বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া লিখিত বক্তব্যকে ‘নির্লজ্জ মিথ্যাচার’ বলে অাখ্যা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার ওই বক্তব্য প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছে দলটি। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের জবাব দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের পরামর্শ নিয়ে এই জবাব দ
েওয়া হয় বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। দলের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন বললেও সে কথা শেখ হাসিনা রাখেনি’—খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যের বিষয়ে হানিফ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কবে, কখন ও কোথায় বলেছেন, এটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন? এই বক্তব্য নির্লজ্জ মিথ্যাচারে ভরপুর।’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, দেশে কোনো রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট নেই। দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলছে। এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। সরকার সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া খুনি, মানুষ হত্যাকারী। তাঁর সঙ্গে কোনো সংলাপ হতে পারে না।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, যা করার সরকারই করবে। খুনির সঙ্গে বসে তো আলাপ হতে পারে না। খুনিদের আইনের আওতায় এনে সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। সরকার এটা করে যাচ্ছে।’ হানিফ বলেন, ‘উনি বলেছেন সংবাদমাধ্যমের নাকি স্বাধীনতা নেই। উনি বর্তমানে ফেরারি আসামি। একজন ফেরারি আসামি, একজন খুনি, জঙ্গি নেত্রী সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে কথা বললেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা আছে।’ জিয়াউর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধের ‘মহানায়ক’ বলায় খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে হানিফ বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ইতিমধ্যে পাকিস্তানি ধ্যান-ধারণা অনুসরণ করে, একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে প্রতিষ্ঠা করে মুক্তিযুদ্ধের খলনায়ক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। সেই ব্যক্তিকে শুরুতে মুক্তিযুদ্ধের নায়ক হিসেবে চিহ্নিত করে মিথ্যাচার করেছেন।’ বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়েছিল—খালেদা জিয়ার এমন মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন হানিফ। তিনি বলেন, ‘শ্রদ্ধাবোধের নমুনা জাতি দেখেছে। আমাদের ২৬ হাজার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়। কিবরিয়া-আহসান উল্লাহ মাস্টারদের প্রাণ দিতে হয়েছে।’ ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পরপরই দেশের সমস্যা শুরু হয়েছে—খালেদা জিয়ার এই মন্তব্যের বিষয়ে হানিফ বলেন, ‘সাংবিধানিকভাবে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করা হয়েছে। তারা কী কারণে নির্বাচনে আসেনি, সেটা দেশবাসীর কাছে পরিষ্কার। হাইকোর্টের নির্দেশে জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ায় তারা আসতে পারবে না বলে বিএনপি নির্বাচনে আসেনি।’ পেট্রলবোমা সরকারের লোকজন ছুড়ছে, খালেদা জিয়ার এমন অভিযোগের বিষয়ে হানিফ বলেন, ‘পেট্রলবোমাসহ এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক ছাত্রদল, শিবির, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মী ধরা পড়েছে। এর পরও কী তিনি বলবেন তারা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত না। সব হত্যার দায় খালেদা জিয়াকে বহন করতে হবে। হত্যা ও নাশকতার দায় থেকে বেগম জিয়ার রেহাই পাওয়ার উপায় নাই।’ সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
No comments:
Post a Comment