দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৪টিতেই তালাবদ্ধ আছে বিএনপির কার্যালয় (অফিস)। পাশাপাশি নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ঢাকা মহানগর বিএনপি কার্যালয়ের মূল ফটকে তিন মাস ধরে তালা ঝুলছে। এছাড়া তিন মাস থেকে এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে অধিকাংশ উপজেলা, থানা ও পৌরসভায় অবস্থিত কার্যালয়গুলোও। আর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কয়েকটি অফিস খোলা থাকলেও সেগুলোও কার্যত বন্ধ। সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রহরা থাকায় গ্রেফতারের আশঙ্কায় সেখানে যান
না নেতাকর্মীরা। দলীয় কার্যালয়কে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ‘প্রাণকেন্দ্র’ বলা হলেও এ মুহূর্তে এটি থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি- মন্তব্য বিএনপির নীতিনির্ধারকদের। বিএনপির সূত্র ও যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধানে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালা লাগিয়ে দিয়েছে পুলিশ। আর ঢাকা মহানগর বিএনপি অফিসে পুলিশ তালা লাগিয়ে চাবি নেতাদের কাছে দিয়ে দেয়। কিন্তু পরবর্তীকালে দলের পক্ষ থেকে কেউ আর অফিস খোলেননি। এছাড়া নেতাকর্মীরা অফিসে যাওয়া-আসা না করায় দেশের ৪৩টি জেলা অফিসের মূল ফটকে তালা ঝুলছে। আর আট জেলা অফিস খোলা থাকলেও সেখানে সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রহরা রয়েছে। গ্রেফতারের আশঙ্কায় নেতাকর্মীরা না যাওয়ায় কার্যত নিষ্ক্রিয় রয়েছে অফিসগুলো। তবে ভিন্ন চিত্র ১১ জেলায়। সেখানে নেতাকর্মীদের পদচারণা স্বাভাবিক। জেলাগুলো হচ্ছে- ময়মনসিংহ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, লালমনিরহাট, জামালপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, পাবনা, রাজবাড়ী, পিরোজপুর ও ফরিদপুর। অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, বিভিন্ন উপজেলা, থানা ও পৌরসভায় অবস্থিত কার্যালয়গুলোর কিছু পুলিশ তালাবদ্ধ করে দিয়েছে, আবার কিছু খোলা থাকলেও পুলিশ অবরুদ্ধ করে রেখেছে। কোথাও কোথাও অফিস খুলতে চাইলেও পুলিশি বাধায় পিছু হটছেন নেতাকর্মীরা। কোথাও আবার অফিস খোলার লোকও নেই। ফলে কার্যালয় ঘিরে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হচ্ছে না। চলমান আন্দোলনে কোথাও কোথাও ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা বিএনপি কার্যালয় জ্বালিয়ে দিয়েছে। তবে দলটির প্রতিষ্ঠার এত বছর পরও কোনো কোনো জেলা বা উপজেলায় বিএনপির দলীয় কার্যালয় নেই। আবার কার্যালয় থাকলেও গ্রুপিংয়ের কারণে তা বন্ধ। কারও বাসা বা ব্যবসায়িক অফিস কিংবা হোটেল রেস্তোরাঁয় বসে দলীয় কাজ চালাচ্ছেন। এমনকি বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রবেশে রয়েছে কড়াকড়ি। স্বাভাবিকভাবে সেখানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক দলের প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে দলীয় কার্যালয়। সেখানে বসেই দলীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি তিন মাস ধরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ। পুলিশ কার্যালয়ের চাবিও দিচ্ছে না আবার বলছে তারা কোনো বাধা দিচ্ছে না। তিনি বলেন, শুধু কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়, দেশের অনেক অফিসই পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। অনেকে গ্রেফতারের ভয়ে কার্যালয়ে যেতে সাহস পাচ্ছেন না। