Thursday, April 2, 2015

ঢাকায় মিন্টু-পিন্টুর প্রার্থিতা বাতিল:প্রথম অালো

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির দুই নেতার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে গেছে। এঁরা হচ্ছেন উত্তরে আবদুল আউয়াল মিন্টু ও দক্ষিণে নাসির উদ্দীন আহম্মেদ পিন্টু। এর মধ্যে আবদুল আউয়াল মিন্টুর পক্ষে বিএনপির সমর্থন প্রায় চূড়ান্ত ছিল। এই দুজনসহ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে মেয়র পদের মোট পাঁচ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন সংশ্লিষ্ট দুই রিটার্নিং কর্মকর্তা। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের প্রথম
দিন গতকাল বুধবার তাঁদের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। এখন ঢাকার দুই সিটিতে বৈধ মেয়র প্রার্থীর সংখ্যা ৪২। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে মেয়র পদে ১২ জনের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। আয়কর সনদ জমা না দেওয়ায় মেয়র প্রার্থী ফোরকান চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। এ ছাড়া সাধারণ ওয়ার্ডে বর্তমান দুই কাউন্সিলরসহ আটজন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে চার প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রার্থীরা সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে তিন দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন। বিভাগীয় কমিশনার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি করবেন। ঢাকায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে তাঁর প্রার্থিতার সমর্থনকারী আবদুর রাজ্জাক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ভোটার না হওয়ায়। আর বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দীন আহম্মেদ পিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয় তাঁর হলফনামায় মামলাসংক্রান্ত তথ্য যথাযথভাবে উল্লেখ না করায়। তিনি বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। এখন দক্ষিণ সিটিতে সরকারি দল-সমর্থিত একক মেয়র প্রার্থী রইলেন সাঈদ খোকন। ওই আসনে বিএনপির প্রার্থী মির্জা আব্বাস হলেও আবদুস সালাম ও আসাদুজ্জামান রিপনও আছেন। উত্তর সিটি করপোরেশনে আবদুল আউয়াল মিন্টুর মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় দক্ষিণ নিয়ে বিএনপি বিশেষ মনোযোগী হবে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। সেখানে মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ালের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। মির্জা আব্বাসের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারোয়ার মোরশেদ পুলিশের উদ্দেশে বলেন, এই মনোনয়নপত্র গ্রহণের বিরুদ্ধে কারও কোনো আপত্তি আছে? জবাবে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাঁর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। তখন রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, আদালত কি তাঁকে ফেরার ঘোষণা করেছেন? এ প্রশ্নে পুলিশ নিশ্চুপ থাকলে রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করেন। গতকাল সকালে আগারগাঁওয়ের স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটে ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহ আলম মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করে মেয়র পদে ২১ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৯ জনকে বৈধ ঘোষণা করেন। একই সময় মহানগর নাট্যমঞ্চে ঢাকা দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারোয়ার মোর্শেদ ২৬ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ২৩ জনকে বৈধ ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ সারাহ বেগম কবরীর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহ আলম আয়করসংক্রান্ত সমস্যা থাকলে তা দেখার জন্য আয়কর বিভাগের প্রতিনিধিকে সহায়তা করার আহ্বান জানান। পরীক্ষা করে সমস্যা না পাওয়ায় কবরীর প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করা হয়। যেভাবে মিন্টুর মনোনয়ন বাতিল হলো: মিন্টুর মনোনয়নপত্র হাতে নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা জানতে চান প্রার্থী, প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারী উপস্থিত আছেন কি না। তখন মিন্টুর ছেলে তাফসির আউয়াল জানান, প্রস্তাবকারী হিসেবে তিনি এবং সমর্থনকারী আবদুর রাজ্জাক উপস্থিত আছেন। তখন রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, এখানে একটা সমস্যা আছে। সমর্থনকারী আবদুর রাজ্জাক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভোটার নন। জবাবে আবদুর রাজ্জাক বলেন, তিনি উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ভোটার। এ সময় তিনি তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দেন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে। তখন রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টর উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় নয়। এটি হরিরামপুর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। কমিশন নিশ্চিত হয়েছে, আবদুর রাজ্জাক সিটি করপোরেশন এলাকার ভোটার নন। এই পর্যায়ে পুলিশের প্রতিনিধি মিরাশ উদ্দিন রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে বলেন, মিন্টুর বিরুদ্ধে গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধের ১২টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি মামলায় তিনি জামিনে আছেন। আর সাতটি মামলায় তিনি তদন্তাধীন ফেরার। পুলিশ তাঁকে খুঁজছে। আইনের চোখে তিনি পলাতক। এ সময় মিন্টুর পক্ষে একজন দাঁড়িয়ে বলেন, আদালতের ওয়ারেন্ট