যাট ও ট্যাক্সের কথা বলে দোকানপ্রতি অতিরিক্ত ১ লাখ ২০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত দাবি করা হচ্ছে। ফলে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা নেমে এসেছে। কেউ কেউ দোকান চালু করার জন্য যে পুঁজি সংগ্রহ করেছিলেন তাও ভেঙে ফেলার অবস্থা তৈরি হয়েছে। প্রকল্পে দুর্র্নীতি : এদিকে যুগান্তরের অনুসন্ধানে ঢাকা জেলা পরিষদের আরও অনেক ভুয়া প্রকল্পের সন্ধান মিলেছে। কোনো প্রকল্পের নাম ঠিক থাকলেও কাজ হয়েছে নামমাত্র। জানা গেছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দোহারের সুতারপাড়া শামসুল হুদা মাদ্রাসা থেকে গাজীরটেক মিনা মোল্লার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার বাবদ ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়। কিন্তু কোনো কাজই হয়নি রাস্তাটির। স্থানীয়রা জানান, এ রাস্তায় সৃজনশীল কর্মসূচির প্রকল্প থেকে এক বছর আগে কাজ করা হয়। এছাড়া আর কেউ কোনো কাজ করেননি। নতুন কোনো প্রকল্প হলে তা হবে গোপনে লুটপাট করার কৌশল। বাস্তবে হয়েছেও তাই। নবাবগঞ্জ উপজেলার গাছিরভিটা হতে কিরিঞ্জী প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়ে নিমাই বিশ্বাসের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় ২০ লাখ টাকার প্রকল্প বরাদ্দ দেয় জেলা পরিষদ। কিন্তু কাজের নামে সামান্য কিছু স্থানে ইটের সলিং বিছানো হয়েছে। বাকি রাস্তায় কোনো কাজ নেই। একই অবস্থা যন্ত্রাইলে বাবুলের বাড়ি থেকে রামচরণ রায়ের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার। কিন্তু গুরুতর এসব অনিয়ম নিয়ে কখনও কোনো তদারকি হয়নি। ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে লুটেপুটে খাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা জেলা পরিষদের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জেলা পরিষদের প্রশাসক, প্রকৌশলী, ঠিকাদার ও প্রধান হিসাবরক্ষক এসব অনিয়মের দায় কোনোভাবে এড়াতে পারবেন না। কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করার সাহস দেখান না। এ অফিসের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করার চেষ্টা করলে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কাছের লোক বলে ভয় দেখানো হয়। অফিসের কোনো কোনো কর্মকর্তা এমনও বলার চেষ্টা করেন, প্রশাসক হাসিনা দৌলা প্রধামন্ত্রীর কাছের লোক। তাই এসব অনিয়ম নিয়ে পত্রিকায় রিপোর্ট লিখে কোনো লাভ নেই। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা পরিষদের প্রশাসক হাসিনা দৌলা যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নই। ঠিকাদার ও কিছু অসাধু কর্মকর্তার অবৈধ কাজে সমর্থন না দেয়ার কারণেই তারা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ছড়াচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘তিন বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করছি। এ সময়ে কোথাও সামান্য কোনো অনিয়ম হলে তা সংশোধন করার চেষ্টা করেছি।’ তবে তিনি তার দফতরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেননি। জেলা পরিষদের হিসাবরক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। ৭ বছর ধরে এখানে আছি। কোনো রকম অনিয়মের সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই।’ নবাবগঞ্জ উপজেলার একজন স্কুল শিক্ষক বলেন, এভাবে লুটপাট হলে নবাবগঞ্জের উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হবে। এ বিষয়ে সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশনের শক্ত পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এ ধরনের অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরও খুঁজে বের করতে হবে।  

No comments:

Post a Comment