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিএনপির মতো বড় দলের কার্যালয় বন্ধ করে রাখার পরিণাম কখনও শুভ হবে না। অবিলম্বে দলের সব কার্যালয় খুলে দেয়া ও পুলিশি পাহারা প্রত্যাহার করে নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করার সুযোগ দেয়ার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা। মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, অফিসের মূল কলাপসিবল গেটে তালা লাগানো। দীর্ঘদিনের পড়ে থাকা সংবাদপত্রের ওপর ধুলা-ময়লার আস্তর জমে আছে। পত্রিকার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গা থেকে পাঠানো বেশকিছু চিঠিও সেখানে পড়ে রয়েছে। কার্যালয়ের নিচতলায় বেশকিছু পুলিশ সদস্য বসে পাহারা দিচ্ছেন। তাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেল, কয়েকটি শিফটে ভাগ হয়ে তারা কার্যালয় পাহারা দেন। এছাড়া সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও সেখানে পালা করে দায়িত্ব পালন করছেন। বিএনপি নেতাকর্মী সন্দেহ হলেই তাদের জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে। আবার কাউকে কাউকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাই গ্রেফতারের ভয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা কার্যালয় এড়িয়ে চলছেন। ৩ মার্চ রাত থেকে কার্যালয়ের মূল গেটে তালা। ওই রাতে কার্যালয়ের ভেতর থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে আটক করে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। একই সময় কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান করা সব নেতাকর্মী এমনকি কর্মচারীদের বের করে গেটে তালা দিয়ে চাবি নিয়ে চলে যায় পুলিশ। জানতে চাইলে কার্যালয়ের কর্মচারী দলিল উদ্দিন বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ‘রিজভী স্যারকে আটক করার পর থেকে কার্যালয়ে কেউ প্রবেশ করতে পারেনি। স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন তালা খোলার জন্য পল্টন থানায় চাবির জন্য যাই। কিন্তু চাবি না দিতে ওপরের নির্দেশ আছে বলে ওসি স্যার আমাকে জানান।’ তিনি আরও বলেন, কার্যালয় বন্ধ থাকায় প্রায় তিন মাস ধরে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও টেলিফোন বিল বকেয়া পড়েছে। কার্যালয়ের ১৪ জন কর্মচারীর বেতনও বন্ধ। অনেকের ঢাকায় থাকার জায়গা না থাকায় তারা গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। একই দিন নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের উল্টোপাশে ভাসানী ভবনে মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় সেটাও তালাবদ্ধ। কার্যালয়ের নিচে কয়েকজন পুলিশ পাহারা দিচ্ছে। মহানগর কার্যালয়ের অফিস সহকারী মো. মানিক মিয়া বুধবার যুগান্তরকে বলেন, মহানগর কার্যালয়ের তালা লাগিয়ে পুলিশ চাবি আমাদের দিয়ে বলেন, অনুমতি ছাড়া অফিস খোলা যাবে না। এরপর মহানগরের দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত শামসুল আলম কার্যালয় খুলতে গেলে পুলিশ তাকে আটক করে। এ সময় শাহাবুদ্দিন নামে একজন অফিস সহকারীকেও আটক করা হয়। কার্যালয় যাতে না খুলি এজন্য আমাদের নানাভাবে ভয়ভীতিও দেখায় পুলিশ। তিনি বলেন, কার্যালয় বন্ধ থাকা ও মহানগর নেতারা প্রকাশ্যে আসতে না পারায় তিন মাস ধরে তারা কোনো বেতন পান না। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় তার দোকানটিও খুলতে দেয়া হচ্ছে না। দোকানের ভেতর অনেক জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি পুলিশের হয়রানির মধ্য দিয়ে কোনো মতে চলছেন বলে জানান মানিক। জানতে চাইলে মতিঝিল বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপুলিশ কমিশনার আনোয়ার হোসেন যুগান্তরকে জানান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় কে তালা দিয়েছে বা কারা খুলছে কোনোটাই আমার জানা নেই। আমার কাজ হল আইনশৃংখলা দেখা। আইনশৃংখলা রক্ষায় যেসব পদক্ষেপ নেয়া দরকার আমরা সেটাই করছি। তালা দেয়া বা খোলার বিষয়ে পুলিশের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। যুগান্তরের ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য চট্টগ্রাম নগর ও জেলা অফিস তালাবদ্ধ : নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের, পুলিশি অভিযান ও গ্রেফতার আতংকে তিন পার্বত্য জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ পাঁচ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিএনপি অফিসের কার্যক্রম নেই বললেই চলে। অধিকাংশ অফিসই রয়েছে টানা প্রায় তিন মাস ধরে তালাবদ্ধ। কোথাও কোথাও অফিস খুলতে চাইলেও পুলিশি বাধায় পিছু হটছেন নেতাকর্মীরা। কোথাও আবার অফিস খেলার লোকও নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরীর নুর আহমদ সড়কের নাসিমন ভবনে অবস্থিত চট্টগ্রাম উত্তর ও নগর বিএনপি কার্যালয় ৫ জানুয়ারির পর থেকেই পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। নগরীর দোস্ত বিল্ডিং-এ অবস্থিত চট্টগ্রাম জেলা বিএনপির কার্যালয়টিও বন্ধ রয়েছে ৫ জানুয়ারির পর থেকে। এদিকে কক্সবাজারসহ তিন পার্বত্য জেলায় বিএনপি কার্যালয়গুলোও প্রায় বন্ধ রয়েছে। রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির কার্যালয় গ্র“পিংয়ের কারণে প্রায় সময় বন্ধ থাকে। ৫ জানুয়ারির পর থেকে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে বান্দরবান জেলা বিএনপির কার্যালয়। তবে পৌরসভা ও উপজেলা বিএনপির কার্যালয়গুলো মাঝে মাঝে খোলা হয়। খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির কার্যালয়টি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে ৫ জানুয়ারির পর থেকে। জেলার ১৪টি উপজেলার মধ্যে মিরসরাই উপজেলা বিএনপি কার্যালয় খোলা হয় কেন্দ্রীয় কর্মসূচিকে ঘিরে। সীতাকুণ্ড উপজেলায় বিএনপির দলীয় কোনো কার্যালয় নেই। হাটহাজারী, পটিয়া, লোহাগাড়া ও চন্দনাইশ উপজেলায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচি থাকলে দলীয় কার্যালয় খোলা হয়। এর বাইরে অফিস খুলতে গেলে পুলিশের চাপে বন্ধ করে দিতে হয়। ৫ জানুয়ারির পর থেকে ফটিকছড়ি, বাঁশখালী, সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপি কার্যালয়টি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। রাঙ্গুনিয়া, আনোয়ারা উপজেলায় কোনো অফিসই নেই। শত বাধা-বিপত্তিতেও চট্টগ্রামের ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন সন্দ্বীপে নিয়মিত খোলা হয় বিএনপির কার্যালয়। রাজশাহী