ব্রেন্ডন টেলরকে দেখা ছিল দারুণ এক অভিজ্ঞতা। ভারতীয় বোলিং আক্রমণকে সে ভোঁতা করে দিল, তাদের মনে হচ্ছিল অসহায়। তার সেঞ্চুরিতে পৌঁছানোর মুহূর্তটি এই বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা মুহূর্ত ছিল। যেমনটা শুনেছি, এটিই হয়তো জিম্বাবুয়ের হয়ে তার সর্বশেষ ইনিংস। টেলর তার ইনিংসটির জন্য এর চেয়ে উপযুক্ত সময় ও মঞ্চ আর পেত না। দেশবাসীকে মনে রাখার মতো কী একটা উপহারই না দিল! যেকোনো পর্যায়েই সেঞ্চুরি করাটা ব্যাটসম্যানে
র জন্য অনেক আনন্দের। তাকে এ জন্য সুশৃঙ্খল হতে হয়, কারণ বোলাররা থামানোর জন্য সব চেষ্টাই করে। টেলর টুর্নামেন্টের অন্যতম সুসংগঠিত বোলিং আক্রমণের বিপক্ষেই খেলেছে। তার ব্যাটিং অনেক সাবলীল। টেলর রান করার সুযোগ হাতছাড়া করেনি। সে মাঝ ব্যাট দিয়েই খেলেছে। এখনকার দিনে যেখানে শক্তির প্রদর্শনী অনেক বেশি, এমন দৃশ্য বড় প্রশান্তির! টেলরের স্পিনের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক মানসিকতা আমার ভালো লেগেছে। কাট, সুইপ, রিভার্স সুইপ—বোলারদের ধাঁধায় ফেলে দিয়েছিল। ব্যাটসম্যান অনেক দাপটে খেললে বোলাররা ছন্দ হারিয়ে ফেলে। তবে টেলরের ব্যাটিংয়ের দৃঢ়তা ভারতীয় বোলারদের নিশ্চয়ই অবাক করেছে। সে বলের লেংথ দ্রুতই বুঝে ফেলে, শট খেলার জন্য তাই অনেক জায়গা পায়। বলকে যে খুব জোরে মারে, তা নয়। বরং ফাঁকা জায়গা খুঁজে বের করে। তার ইংল্যান্ড যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে হয়তো সমালোচনা আছে। তবে মনে রাখা দরকার, সে নিজের অগ্রাধিকারকে গুরুত্ব দিয়েছে। জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলাটা ছিল অনেক আবেগের, তবে পরিবারকে নিয়েও তো ভাবতে হবে। জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে তার অবদান অনেক, কিন্তু খেলা আর পরিবারের মধ্য থেকে তাকে একটি বেছে নিতে হয়েছে। নকআউট পর্বের আগে ভারতীয় স্পিনাররা যেন একটা সতর্কবার্তা পেল। ভালোই। তবে তেমন কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষারও দরকার নেই। নিউজিল্যান্ডের মাঠে বোলিং করাটা সহজ নয়। এটা একটা চ্যালেঞ্জ। স্পিনারদের বেশি রান দেওয়া নিয়ে তাই খুব একটা কথা বলতে চাই না। তবে বিশ্বকাপে ভারতের জন্য সবচেয়ে ভালো বিষয়টা হলো মোহিত শর্মার বোলিং। উমেশ যাদব ও মোহাম্মদ শামিকেই বোলিংয়ের চাবিকাঠি মনে হচ্ছিল। মোহিত তৃতীয় পেসার হিসেবে নিজের জায়গাটা পাকা করে নিয়েছে পেশাদারির সঙ্গে। উমেশ ও শামিকে বড় সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে। মোহিতের যে ব্যাপারটা সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে, তা হলো সে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী বল করা। কেউ যখন দলে নিজের অবস্থানটা বুঝতে পারে, তখন তা ভালোই হয়। তবে ওর দুর্বলতা, বল করার সময় মাথা নিচু রােখ। আমারও এই সমস্যা ছিল। পরে আমি সেটি কাটিয়ে উঠেছি। মোহিতকেও এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সুরেশ রায়না ও মহেন্দ্র সিং ধোনির জুটি ভারতের আসল কাজটা করেছে। রায়নার ইনিংসটা ছিল অসাধারণ, ধোনির ক্রিজে সময় কাটানোও ভারতের উপকারই করবে। দুজনেরই আত্মবিশ্বাস বাড়বে। গ্রুপ পর্বের শেষটা জয় দিয়ে শেষ হওয়াটাই বলে দেয়, ভারত সঠিক সময়েই চূড়ায় উঠছে। (পিচ সলিউশন)।
No comments:
Post a Comment