Tuesday, April 21, 2015

প্রাণহানি বন্ধে ইইউর অঙ্গীকার:প্রথম অালো

ভূমধ্যসাগরে নৌযানডুবিতে শত শত অভিবাসীর প্রাণহানির ঘটনায় গতকাল সোমবার লুক্সেমবার্গে জরুরি বৈঠক করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা। বৈঠকে ভূমধ্যসাগর এলাকার অভিবাসী সংকট লাঘবে ১০ দফাসংবলিত এক কর্মপরিকল্পনা পেশ করা হয়। বৈঠকে ইইউ মন্ত্রীরা সংস্থার সহায়তা কার্যক্রম বৃদ্ধি ও পাচারকারীদের ধরার মাধ্যমে অভিবাসীদের প্রাণহানি বন্ধের প্রচেষ্টা জোরদারের অঙ্গীকার করেন। বৈঠকের আগে ওই ঘ
টনার জন্য সামষ্টিকভাবে ইউরোপকেই দায়ী করে চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস’। তা ছাড়া, জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনও অভিবাসী সংকট মোকাবিলায় ইউরোপকে প্রচেষ্টা জোরদারের আহ্বান জানান। খবর এএফপি, বিবিসি ও রয়টার্সের। লিবিয়া থেকে ইউরোপ অভিমুখে রওনা হওয়া নৌযান গত শনিবার মধ্যরাতে ভূমধ্যসাগরে ডুবে যায়। ৭০ ফুট লম্বা মাছ ধরার নৌযানটিতে প্রায় এক হাজার আরোহী ছিল বলে জীবিত উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা জানান। আগের খবরে বলা হচ্ছিল, নৌযানটিতে কমপক্ষে ৭০০ অভিবাসী ছিল। আরোহীদের মধ্যে মাত্র ২৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। আর ২৪ জনের মরদেহ গতকাল উদ্ধার করা হয় বলে ইতালির কোস্টগার্ড জানিয়েছে। ইতালির একটি জাহাজে মরদেহগুলো মাল্টার রাজধানী ভ্যালেট্টায় নিয়ে যাওয়া হয়। উদ্ধার অভিযান গতকালও চলছিল। এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল লুক্সেমবার্গে ওই জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থমাস দ্যঁ মেইজিয়েরে বলেন, ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় অভিবাসী সংকট কমাতে ওই বৈঠকে জরুরি ভিত্তিতে তৎপরতা শুরু বিষয়ে ১০ দফা পরিকল্পনা পেশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চলমান অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান জোরালো করা, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে এ সংস্থার সীমান্ত রক্ষা অভিযানের অর্থায়ন ও টহল জাহাজের সংখ্যা দ্বিগুণ করার মতো বিষয়। গ্রিনিচ মান সময় গতকাল বেলা একটায় শুরু হয় বৈঠক। এটি মূলত পূর্বনির্ধারিত ছিল। এতে বিশেষ করে যুদ্ধপীড়িত লিবিয়ার পরিস্থিতির ওপরে মূল আলোকপাত করার কথা ছিল। লিবিয়া পরিস্থিতির কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে নৌপথে ইউরোপে অভিবাসী যাওয়ার হার অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীদের মৃত্যুর সর্বশেষ এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে পরিবর্তন আনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদেরও বৈঠকে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকের আগে ইইউর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান ফেডারিকা মোঘারিনি বলেছিলেন, ‘এই ট্র্যাজেডির পর ইইউর আর কোনো অজুহাত নেই। ইইউ ও এর সদস্যদেশগুলোকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে ভূমিকা পালনে আমাদের একটি রাজনৈতিক ও নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে। ভূমধ্যসাগর আমাদেরই একটা সাগর। ইউরোপীয় হিসেবে আমাদের একসঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’ ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাওলো জেনতিলোনি বলেন, ‘ইউরোপের সুনাম এখন ঝুঁকিতে। আমি সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস বলে আসছি, ইউরোপকে আরও কিছু করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন বাস্তবতা আমাদের মুখে আঘাত হেনেছে।’ নিজ নিজ দেশের অভিবাসীবিরোধী ভোটারদের মন রাখতে ইউরোপের রাজনীতিকেরা আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের আশ্রয়প্রার্থীদের ত্যাগ করছেন বলে অভিযোগ করে আসছে বিভিন্ন ত্রাণ ও মানবাধিকার গ্রুপ। ইউরোপ ‘সামষ্টিকভাবে দায়ী’: ভূমধ্যসাগরে শত শত আশ্রয়প্রার্থীর মৃত্যুর জন্য গতকাল ইউরোপকে সামষ্টিকভাবে দায়ী করেছে ‘ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস’। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও ফ্রান্সের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বার্নার্ড কৌচনার প্যারিসের একটি পত্রিকাকে বলেন, ‘বিপদগ্রস্ত একজনকেও সহায়তা করা যায়নি। এর দায় ইউরোপের। এটা আমাদের জন্য একটা লজ্জা।’ গ্রিসের কাছে তিন অভিবাসীর মৃত্যু: এদিকে, গ্রিসের রডস দ্বীপের কাছে গতকাল এক দুর্ঘটনায় শিশুসহ তিন অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির উপকূলরক্ষী বাহিনী। তারা জানিয়েছে, নৌকাটি থেকে ৯০ জনের বেশি অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩০ জন হাসপাতালে রয়েছে। যে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে, তারা পানিতে ডুবে মারা গেছে।

No comments:

Post a Comment