বিভাগে বিএনপির সব অফিসই অবরুদ্ধ : প্রায় তিন মাস ধরে রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোর বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অফিসগুলো কার্যত অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। এসব জেলার উপজেলা ও আঞ্চলিক অফিসগুলোও খুলতে পারে না নেতাকর্মীরা। বিভাগীয় শহর রাজশাহীর ভুবনমোহন পার্ক সংলগ্ন মালোপাড়ায় মহানগর বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অফিস। ৫ জানুয়ারির রাত থেকে ফেব্র“য়ারির শেষ নাগাদ মহানগর বিএনপির এ কার্যালয়টি অবরুদ্ধ করে রাখে পুলিশ। মাঝে মাঝে অফিসটি আগে খোলা হলেও অধিকাংশ নেতাকর্মী গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে থাকায় অফিসটি গত একমাস ধরে খোলাই হয় না। পিয়ন চাপরাসি কেউই আর অফিসমুখী হয়নি। ফলে শুধু দলীয় সাইনবোর্ডই এখন শোভা পাচ্ছে। অন্যদিকে নগরীর চালপট্টিতে জেলা বিএনপির একটি অফিস থাকলেও গত এক বছরেও অফিসটি খোলা হয় না। জেলা বিএনপির সভাপতি নাদিম মোস্তফা রাজশাহীতে অবস্থান করলে মাঝেমধ্যে অফিসটি খোলা হতো। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপি নেতা সাজেদুর রহমান মার্কনী বলেন, পুলিশ কোনো নেতাকর্মীকেই অফিসমুখী হতে দেয় না। অফিসের আশপাশে পেলেই ধরে নিয়ে নাশকতার মামলায় দিয়ে দিচ্ছে। নাটোর শহরের আলাইপুরে অবস্থিত বিএনপি অফিসের সামনে দিনের পুরো সময়ই পুলিশ পাহারা থাকে। রাতের দিকে পুলিশ চলে গেলেও অফিস খোলার মতো পরিবেশ নেই, জানালেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক। বিএনপি অফিস অবরুদ্ধ রাখা প্রসঙ্গে নাটোর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি অফিস খোলাই থাকে। তবে আইনশৃংখলা রক্ষার স্বার্থে অফিস থেকে দূরে পুলিশের একটি দল থাকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিএনপি অফিসও কার্যত অবরুদ্ধ রয়েছে তিন মাস ধরে। তবে মাঝেমধ্যে অফিসটি খোলা হয়। পৌর শহরের পাঠানপাড়া এলাকার বিএনপির এ অফিসটি সদর উপজেলা ও পৌর বিএনপির অফিস হিসেবেই পরিচিত। জেলা বিএনপি নামে কোনো অফিস নেই বলে জানালেন নেতাকর্মীরা। অন্য এলাকার মতো বিএনপি অফিসে কোনো পুলিশ থাকে না বলেও তারা জানান। নওগাঁ জেলা বিএনপির অফিসটি শহরের কেডির মোড়ে। সেখানেও নেই নেতাকর্মীদের আনাগোনা। জয়পুরহাটের অফিস পুড়ে গেছে : ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৪ দলের অনুষ্ঠানে বোমা হামলার পর আওয়ামী লীগ সমর্থকরা রেলগেট এলাকায় অবস্থিত জয়পুরহাট জেলা বিএনপির অফিসে আগুন দেয়। এরপর থেকে কার্যালয়ে কোনো নেতাকর্মীকে দেখা যাচ্ছে না। গ্রেফতারের ভয়ে বেশিরভাগ নেতাকর্মীই আত্মগোপনে রয়েছেন। বগুড়ায় ৮৫ দিন ধরে অফিস তালাবদ্ধ : কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকে শহরের নবাববাড়ী সড়কে জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন, শহর জামায়াত এবং টেম্পল রোডে শহর বিএনপি অফিস তালাবদ্ধ। ৪ মার্চ রাতে পুলিশের উপস্থিতিতে নবাববাড়ী সড়কে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পেট্রল ঢেলে বিএনপি অফিসে আগুন ও ভাংচুর করে। জোটের দায়িত্বশীল অধিকাংশ নেতা আত্মগোপনে। পুলিশি দমনপীড়ন ও হয়রানি এড়াতে নেতাকর্মীরা পার্টি অফিসে যাচ্ছেন না। বগুড়া জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক মাহফুজুর রহমান রাজু