ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভুগছেন। আজ রোববার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনেও তাঁরা সশরীরে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যাচ্ছেন না। প্রতিনিধির মাধ্যমে তাঁরা মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য মনে
ানয়নপত্র সংগ্রহ করা বিএনপির ছয়জন মেয়র ও কাউন্সিলর পদের প্রার্থী প্রতিনিধির মাধ্যমে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন বলে নিশ্চিত করেছেন। তাঁরা জানান, মনোনয়নপত্র সংগ্রহের মতো জমা দেওয়ার ক্ষেত্রেও প্রার্থীকে রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে সশরীরে হাজির হওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। তাই ঝুঁকি না নিয়ে প্রতিনিধির মাধ্যমেই জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অবশ্য ঝুঁকি, আতঙ্ক ও হয়রানির আশঙ্কা সত্ত্বেও সর্বাত্মকভাবে তিন সিটি নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। এ জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন আজ রোববার বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট হরতাল দেয়নি। অবরোধের পাশাপাশি আজ দেশের সব জেলা, উপজেলা, থানা, পৌরসভা ও মহানগরের থানায় থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লা এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। বিএনপি জোট রোববার থেকে রুটিন করে হরতাল দেওয়ার যে রীতি চালু করেছিল, আজ থেকে তার ছেদ পড়ল। বিএনপির একটি নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়, আগামী ৩ এপ্রিল শত নাগরিক জাতীয় কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকার দুই সিটির মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করবে। এর আগে নির্বাচন কমিশন প্রার্থিতা যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করবে। এরপর বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট পুরোপুরি নির্বাচনে মনোনিবেশ করবে। তখন বড় কোনো ঘটনা না ঘটলে শিগগিরই হরতাল দেওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে অবরোধ অব্যাহত রাখা হতে পারে। দলের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, কীভাবে মামলা-গ্রেপ্তার আতঙ্ক কাটিয়ে নির্বাচনী মাঠে থাকা যায়, সেটাই বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের মূল ভাবনা। কারণ, দলের সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর প্রায় সবাই ২০-দলীয় জোটের চলমান আন্দোলনে বিভিন্ন নাশকতার মামলার আসামি। পুলিশ তাঁদের খুঁজছে। এ জন্য দলটি কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে আইনি প্রতিকার পেতে জামিন আবেদন করার আগেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা না পড়েন। যতটুকু সম্ভব গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপিদলীয় একজন সম্ভাব্য মেয়র পদপ্রার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ ঘোষণা দিয়েছে মামলার আসামি হলেই গ্রেপ্তার করা হবে। তাহলে আমরা কোন ভরসায় সশরীরে হাজির হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাব?’ আরেকজন সম্ভাব্য মেয়র পদপ্রার্থী বলেন, ‘মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর একজন সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আমার স্ট্যাটাস পাল্টাবে। তখন যদি আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়, তখন দেশবাসী এবং আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর কাছে এর আলাদা মূল্য দাঁড়াবে।’ অবশ্য, সিটি করপোরেশন নির্বাচন আইনে (ধারা-৯) বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি আদালত কর্তৃক ফেরার আসামি হিসেবে ঘোষিত হলে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের কেউ ফেরার আসামি কি না, তা যাচাই করা যায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, কোনো মামলার আসামিকে আদালত হাজির হওয়ার নির্দেশ দিলে তিনি যদি সে মোতাবেক হাজির না হন, তবে আদালত সে ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারবেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর ওই ব্যক্তি যদি নির্ধারিত সময়ে আদালতে হাজির না হন, সে ক্ষেত্রে আদালত তাঁকে ফেরার ঘোষণা করবেন। সূত্র জানায়, বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর নিজেদের নামে থাকা মামলার বিষয়ে আইনি প্রতিকার পেতে সময়-সুযোগমতো উচ্চ আদালতে যাবেন। আদালত থেকে জামিনসহ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পেলে তার পরই প্রার্থীরা গণসংযোগে নামতে পারেন। এ সময়টাতে বিএনপি আইনি প্রক্রিয়ার ফল, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণ দেখবে। যদি দেখা যায়, সম্ভাব্য প্রার্থী ও নেতা-কর্মীরা আইনি প্রতিকার পাচ্ছেন না বা পুলিশ নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে, তখন নির্বাচন করা না-করা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
No comments:
Post a Comment