Thursday, March 19, 2015

কলেজের মাটির নিচে অস্ত্র, নালায় বিস্ফোরক:প্রথম অালো

চট্টগ্রামের দুটি সরকারি কলেজে সাড়ে ১৪ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে মাটি খুঁড়ে অস্ত্র, গুলি ও নালা থেকে বিস্ফোরক পাওয়ার দাবি করেছে পুলিশ। অভিযানে শিবির সন্দেহে ৮১ জনকে আটক করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটা থেকে গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ও সরকারি হাজী মুহম্মদ মুহসীন কলেজে এ অভিযান চালানো হয়। দুটি কলেজকেই শিবির ‘মিনি ক্যান্টনমেন্ট’ বানিয়ে রেখেছে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম
মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আবদুল জলিল মণ্ডল। অভিযান চলার সময় সকাল ১০টার দিকে তিনি মুহসীন কলেজে যান। সেখানে সাংবাদিকদের তিনি জানান, একে ২২-এর মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। অস্ত্র রাখার ঘটনায় শুধু ছাত্ররা নয়, কিছু শিক্ষকও জড়িত থাকতে পারেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ জেসমিন আক্তার ও মুহসীন কলেজের অধ্যক্ষ অঞ্জন কুমার নন্দী জানান, শিক্ষকেরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তাঁরা জানান, সুনির্দিষ্টভাবে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। কলেজে অভিযান চালানোর বিষয়ে পুলিশ আগে-পরে তাঁদের কিছুই জানায়নি। পুলিশের দাবি, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের সোহরাওয়ার্দী ছাত্রাবাসের পাশে মাটির কয়েক ফুট নিচ থেকে একে ২২ রাইফেল, একটি থ্রি নট থ্রি বন্দুক, তিনটি পিস্তল, তিনটি সিঙ্গেল ব্যারেল বন্দুক, একটি দোনলা বন্দুক, পাঁচটি রকেট ফ্লেয়ার, ৬১টি কার্তুজ ও ২৭টি গুলি উদ্ধার করা হয়। এসব অস্ত্র মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির দাবি করা একটি ব্যানারে মোড়ানো ছিল। এ ছাড়া ছাত্রাবাসে তল্লাশির সময় শিবিরের বিভিন্ন সাংগঠনিক কাগজপত্র ও জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়। এর আগে কলেজের সোহরাওয়ার্দী ও শেরেবাংলা ছাত্রাবাস থেকে ৭২ জনকে আটক করা হয়। তবে আটক ৭২ জনের মধ্যে অনেকেই শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন দাবি করেছেন সাংবাদিকদের কাছে। পুলিশ জানায়, সকাল সাড়ে নয়টায় মহসিন কলেজের প্রশাসনিক ভবনের ছাত্রাবাসের পাশের নালা থেকে পাঁচটি কিরিচ ও দুই কেজি গানপাউডার উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ছাত্রাবাসের একটি কক্ষ থেকে ব্লেন্ডার মেশিন, চার লিটার পেট্রল, দুই বস্তা বোতল, রক্তমাখা কাপড়চোপড় ও পাথর উদ্ধার করা হয়। নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন জানান, চট্টগ্রাম কলেজে অভিযানের খবর পেয়ে মহসিন কলেজের মুসলিম ছাত্রাবাসে থাকা শিক্ষার্থীরা পালিয়ে যায়। পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে পাহাড়ের গর্ত ও ঝোপঝাড়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকা নাজমুস সাকিব, লোকমান ফরহাদ, শাহরিয়ার সাদাত, নাসির উদ্দিন, জসিম উদ্দিন, মো. ইসমাঈল, শাহাবুদ্দিন ও মো. সরোয়ারকে আটক করে। নিজেদের শিবিরের সমর্থক দাবি করে তাঁরা সাংবাদিকদের জানান, পুলিশের ভয়ে পাহাড়ে লুকিয়ে ছিলেন। মহসিন কলেজের প্রহরী মো. ফয়সাল জানান, ছাত্রাবাস ও পাশের নালা থেকে পুলিশকে গানপাউডার, কিরিচ, পেট্রল ও বোতল উদ্ধার করতে তিনি দেখেছেন। কলেজের পাশে জামায়াতের সহযোগী সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কার্যালয়েও অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় ফেডারেশনের বায়তুলমাল সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদকেও আটক করা হয়। অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে শিবিরের কোনো নেতার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সংগঠনের প্রথম সারির নেতাদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ও মহসিন কলেজ থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় ছয় সদস্যের পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলেছে দুটি কলেজের কর্তৃপক্ষ। চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিক চৌধুরী জানান, আটক ৮১ জনের পরিচয় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সাধারণ কোনো শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়ে থাকলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ছেড়ে দেওয়া হবে।

No comments:

Post a Comment