জানান, পুলিশ শুধু গ্রেফতার নয়; দায়িত্বশীল নেতাকর্মীদের বাড়িতে তল্লাশির নামে তাণ্ডব চালাচ্ছে। তিনি বলেন, পুলিশি দমনপীড়ন ও বাধার কারণে ২০ দলীয় জোটের পার্টি অফিস খোলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে বগুড়া পুলিশের এএসপি (মিডিয়া) গাজিউর রহমান সাগর জানান, দলীয় অফিসে যেতে কাউকে বাধা দেননি; কোনো নেতাকর্মীকে হয়রানিও করা হয়নি। নাশকতা মামলার আসামিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। আড়াই মাস ধরে তালাবদ্ধ যশোর বিএনপি কার্যালয় : যশোর জেলা বিএনপির কার্যালয় তালাবদ্ধ প্রায় আড়াই মাস ধরে। শহরের লালদীঘি পাড়ের দলীয় কার্যালয়ে এখন সুনসান নীরবতা। জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে দলীয় কার্যালয়ে দোয়া মাহফিলের অনুষ্ঠান থেকে জেলা বিএনপির ১১ শীর্ষ নেতাকে আটকের পর আগের মতো নেই দলীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতি। মঙ্গলবার সরেজমিন শহরের লালদীঘি পাড়ের বিএনপির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, দোতলা ভবনের দরজায় তালা ঝুলছে। কার্যালয়ের সামনে পুলিশি পাহারা। জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় দলীয় নেতাকর্মীদের জড়ানো হচ্ছে। এজন্য গ্রেফতার এড়াতে দলীয় নেতাকর্মীরা কার্যালয়ে যাচ্ছেন না। ঝিনাইদহ কার্যালয় জ্বালিয়ে দিয়েছে : ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির কার্যালয় বন্ধ। এক মাস আগেও নেতাকর্মীদের কলতানে মুখোরিত ছিল এ কার্যালয়। শহরের প্রাণকেন্দ্রে কেপি বসু সড়কের একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন মার্কেটে বিএনপির কার্যালয়টি ১৯ ফেব্রুয়ারি আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুনে কার্যালয়টির চেয়ার, টেবিল, ফ্যানসহ আসবাবপত্র পুড়ে যায়। জেলা বিএনপির সভাপতি মসিউর রহমান অভিযোগ করেন, সরকারদলীয় লোকরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করা হয় । চুয়াডাঙ্গা কার্যালয় পুলিশের দখলে : চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি অফিসটি তালাবদ্ধ ও পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। ফলে কার্যালয়ে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেন না তারা। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল জব্বার সোনা যুগান্তরকে বলেন, পুলিশ আমাদের অফিসে সার্বক্ষণিক অবস্থান করে। সেখানে আমাদের বসতে দেয় না পুলিশ। এ ব্যাপারে সদর থানার ওসি আসাদুজ্জামান মুনসী অভিযোগ অস্বীকার করে যুগান্তরকে বলেন, বিএনপির অফিসে পুলিশ প্রহরা নেই। এমনিতেই পুলিশ বিশ্রামে থাকতে পারে। মেহেরপুর : মেহেরপুর জেলা বিএনপি দু’ভাগে বিভক্ত। একটি সাবেক এমপি মাসুদ অরুণ গ্রুপ। অপরটি ইলিয়াস-আনছারুল গ্রুপ। মাসুদ অরুণ গ্রুপের কার্যালয় প্রধান সড়কে। অপরটি থানা সড়কে। ইলিয়াস-আনছারুল গ্রুপ ৫ জানুয়ারির পর কেন্দ্রীয় কোনো কর্মসূচি পালন করেনি পুলিশ আতংকে। সাবেক এমপি মাসুদ অরুণ জানান, পুলিশ দলীয় কার্যালয়ে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেয় না। এজন্য নেতাকর্মীদের নিয়ে শহরের প্রবেশ মুখগুলোতে বিক্ষোভ মিছিল করে। খুলনা বিভাগের ৫ জেলায় গ্রেফতারের ভয়ে কার্যালয় বন্ধ : পুলিশের বাধা ও গ্রেফতারের ভয়ে গত প্রায় দু’মাস ধরে খুলনা বিভাগের ৫ জেলায় বিএনপির নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয় বন্ধ রেখেছে। নেতাকর্মীদের গ্রেফতার শুরুর পর থেকে পুলিশের বাধা ও গ্রেফতারের ভয়ে নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয় বন্ধ করে রেখেছে। তবে পুলিশের অনুমতি নিয়ে কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে দলীয় কার্যালয় কিছু সময়ের জন্য খোলা হচ্ছে। