Thursday, December 18, 2014

এইচএসসির ফরম পূরণেও সাত গুণ অতিরিক্ত টাকা:কালের কন্ঠ

চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার ফরম পূরণে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনেক বেশি অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেছিল স্কুল কর্তৃপক্ষগুলো। এ নিয়ে ঢাকা শিক্ষা
বোর্ডের নির্দেশনা, হুঁশিয়ারি এবং সর্বশেষ অতিরিক্ত অর্থ ফেরতের আদেশ- সব কিছুর প্রতিই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায় রাজধানীর স্কুলগুলো। শেষমেশ রবিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের তলব করেছেন হাইকোর্ট। এ অবস্থার মধ্যেই গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার ফরম পূরণেও অতিরিক্ত অর্থ আদায় শুরু হয়ে গেছে। রাজধানীর নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, অনেক কলেজই পাঁচ-সাত গুণ অতিরিক্ত টাকা নির্ধারণ করেছে। তবে এসএসসিতে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিতে বোর্ডের নির্দেশ থাকায় এবার কিছু উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একসঙ্গে সব টাকা না নিয়ে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ফরম পূরণের শেষ তারিখ ২৪ ডিসেম্বর। আর বিলম্ব ফিসহ ফরম পূরণ করা যাবে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। বোর্ডের নির্দেশনা মোতাবেক সর্বোচ্চ এক হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা যাবে। এর মধ্যে রয়েছে পরীক্ষার প্রতি পত্রের জন্য ৭৫ টাকা হারে ১২ পেপারের জন্য ৯০০ টাকা, কেন্দ্র ফি ৩০০, ব্যবহারিক ফি প্রতি পত্রের জন্য ২৫ টাকা, ট্রান্সক্রিপ্ট ফি ৫০, সনদ ফি ১০০, রোভারস্কাউট বা গার্লস গাইড ১৫ এবং শিক্ষা সপ্তাহ ফি পাঁচ টাকা। মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী, প্রতি বিষয়ের জন্য সর্বোচ্চ ১৮০ টাকা করে কোচিং ফি নেওয়ার বিধান রয়েছে। শিক্ষার্থীদের অধিকতর সফলতার জন্য প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিষয়ভিত্তিক মডেল টেস্ট গ্রহণ করা যাবে। তবে এ জন্য অতিরিক্ত ফি আদায় বা ধার্য করা যাবে না বলে নির্দেশনা দিয়েছে বোর্ড। গত ১১ ডিসেম্বর ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. দিলারা হাফিজ স্বাক্ষরিত এক সতর্কবার্তায় কলেজের অধ্যক্ষদের বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অনুমোদিত ফির বাইরে কোনোরূপ অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা যাবে না। অন্যথায় বিধিমোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জানা গেছে, বোর্ডের এ রকম নির্দেশনা ছিল এসএসসির ফরম পূরণের বেলায়ও। জানতে চাইলে ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দও কালের কণ্ঠকে বলেন, যদি কেউ অমান্য করে তাহলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, 'অভিভাবকরা অভিযোগ জানালে আমাদের পক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব।' রাজধানীর উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এইচএসসির ফরম পূরণে আট হাজার টাকা নির্ধারণের কথা উল্লেখ করে এক অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'এইচএসসির ফরম পূরণের জন্য চার হাজার ৩৪০ টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তিন মাসের বেতন দুই হাজার ৪০০ টাকা, তিন মাসের ল্যাব ফি ৩০০ টাকা, ফরম পূরণ ফি এক হাজার ৬৪০ টাকা। এর বাইরেও ক্লাস টিচারের কাছে চার হাজার ৫০০ টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে। তবে এ টাকার কোনো রসিদ দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে। আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত মাসিক ৮০০ টাকা হারে বেতন, বার্ষিক কম্পিউটার চার্জ ১০০০, বিবিধ ২০০০সহ আরো কিছু ফি চলতি মাসেই পরিশোধ করতে হয়েছে।' মণিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক অভিভাবকও ফরম পূরণের ফি ও বেতনসহ নানা আনুষঙ্গিক ফির বাইরেও চার হাজার টাকা ক্লাস টিচারের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে, যার কোনো রসিদ দেওয়া হবে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরম পূরণের সঙ্গে বেতন, সেশন চার্জ, কোচিং ও মডেল টেস্ট ফি ইত্যাদি মিলিয়ে মণিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে সাড়ে আট হাজার টাকা, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে পাঁচ হাজার, রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে সাড়ে ছয় হাজার, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে সাড়ে ছয় হাজার, উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আট হাজার ৮৪০, মিরপুর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজে সাড়ে সাত হাজার টাকা, ট্রাস্ট কলেজে ১৫ হাজার, মাইলস্টোনে ২০ হাজার, ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২০ হাজার, বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সাড়ে সাত হাজার, দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে সাত হাজার ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজধানীর প্রায় সব বেসরকারি কলেজই অতিরিক্ত ফি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ সাহাদত হুসাইন বলেন, 'বোর্ড তো আমাদের উন্নয়ন ফিসহ অন্যান্য খাত উল্লেখ করেনি। কলেজের উন্নয়নের টাকা তো সরকার দেয় না। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েই কলেজের উন্নয়ন করতে হয়। বেতনসহ নানা খাতের টাকা ফরম ফিলাপের টাকার সঙ্গে যোগ করায় বেশি মনে হচ্ছে।'      

No comments:

Post a Comment