Thursday, April 9, 2015

নাশকতার মামলায় আনসার কমান্ডার গ্রেপ্তার!:প্রথম অালো

কুমিল্লায় নাশকতাকারী সন্দেহে আনসারের এক প্লাটুন কমান্ডারকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের সময় মো. জুয়েল নামের এই প্লাটুন কমান্ডার আদর্শ সদর উপজেলার রেললাইনের ১৩ নম্বর বানাশুয়া পয়েন্টে টহলরত ছিলেন। তাঁকে গ্রেপ্তার নিয়ে আনসার সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী বলছে, শহরের কান্দিরপাড়ে দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় অগ্নিসংযোগের
ঘটনায় করা মামলায় জুয়েলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অথচ ওই অগ্নিসংযোগের ঘটনার সময় তিনি বানাশুয়া পয়েন্টেই দায়িত্বরত ছিলেন। তাঁর দপ্তরকেও বিষয়টি জানানো হয়নি। আরেক প্লাটুন কমান্ডারের বাড়িতে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন খোঁজখবর নেওয়ায় তিনি মানসিক নির্যাতনে আছেন। এ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালনে আনসার সদস্যরা অনীহা দেখাচ্ছেন। বিষয়টি আনসারের কুমিল্লা জেলা কমান্ড্যান্ট লিখিতভাবে জেলা পুলিশ সুপারকেও জানিয়েছেন। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার পটভূমিতে পুলিশের বিরুদ্ধে নিরীহ মানুষকে আটক ও গ্রেপ্তার-বাণিজ্যের অভিযোগ করে আসছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। এ রকম অবস্থায় কুমিল্লায় এ ঘটনা ঘটল। জুয়েলকে গত ১২ মার্চ দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বানাশুয়া পয়েন্ট থেকে নিয়ে যান ছত্রখিল পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আনিছুর রহমান। তাঁকে গত ৯ মার্চ সন্ধ্যায় কোতোয়ালি মডেল থানার লাকসাম রোডে ওই অগ্নিসংযোগের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১৩ মার্চ আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠান। জুয়েলের জামিনের জন্য চেষ্টা করছেন আনসার কর্মকর্তারা। জুয়েলের বাড়ি বানাশুয়া গ্রামে। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালকসহ পদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তা গত মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দেখা করে ঘটনাটি জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আনসার সূত্র জানায়, সাক্ষাৎকালে তাঁরা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে রেললাইন রক্ষার মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালনকালে একজন প্লাটুন কমান্ডারের বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা মামলা কোনোভাবেই কাম্য নয়। মিথ্যা মামলা করার কারণে রেললাইনে দায়িত্ব পালনে অন্য আনসার সদস্যরা অনীহা প্রকাশ করেছেন। আরেক প্লাটুন কমান্ডারের বাড়িতে গোয়েন্দা পুলিশ পাঠিয়ে তাঁকে মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী দুই-এক দিনের মধ্যে বিষয়টি সুরাহার আশ্বাস দেন। মন্ত্রণালয়ে তখন উপস্থিত সূত্র জানায়, প্রতিমন্ত্রী ওই সময় কুমিল্লার পুলিশ সুপারকে বিষয়টি সুরাহা করতে বলেন। জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘জামায়াত সন্দেহে তাঁকে (জুয়েল) আটক করা হয়েছে বলে শুনেছি। হতে পারে সে জামায়াত, নাশকতাকারী, কিন্তু দায়িত্বরত অবস্থায় একজন কর্মকর্তাকে এভাবে আটক করা যায় না।’ তিনি বলেন, ‘কুমিল্লার পুলিশ সুপার আনসারের প্রধান, জেলা কমান্ড্যান্ট বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানাতে পারতেন। বিষয়টি সুরাহা করে দায়ী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছি।’ আনসার সূত্র জানায়, এসআই আনিছুর ১২ মার্চ রাত দেড়টায় রেললাইনের বানাশুয়া পয়েন্টে গিয়ে দায়িত্বরত প্লাটুন কমান্ডার জুয়েলকে সব আনসার সদস্যকে একত্রিত করতে বলেন। এতে সব আনসার সদস্য ও রেলওয়ের ওয়েম্যান আলমগীর হোসেন একত্রিত হলে জুয়েলকে এক ব্যক্তির বাড়ি দেখানোর কথা বলে আনিছুর সঙ্গে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর কমান্ডার হাসানকে কুমিল্লা রেলস্টেশনে জুয়েলের জন্য শীতের কাপড় পাঠাতে বলা হয়। হাসান কারণ জানতে চাইলে ওই এসআই কিছু জানাতে অপারগতা জানান। কোতোয়ালি থানায় করা মামলা অনুযায়ী, কান্দিরপাড়ে ওই দুটি অটোরিকশায় অগ্নিসংযোগ করা হয় ৯ মার্চ সন্ধ্যা সোয়া সাতটায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে জুয়েল তিনজন আনসার সদস্যসহ ৯ মার্চ ভোর ছয়টা থেকে ১০ মার্চ ভোর ছয়টা পর্যন্ত বানাশুয়া পয়েন্টে রেললাইনের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। হাজিরা রেজিস্টারে এর প্রমাণ রয়েছে। জুয়েলকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় কুমিল্লার পুলিশ সুপারকে পাঠানো এক চিঠিতে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর জেলা কমান্ড্যান্ট বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘অপারেশন রেলরক্ষা’-এর অধীনে রেললাইন রক্ষার মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালনকালে একজন প্লাটুন কমান্ডারের বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা মামলা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এর আগে এসআই আনিছুর ‘রেললাইনে ডিউটি করলে আনসারদের বিভিন্ন মামলায় আসামি করে ধরে নিয়ে যাব ও মারধর করব’ বলে হুমকি দেন। হুমকির বিষয়টি আনসার সদস্যসহ রেলওয়ে কর্মচারী আলমগীর হোসেন আবেদনে উল্লেখ করেছেন। চিঠিতে বলা হয়, কুমিল্লার ৭০টি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে মোতায়েন করা আনসারের ৫৬০ জন প্লাটুন কমান্ডার ও সদস্যের পুলিশি প্রতিবেদন জেলা কমান্ড্যান্টের দপ্তরে পাঠাতে পুলিশ সুপারকে অনুরোধ জানানো হলেও তা এখনো পাঠানো হয়নি। জুয়েল যদি নাশকতায় জড়িত থাকতেন তবে তা এই দপ্তরকে জানানো প্রয়োজন ছিল। দপ্তরকে কিছু না জানিয়ে গ্রেপ্তারের ১০ দিন পর এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন কেন পাঠানো হলো তা বোধগম্য নয়। তাঁকে বিনা দোষে গ্রেপ্তার করে না জানানোর ফলে ওই পদটি ১০ দিন ধরে শূন্য ছিল, এতে রেললাইনে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা, নাশকতা ঘটতে পারত। চিঠিতে এ অবস্থায় রেললাইনের নিরাপত্তার স্বার্থে এসআই আনিছুরের বিরুদ্ধে একজন আনসার সদস্যকে বিনা দোষে গ্রেপ্তার করার বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। আনসারের কুমিল্লার কমান্ড্যান্ট আশীষ কুমার ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, প্লাটুন কমান্ডার জুয়েলকে কর্মস্থল থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ নেই। এতে অন্যরা দায়িত্ব পালনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। এই দায়িত্ব পালনের জন্য তাঁরা মাত্র ৩০০ টাকা পান। তিনি কলেন, ‘অফিস প্রধান হিসেবে পুলিশ সুপার এ ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না। বিষয়টি আমাদের জানানো হলে ওই প্লাটুন কমান্ডারের বিরুদ্ধে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতাম। আরেকজন প্লাটুন কমান্ডার হাসানের বাড়িতে প্রায়ই গোয়েন্দাদের একটি দল গিয়ে তিনি কোথায় কী দায়িত্ব পালন করেন, কখন ফেরেন এসব জানতে চায়। এটা কি ঠিক হচ্ছে?’ এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লার পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, পুরো বিষয়টি ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে পারবেন না বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।

No comments:

Post a Comment