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় সরেজমিন খুলনা নগরীর কেডি ঘোষ রোডে খুলনা জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে দেখা যায়, কার্যালয়ের প্রধান ফটকে দুটি তালা ঝোলানো রয়েছে। নগর বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক সামছুজ্জামান চঞ্চলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে জানান, আরাফাত রহমান কোকোর জানাজার পর থেকে পুলিশের বাধা ও গ্রেফতারের ভয়ে নেতাকর্মীরা কার্যালয়ে আসতে পারছেন না। এরপর থেকে দলীয় কার্যালয়টি বাধ্য হয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে। আন্দেলনের শুরুর দিকে মাগুরা জেলা উপজেলা পর্যায়ের অফিস খোলা থাকলেও পরে গ্রেফতার এড়াতে নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দেয়ায় জেলা অফিস অনেক দিন ধরেই বন্ধ রয়েছে। তবে শালিখা, শ্রীপুর ও মহম্মদপুর এলাকার উপজেলা পর্যায়ের বিএনপি অফিস বিকালের দিকে খোলা হয়। সাতক্ষীরায় জেলা বিএনপির কোনো অফিস নেই। এখানে ওখানে কারও বাড়িতে ও আমতলা মোড়ে দলীয় নেতা মাসুমবিল্লাহ শাহীনের নিজস্ব অফিসে অস্থায়ীভাবে যে কার্যক্রম চলত তাও বন্ধ হয়ে গেছে। জেলার সবগুলো উপজেলায়ও দলীয় অফিসে তালা ঝুলছে। নড়াইল জেলার তিনটি উপজেলা সদরের ৪ অফিস তিনটি পৌরসভা ও ইউনিয়নসহ মোট ৩৩টি দলীয় কার্যালয় রয়েছে। প্রায় সবগুলো দলীয় কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে নড়াইল জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন বলেন, বর্তমান সরকারের দমন-পীড়ন, মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতার আতংকে দলীয় নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে রয়েছেন। এছাড়া স্থানীয় অনেক নেতা জেলহাজতে থাকায় দলীয় কার্যালয়গুলো বন্ধ রয়েছে। বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট, চিতলমারী ও শরণখোলা উপজেলায় বিএনপির অফিসে কয়েক দফা হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এখন এই তিন উপজেলায় কার্যত বিএনপির কোনো অফিস নেই। এছাড়া অন্য উপজেলার মধ্যে মংলা, রামাপাল, মোড়েলগঞ্জ, কচুয়া , মোল্লারহাটে বিএনপির অফিস থাকলেও পুলিশি বাধায় সেখানে নিয়মিত দলীয় নেতাকর্মীরা সভা বা দলীয় কর্মসূচি পালন করতে পারে না। একমাত্র জেলা সদরের বিএনপির কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে পুলিশ শর্তসাপেক্ষে কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেয়। এমন অভিযোগ জেলা বিএনপির সভাপতি এমএ সালামের। তিনি বলেন, পার্টি অফিসে দলীয় নেতাকর্মীদের যাতায়াতে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। বরিশালে বিএনপির প্রতিটি জেলা উপজেলার কার্যালয় তালা, ভাংচুর : গ্রেফতার আতংকে বরিশাল জেলা বিএনপির কার্যালয়সহ বিভাগের প্রায় সব জেলা ও উপজেলার কার্যালয়ে বন্ধ করে পালিয়ে বেড়াচ্ছে নেতাকর্মীরা। বরিশাল জেলা