ছাড়া কেউ পলাতক হতে পারেন না। আর দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি প্রার্থী হওয়ার যোগ্য। এরপর রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহ আলম পুলিশকে তাঁদের বক্তব্য লিখিতভাবে জমা দেওয়ার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন করেন, ওয়ারেন্ট ছাড়া কীভাবে মিন্টু পলাতক হন? জবাবে পুলিশের প্রতিনিধি বলেন, পুলিশের ক্ষমতা আছে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করার। এ পর্যায়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা পরে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে জানিয়ে অন্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শুরু করেন। সবশেষে রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, ‘প্রার্থীদের যোগ্যতা-অযোগ্যতাসংক্রান্ত বিধি অনুসারে প্রার্থী, প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারী—সবার নির্দিষ্ট সিটি করপোরেশন এলাকার ভোটার হওয়া বাধ্যতামূলক। এখানে আমার কিছু করার নেই। আবদুল আউয়াল মিন্টুর আবেদনপত্রটি অবৈধ ঘোষণা করা হলো। এর বিরুদ্ধে তিন দিনের মধ্যে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিল করা যাবে।’ এ সময় আবদুল আউয়াল মিন্টুর একজন আইনজীবী বলেন, কারিগরি ভুল হয়েছে। ভোটারদের আকাঙ্ক্ষার কথা বিবেচনা করে মিন্টুর প্রার্থিতা বৈধ করা হোক। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা তা নাকচ করে দেন। পরে মিন্টুর ছেলে তাফসির আউয়ালের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিক্রিয়া জানাব।’ রিটার্নিং কর্মকর্তার এই সিদ্ধান্তের পর মিন্টুর প্রধান প্রতিপক্ষ এবং আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক সুবিধাজনক অবস্থানে গেলেন। তবে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আনিসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনে যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, সবাই তাঁর প্রতিপক্ষ। নাইমের সবই গেল: গত রোববার ঘোড়ার গাড়িতে করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় নাইমকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছিলেন নির্বাচন কমিশন পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল ঋণখেলাপের দায়ে নাইমের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। গতকাল তাঁর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি প্রতিবেদন অনুসারে নাইম হাসান ঋণখেলাপি। তাই তাঁর মনোনয়নপত্র অবৈধ। কয়েকজন বৈধ প্রার্থীর প্রতিক্রিয়া: প্রার্থিতা বৈধ হওয়ার পর কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির দাবি জানান। সিপিবি-সমর্থিত প্রার্থী আবদুল্লাহ আল ক্বাফী অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার রাত তিনটার দিকে তাঁর বাসায় পুলিশ হানা দিয়েছিল। এটা যন্ত্রণাদায়ক ও হয়রানিমূলক। বিএনপির সাবেক সাংসদ আনিসুজ্জামান খোকন বলেন, তিনি নিজের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী নন। তবে অন্যায় ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ তিনি প্রার্থী হয়েছেন। চট্টগ্রাম অফিস জানায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে সাবেক মেয়র ও বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলম এবং আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আ জ ম নাছির উদ্দিনসহ ১২ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে মেয়র পদে একজন, সাধারণ ওয়ার্ডে বর্তমান দুই কাউন্সিলরসহ আটজন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে চার প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। গতকাল মেয়র প্রার্থীরা ছাড়া ১৮টি সাধারণ ওয়ার্ডের ১২৪ প্রার্থী, ছয়টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ২৭ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। বিকেলে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন সাংবাদিকদের বলেন, যাঁদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে, তাঁদেরকে সনদ দেওয়া হয়েছে। তা নিয়ে আগামী তিন দিনের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার বরাবর আপিল করতে পারবেন। আর বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় তা তিন দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করবে। গত মঙ্গলবার নগরের জিইসি মোড় এলাকায় একটি হোটেলে সিটি নির্বাচনে দলের নির্বাচনী কৌশল ঠিক করা নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে নগর আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল। এতে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীসহ ছয়জন সাংসদ উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রিটার্নিং কর্মকর্তা গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৈঠকের বিষয়ে অবগত হয়েছি। কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। তবে আমরা জানি। তদন্ত করে দেখছি।’ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির কাউন্সিলরদের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের কাজ আজ শেষ হবে। গতকাল পর্যন্ত উত্তর সিটিতে ১৫টি ওয়ার্ডের ১৯৯ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ১৫ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। এই সিটিতে মোট ওয়ার্ড ৩৬টি। দক্ষিণ সিটির ১২টি ওয়ার্ডে ১৩০ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়, ১৫ জনের বাতিল হয়। এই সিটিতে মোট ওয়ার্ড ৫৭টি। নারীদের জন্য সংরক্ষিত ১৯টি ওয়ার্ডে ১২২ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়। বাতিল হয় ৩১ জনের।

No comments:

Post a Comment