Wednesday, April 22, 2015

সংগ্রহ ১২৭ কোটি টাকা, বিতরণ ১৯ কোটি:প্রথম অালো

সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য জমা তহবিলের অর্থ বণ্টনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার অভাব ও দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দুর্নীতিবিরোধী এই সংস্থাটি বলেছে, রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ প্রায় ১২৭ কোটি টাকা হলেও এখনো অব্যবহৃত রয়েছে প্রায় ১০৮ কোটি টাকা। দেওয়া হয়েছে মাত্র ১৯ কোটি টাকা। তৈরি পোশাক খাত
ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গৃহীত পদক্ষেপের ওপর এক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে টিআইবি এ কথা বলেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে নিজস্ব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে টিআইবির এই প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন টিআইবির সহকারী কর্মসূচি ব্যবস্থাপক নাজমুল হুদা। পরে এ নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল ও নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। গত বছরের এপ্রিল থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত তথ্য নিয়ে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। এর আগে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর টিআইবি এ ধরনের আরও দুটি গবেষণা প্রতিবেদন করেছিল। এবারের গবেষণাটি আগেরটির হালনাগাদ প্রতিবেদন। টিআইবি বলছে, গত এক বছরে পোশাক খাতের সুশাসন নিশ্চিত করতে নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক। ২০১৪-১৫ সালে ৫৫টি (নতুন একটিসহ) বিষয়ে ৮০টি চলমান উদ্যোগের বাস্তবায়ন বিভিন্ন পর্যায়ে থাকলেও বাকি আটটি বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। চলমান ৮০টি উদ্যোগের বাস্তবায়ন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে, ৪৫ শতাংশ প্রত্যাশিত গতিতে চলমান, ধীরগতিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে ১৫ শতাংশ এবং ২৫ শতাংশ স্থবির। পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকার চিত্র তুলে ধরা হয়। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, রানা প্লাজায় ‘ডোনার’স ট্রাস্ট ফান্ডে ক্রেতা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠন থেকে পাওয়া অর্থের পরিমাণ প্রায় ১৯ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার। এ ছাড়া প্রধানম ন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে প্রদানের পরিমাণ প্রায় ২৪ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ ডলার (প্রায় ১২৭ কোটি টাকা)। এর মধ্যে অব্যবহৃত প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার (১০৮ কোটি টাকা)। প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে, যাঁরা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন তাঁদের তালিকা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। পরিমাণ নির্ধারণে ও বণ্টনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার অভাবের অভিযোগ আছে। এ ছাড়া বণ্টনে দীর্ঘসূত্রতা আছে। ট্রাস্ট ফান্ড পরিচালনা ব্যয়-সম্পর্কিত তথ্যও প্রকাশিত হয়নি। এ বিষয়ে টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল বলেন, এই টাকা রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পাওনা। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা যা পাওয়ার তা পাচ্ছেন না। টিআইবি তাদের সুপারিশে বলেছে, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ পাওয়া ব্যক্তিদের তালিকা ও ক্ষতিপূরণের পরিমাণ প্রকাশ এবং রানা প্লাজা ও তাজরীন দুর্ঘটনায় দায়ের করা বিভিন্ন মামলায় দ্রুত বিচার ও ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। বন্ধ ২২০ কারখানা: প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রম অধিকার ও কর্মপরিবেশের মান উন্নয়নের প্রয়োজনে অধিকাংশ ক্রেতা (বায়ার) বর্ধিত উৎপাদন খরচের পরিপ্রেক্ষিতে মূল্য বাড়াতে সম্মত হলেও খরচ বৃদ্ধির পরোক্ষ প্রভাব হিসেবে গত এক বছরে ৩০ শতাংশ কার্যাদেশ বাতিল হয়েছে। এ ছাড়া কার্যাদেশ বাতিল ও কমপ্লায়েন্স ঘাটতির অজুহাতে ২২০টি মাঝারি ও ক্ষুদ্র আকারের কারাখানা বন্ধ হয়েছে। প্রায় এক থেকে দেড় লাখ শ্রমিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন। আগের বছরের তুলনায় কারখানা বন্ধের হার ৩৬০ শতাংশ ও শ্রমিক চাকরিচ্যুতি হওয়ার হার ২০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ব্যাপারে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এখানে অন্যান্য প্রভাবও থাকতে পারে। ক্রেতা, সরকার ও তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাব-কন্ট্রাক কারখানার জরিপ করা ও কমপ্লায়েন্স উন্নয়নে অঙ্গীকার করলেও দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। টিআইবির আশঙ্কা এ অবস্থা চলতে থাকলে এ খাতে কর্মরত প্রায় সাত লাখ শ্রমিকের চাকরিচ্যুত হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হবে। ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনে ২০ হাজার পর্যন্ত টাকা: টিআইবি বলছে, ট্রেড ইউনিয়নের কার্যক্রম বৃদ্ধি পেলেও ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের আবেদন গ্রহণে ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়মবহির্ভূতভাবে দিতে হয়। এ ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, শ্রম পরিদপ্তরের কর্মকর্তারা এই টাকা নিচ্ছেন। বিজিএমইএর ‘পকেট’ ট্রেড ইউনিয়ন বা ‘ইয়েলো’ ট্রেড ইউনিয়নের কার্যক্রম বৃদ্ধি পাচ্ছে মন্তব্য করে টিআইবি বলছে, রানা প্লাজা দুর্ঘটনা-পরবর্তী ১৪২টি ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনে বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগও আছে। টিআইবির পর্যবেক্ষণ হলো, নিয়মানুসারে শ্রমিকদের মাসিক হাজিরা ও বেতন রেজিস্টার বিজিএমইএতে নিয়মিত পাঠানো হচ্ছে না। রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর গৃহীত এই উদ্যোগ সাময়িকভাবে বাস্তবায়িত হলেও বর্তমানে বন্ধ আছে। কিছু কিছু কারখানায় এক ঘণ্টা মজুরিবিহীন অতিরিক্ত কাজ করানোর অভিযোগ আছে। রাতে কাজের ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ১০ সুপারিশ: প্রতিবেদনে পোশাক কারখানার জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন, ‘পাবলিক সেক্টর বোর্ড’ গঠন, অংশীজনের অংশগ্রহণে একটি তহবিল গঠন, শ্রমিক তথ্যভান্ডার, সব ক্রেতাকে তাঁদের ওয়েবসাইটে নিজ নিজ বাংলাদেশি ব্যবসায়িক অংশীদার কারখানার নাম প্রকাশসহ ১০টি সুপারিশ করা হয়।

No comments:

Post a Comment