বিএনপির কার্যালয় মাঝে মধ্যে খোলা হলেও অধিকাংশ সময়ই থাকে তালাবদ্ধ। অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি শুরুর প্রথম দিকে পটুয়াখালী বিএনপির কার্যালয়ে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত বিএনপির অফিস খোলা হয়নি। অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় কার্যালয়টি। তালাবদ্ধ রয়েছে ঝালকাঠি জেলা বিএনপির কার্যালয়ও। এদিকে ৯ মার্চ নলছিটি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পরদিন উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে হামলা ও ভাংচুর চালায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এরপর থেকে কোনো বিএনপি নেতাকর্মীকে ওই কার্যালয়ে দেখা যায়নি। পুলিশ প্রহরায় রয়েছে ভোলা ও বরগুনার জেলা কার্যালয়। তবে এসব মন্দের মাঝে মোটামোটি ভালো আছে পিরোজপুর জেলা বিএনপির কার্যালয়। বেশিরভাগ সময় তালাবদ্ধ থাকলেও মাঝে মাঝে অফিসে আসেন হাতেগোনা কয়েকজন বিএনপি নেতা। কুমিল্লায় কার্যালয় তালাবদ্ধ : আত্মগোপনে থেকে কার্যক্রম : নগরীর কান্দির পাড়ে অবস্থিত জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয়টি তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। কুমিল্লা মহানগর, দক্ষিণ ও উত্তর জেলাসহ ১৬টি উপজেলা বিএনপির কার্যালয়গুলো অনেকটাই নিরুত্তাপ, নেতাকর্মীশূন্য ও তালাবদ্ধ। জেলা সদরের কান্দির পাড়ে দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয়টিতে বিগত ১ বছর যাবত তালা ঝুলছে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের যেসব কার্যালয় রয়েছে গত ১ বছর যাবত সবকটিতেই তালা ঝুলছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে চান্দিনা উপজেলা সদরে কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির কার্যালয়েও। অপরদিকে জেলার ১৬ উপজেলার মধ্যে প্রতিটি উপজেলার সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপজেলা সদরে একটি করে উপজেলা বিএনপির কার্যালয় থাকলেও বেশিরভাগই ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে তালা খুলেনি। এ ব্যাপারে কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, পুলিশি হয়রানি মামলা হামলা ও নির্যাতনের ভয়ে নেতাকর্মীরা এখন দলীয় কার্যালয়ে আসতে সাহস পায় না। তিনি বলেন, আমরা সম্প্রতি কার্যালয় খুলে স্বাধীনতা দিবস পালন করেছি। সিলেটে বিএনপির নিজস্ব কোনো কার্যালয় নেই : বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হলেও সিলেট বিভাগে কোনো দলীয় অফিস নেই বিএনপির। দলীয় অফিস না থাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম চলে নেতাদের ড্রয়িংরুম বা বৈঠকখানায়। বিভাগের রাজনীতিতে কয়েকটি বলয় রয়েছে। প্রত্যেকটি বলয়ের নেতৃত্বে যারা থাকেন তাদের বাসা বা অন্য কোথায় দলীয় কার্যক্রম চালান। কিন্তু আজকাল পুলিশের ভয়ে ড্রয়িং রুমেও বৈঠক করতে সাহস পাচ্ছে না। সুনামগঞ্জেও বিএনপির কোনো স্থানীয় দলীয় কার্যালয় নেই। এক সময় শহরের ট্রাফিক পয়েন্ট ও টাউন হল মার্কেটের সামনে দলের অস্থায়ী কার্যালয় থাকলেও সময়ের ব্যবধানে যখন যিনি দলের সভাপতি কিংবা আহ্বায়ক পদে আসীন হয়েছেন তখন তারা তাদের নিজেদের বাসা কিংবা শহরের কোনো মার্কেটের ভেতর অস্থায়ী দলীয় কার্যালয় খুলে বসেন। তবে পদ হারানোর পর সেই সব কার্যালয় কিংবা