পুলিশের অমানুষিক নির্যাতনের শিকার প্রথম আলোর বাউফল প্রতিনিধি কারাবন্দী মিজানুর রহমানের জামিন আবেদন আবার নামঞ্জুর করেছেন আদালত। চাঁদাবাজির একটি ‘মিথ্যা’ মামলায় জামিনের এ আবেদন গতকাল বুধবার নামঞ্জুর করা হয় বলে জানান আইনজীবী। এর আগে একই মামলায় নিম্ন আদালত থেকে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে আদেশ দেওয়া হয়েছিল। ওই আদেশের বিরুদ্ধে মিজানুরের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন আবেদনের ওপর গতকাল শুনানি গ্রহণ করেন পটুয়াখালী
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক বিমল চন্দ্র সিকদার। এ ছাড়া পুলিশকে মারধর ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশের সাজানো অপর একটি মামলার জামিনের ওপর শুনানির তারিখ এগিয়ে আনতে করা একটি আবেদনও নামঞ্জুর করেছেন আদালত। মিজানুরের আইনজীবী লুৎফর রহমান জানান, চাঁদাবাজির অভিযোগে করা মামলাটি ‘মিথ্যা মামলা’। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর প্রথম আলোয় ‘তিন হাজার একর খাসজমি আ.লীগ নেতাদের দখলে?’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশের জেরে ১৭ ডিসেম্বর মামলাটি করেন বাউফলের চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলম সিকদার। পটুয়াখালীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আমলি-২ আদালতে করা ওই মামলায় বাউফল থানার পুলিশ গত ১৪ মার্চ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। ৩০ মার্চ এ আদালতের বিচারক ফাইজুর রহমান প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে মিজানুরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে ২ এপ্রিল আদালত তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে ৬ এপ্রিল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিজানুরের অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদন করে মিস কেস করা হলে আদালত গতকাল জামিনের ওপর শুনানি শেষ তা নামঞ্জুর করেছেন। এদিকে পুলিশকে মারধর ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার আরেক অভিযোগে গত ১৭ মার্চ মিজানুরকে গ্রেপ্তার করে বাউফল থানার পুলিশ। থানায় রাতভর নির্যাতন করার পর পরদিন সাজানো মামলায় ফাইজুর রহমানের আদালতের মাধ্যমে তাঁকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। ওই মামলায় ২২ মার্চ পটুয়াখালীর দ্বিতীয় বিচারিক হাকিম এ এস এম তারিক শামসের আদালতে মিজানুরের জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হলে আদালত তা নামঞ্জুর করেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন আবেদনের ওপর দুই দফা শুনানির পর জেলা ও দায়রা জজ বিমল চন্দ্র সিকদার আবার ১৫ এপ্রিল শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছেন। এই তারিখ এগিয়ে আনতেই একই আদালতে ৭ এপ্রিল আবেদন করা হয়। আইনজীবী লুৎফর রহমান জানান, মিজানুরের শারীরিক অসুস্থতা ও মানবিক দিক বিবেচনা করে এবং হাইকোর্টের রুলের কপি দাখিল সাপেক্ষে তারিখটি এগিয়ে আনার আবেদন করা হলে গতকাল শুনানি শেষে সেটিও নামঞ্জুর করেন আদালত। বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি: মিজানুরের বাবা আবদুস সালাম তাঁর ছেলের ওপর পুলিশি নির্যাতনের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, নির্যাতনের পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তবে থানা-পুলিশ ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কিছু নেতা স্থানীয় লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে শেখানো বুলি উপস্থাপন করিয়েছেন।
No comments:
Post a Comment