Saturday, March 28, 2015

মির্জা আব্বাস প্রার্থী কেন:যুগান্তর

শেষ মুহূর্তে এসে সরকারের পাতা ফাঁদে পা দিল বিএনপি। হেভিওয়েট প্রার্থী খুঁজে না পাওয়ার অজুহাতে মির্জা আব্বাসের মতো একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকেই ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী হিসেবে বেছে নেয়া হল। এমন সিদ্ধান্ত দলের নেতাকর্মীদের যেমন ভাবিয়ে তুলেছে, তেমনি তৃণমূলে ক্ষোভ-অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠেছে। তাদের প্রশ্ন- মির্জা আব্বাস কেন? দলে কী আর কোনো যোগ্য প্রার্থী নেই? তারা মনে করেন, দক্ষিণ সিট
ি কর্পোরেশন নির্বাচনে মির্জা আব্বাসের মতো সব দিক দিয়ে ব্যর্থ নেতাকে প্রার্থী করার অর্থই হল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট বড় ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা প্রকারান্তরে সরকারের পাতা ফাঁদেই পা দেয়ার শামিল। ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা মনে করেন, যে নেতার বিষয়ে জনমনে দুর্নীতিবাজ হিসেবে পারসেপশন (ধারণা) রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একাধিক মামলা বিচারাধীন। যিনি ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে রাজপথের আন্দোলনে ন্যূনতম সক্ষমতা দেখাতে পারেননি। শুরু থেকেই যার বিরুদ্ধে সরকারের সঙ্গে আপস করার বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে, ঠিক সে রকম একজন ব্যক্তিকে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী করা হলে নির্ঘাত নানামুখী বিপর্যয় ডেকে আনবে। তাদের দাবি, এখনও সময় আছে। দলের শীর্ষ পর্যায়ের উচিত হবে, রাজপথের আন্দোলনে পরীক্ষিত কোনো সৎ ও যোগ্য নেতাকে ঢাকা দক্ষিণের প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দেয়া। আর সত্যিই যদি দলের মধ্যে ইমেজ সম্পন্ন কোনো শক্তিশালী প্রার্থী পাওয়া না যায় সেক্ষেত্রে সুশীল সমাজের কোনো যোগ্য প্রার্থীকেও বিএনপি সমর্থন দিতে পারে। সূত্র জানায়, বিএনপি সমর্থিত পেশাজীবীরাও সৎ, যোগ্য ও ইমেজসম্পন্ন প্রার্থীদের সমর্থন দিতে বিএনপির নীতিনির্ধারণী মহলকে অনুরোধ জানিয়েছেন। শত নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে গত সপ্তাহে নির্বাচন কমিশনে দেখা করার পর তারা সাংবাদিকদের কাছে এমন মনোভাব ব্যক্ত করে বলেন, ‘সৎ যোগ্য কাউকে বিএনপি প্রার্থী করলে তারা তাকে সমর্থন জানাবে। তবে কোনো দুর্নীতিবাজ বা সন্ত্রাসীকে তারা সমর্থন দেবে না।’ কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মির্জা আব্বাসকে প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দিয়ে বিএনপির শীর্ষ পর্যায় শত নাগরিক কমিটির বক্তব্যকে এক অর্থে প্রত্যাখ্যান করেছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, হেভিওয়েট প্রার্থী খোঁজার নামে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মির্জা আব্বাসকে সমর্থন দেয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে এমন বার্তা পৌঁছে দেয়ার পর শুক্রবার তার পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়। দুপুরে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ-হতাশা দেখা যায়। অনেকে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে নিজেকে চলমান আন্দোলন থেকে একেবারে গুটিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার কথা কয়েকজন মধ্যম সারির নেতাও যুগান্তর প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। বিশেষ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকার বেশ কয়েকজন বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নেতার সঙ্গে আলাপকালে তাদের মধ্যে চরমমাত্রায় ক্ষোভের বহির্প্রকাশ দেখা যায়। মির্জা আব্বাসবিরোধী সাদেক হোসেন খোকার সমর্থকরা জানিয়েছেন, তারা প্রকাশ্যে মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন। প্রয়োজনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাঈদ খোকনের হয়ে কাজ করবেন। তবু মির্জা আব্বাসের