Tuesday, April 28, 2015

অভিযোগপত্র থেকে পাঁচ আসামিকে বাদ দেওয়ায় ক্ষোভ:প্রথম অালো

নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুনের মামলার এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামিকে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার ও জেলা আইনজীবী সমিতি। সাত খুনের ওই ঘটনার এক বছর পূরণ উপলক্ষে গতকাল সোমবার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় এক মানববন্ধনে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা এবং এক স্মরণসভায় আইনজীবী সমিতি এ ক্ষোভ প্রকাশ করে। পরিবার ও আইনজীবী সমিতি অবিলম্বে
ওই পাঁচ আসামিকে অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা ও মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। এদিকে হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে ৩০ এপ্রিল সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত আদালতে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি। নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের ভাই আব্দুস সালাম বেলা ১১টার দিকে আয়োজিত মানববন্ধনে বলেন, ‘অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেওয়া এজাহারভুক্ত পাঁচজন আসামি-ই সাত খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত। আমরা এই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন দেব। আমরা প্রধান আসামি নূর হোসেনকে দেশে ফেরত এনে বিচারের মুখোমুখি করারও জোর দাবি জানাচ্ছি।’ নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের বলেন, ‘অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেওয়া পাঁচ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।’ এদিকে গতকাল দুপুরে জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আয়োজিত স্মরণ সভায় আইনজীবী সাখাওয়াৎ হোসেন খান বলেন, ‘এ রকম একটি মামলায় পাঁচজনকে অব্যাহতি দেওয়ায় মামলার তদন্ত নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। নূর হোসেনকে ফেরত আনা হলেই যে পাঁচজনকে মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, হত্যাকাণ্ডে তারা সম্পৃক্ত কিনা তা জানা যাবে।’ তবে সভায় অতিরিক্ত সরকারি কেঁৗসুলি (এপিপি) ফজলুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘ ১১ মাস তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্তদেরই আসামি করেছেন। অযথা কাউকে এই মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়নি।’ এদিকে খুন হওয়া কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের পৈতৃক বাড়ি সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজিতে মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কুলখানি ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। গত বছরের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার লামাপাড়ায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন, সহযোগী মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, মনিরুজ্জামানের ব্যক্তিগত গাড়ির চালক জাহাঙ্গীর, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকার ও তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ির চালক ইব্রাহিমকে অপহরণ করা হয়। ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল ও ১ মে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাঁদের লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর নিহত নজরুলের শ্বশুর শহিদুল ইসলাম অভিযোগ তোলেন যে টাকার বিনিময়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেনের পরিকল্পনায় র্যা ব তাঁদের অপহরণ করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। পরে এ ঘটনায় নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ফতুল্লা মডেল থানায় নূর হোসেনসহ বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। অন্য দিকে নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় আরেকটি মামলা করেন। এ ঘটনা নিয়ে সারা দেশে ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় র্যা বের তিন কর্মকর্তা লে কর্নেল (অব্যাহতি) মোহাম্মদ তারেক সাঈদ, মেজর (অব্যাহতি) আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার(অব্যাহতি) এম এম রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। ৮ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ মণ্ডল দীর্ঘ ১১ মাসের তদন্ত শেষে আদালতে ভারতের কারাগারে আটক নূর হোসেন, রযাত বের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেন। পরে অভিযোগপত্র থেকে ১৬ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের দাবি—অব্যাহতি দেওয়া ১৬ জনের মধ্যে পাঁচজনই এজাহারভুক্ত। এ ঘটনায় বর্তমানে র্যা বের তিন কর্মকর্তা ও ১৭ সদস্যসহ ২২ জন কারাগারে আটক আছেন। আগামী ১১ মে অভিযোগপত্র গ্রহণের দিন ধার্য করেছেন আদালত।

No comments:

Post a Comment