ন্যায় একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ও আন্দোলনে ব্যর্থ নেতার জন্য ভোট চাইতে মাঠে নামবেন না। তাদের মতে, মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ অনেকটা প্রমাণিত। বিগত জোট সরকারের সময়ে মন্ত্রী থাকাবস্থায় তার বিরুদ্ধে প্লট ও ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়ে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জনের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে দুদকে মামলাও হয়েছে। দুর্নীতির মামলায় ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় তিনি গ্রেফতারও হন। এছাড়া তারা মনে করেন, তাকে মেয়র পদে সমর্থন দেয়া হলে কর্মী-সমর্থরা প্রকাশ্যে মির্জা আব্বাসের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবে কিনা তা নিয়েও যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। দলের ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা মনে করেন, ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে চলমান আন্দোলনে সীমাহীন ব্যর্থতার ভারে মির্জা আব্বাস এমনিতেই ন্যুব্জ। উপরন্তু গত ৮১ দিনের অবরোধে কর্মীরা রাজপথে তার ছায়া পর্যন্ত দেখেনি। আর এমন একজন নেতা এখন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী হলে যা হওয়ার তাই হবে। শুধু ভোটে ভরাডুবি নয়, ২০ দলের মূল দাবিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির অনেক নেতা যুগান্তরকে জানিয়েছেন, আব্বাসকে সমর্থন দেয়া হলে জয় তো দূরের কথা ভোটের ফলাফলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটার আশংকা রয়েছে। এছাড়া ঢাকা উত্তর ও চট্টগ্রামের মেয়র প্রার্থীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সরকার সমর্থক প্রতিপক্ষ প্রার্থীরা নির্বাচনী সভা-সমাবেশে মির্জা আব্বাসের দুর্নীতির খতিয়ান তুলে ধরার সুযোগ পাবে। এতে করে দলীয় ভোটের বাইরে থাকা ভাসমান ভোটারদের সমর্থন হারাবে বিএনপি সমর্থিত তিন সিটির প্রার্থীরা। বাস্তবে তা হলে তিন সিটিতেই ভরাডুবি হতে পারে। সূত্র জানায়, নেতাকর্মী, পেশাজীবী ও সাধারণ ভোটারদের পরামর্শে মির্জা আব্বাসকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রার্থী করার বিষয়ে নেতিবাচক অবস্থানে ছিলেন বিএনপির হাইকমান্ড। এজন্য সৎ, যোগ্য ও ইমেজসম্পন্ন প্রার্থী খোঁজা হচ্ছিল। কিন্ত নানা মাধ্যমে তদবির করে দলের হাইকমান্ডকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন মির্জা আব্বাসপন্থী অনুসারীরা। এক পর্যায়ে শুক্রবার তার পক্ষে মনোনয়নপত্র কেনার সম্মতি দেয়া হয়। তবে মির্জা আব্বাস শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নামতে পারবেন কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কেননা, পুলিশের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ফৌজদারি মামলার কোনো আসামি প্রার্থী হলে এবং তিনি জামিনে না থাকলে তাকে অবশ্যই গ্রেফতার করা হবে। সঙ্গত কারণে দুর্নীতির মামলা ছাড়াও অসংখ্য ফৌজদারি মামলার আসামি মির্জা আব্বাস কিভাবে প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণা চালাবেন তা পরিষ্কার নয়। পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী তিনি ফৌজদারি মামলায় জামিনে না থাকলে তাকে গ্রেফতার হতে হবে। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন সমবায় সমিতির প্লট বরাদ্দে অনিয়মের মামলায় মির্জা আব্বাসসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিলসংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলে দিন ধার্য করা হয়েছে ২৮ এপ্রিল। বুধবার ওই পরোয়ানা তামিলসংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু কোনো প্রতিবেদন না আসায় ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. কামরল হাসান মোল্লা ফের ২৮ এপ্রিল দিন ধার্য করেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হামিদুল হাসান ১৬ ফেব্র“য়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।  

No comments:

Post a Comment