বাসা বাড়িও দলীয় অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের জন্য অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে। মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারের সদরে বিএনপির নিজস্ব কোনো কার্যালয় না থাকলেও নেতাদের আবাসিক এলাকা থেকে দলের দুই অংশের সাংগঠনিক তৎপরতা চালানো হতো। এখন ওই দুটি এলাকা নেতাকর্মী শূন্য। জেলা সভাপতি এম নাসের রহমান এলাকায় গেলে বাহারমর্দন গ্রামের বাড়িটিই মূলত কার্যালয়ে পরিণত হয়। নাসেরবিরোধী বলে পরিচিত খালেদা রাব্বানী অংশের সাংগঠনিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে শহরের শাহ মোস্তাফা সড়কে অবস্থিত তার বাড়িতে। হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির বর্তমানে কোনো কার্যালয় নেই। ফলে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিংবা নেতাদের বাসায় বসেই একাধিক ভাগে বিভক্ত এ দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম চলছিল এতদিন। কিন্তু এখন তা-ও নেই। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখল করে কেন্দ্র কার্যালয় খোলা হলেও পরে তা হাতছাড়া হয়। সবশেষ ২০০১ সালে বিএনপি কোর্ট মসজিদ-সংলগ্ন এলাকায় জেলা পরিষদের মালিকানাধীন একটি বিল্ডিং দখল নিয়ে দলের কার্যালয়ে রূপান্তরিত করেন। বিগত ১/১১-এর সরকারের সময় এ বিল্ডিংটি থেকেও তাদের উচ্ছেদ করা হয়। সে থেকেই দলটির আর কোনো কার্যালয় নেই। রংপুর বিভাগের কার্যালয়গুলো পুলিশের নিয়ন্ত্রণে : রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় বিএনপির প্রথম থেকে তৃতীয় সারির দলীয় নেতাকর্মীরা পুলিশি আতংকে বাড়িছাড়া। দলীয় কার্যালয়গুলো পুলিশ সর্বদা ঘিরে থাকে। পুলিশের ভাষায় অপেক্ষাকৃত গুরুত্বহীন দলীয় কিছু নেতাকর্মী অফিসে আসেন কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে। তাও আবার স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা করে তারা অফিসে আসেন। তবুও তাদের মাঝে গ্রেফতার-ভীতি সর্বদা কাজ করে। দিনাজপুর জেলার দলীয় কার্যালয় পুলিশ তালাবন্ধ না করলেও নিজেরাই বন্ধ রেখেছে। পুলিশ প্রতিদিনই কার্যালয়ের প্রধান ফটকে বসে দায়িত্ব পালন করছে। এ ব্যাপারে পৌর বিএনপি নেতা বখতিয়ার আহম্মেদ কচি জানান, পুলিশ আইনশৃংখলা রক্ষার নামে বিএনপির নেতাকর্মীদের মিছিল মিটিং করতে না দিয়ে গণহারে ধরপাকড় শুরু করায় তারা তাদের কার্যালয় খুলতে পারছে না। পুলিশ দলীয় কার্যালয় ঘিরে সর্বদা সতর্ক পাহারা রেখেছে। গাইবান্ধা জেলা বিএনপির কার্যালয় মাঝে মধ্যে খোলা থাকলেও দলীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নেই। গাইবান্ধায় পেট্রলবোমা হামলায় হতহতের ঘটনার পর থেকে সেখানে পুলিশ মরিয়া হয়ে ওঠে। জেলা বিএনপির সভাপতি গাওছল আজম ডলার জানান, তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। কুড়িগ্রামের দলীয় কার্যালয় মাঝে মধ্যে খোলা থাকলেও নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখা যায় না। পুলিশি পাহারায় থাকে দলীয় কার্যালয়। নীলফামারী, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার বিএনপির দলীয় কার্যালয়গুলো একইভাবে চলছে। গুরুত্বপূর্ণ নেতকর্মীরা দলের কার্যালয়ে আসেন না। পুলিশ সর্বদা দলীয় কার্যালয় ঘিরে থাকে। ময়মনসিংহ শহরের জেলা বিএনপি অফিস খোলা থাকলেও ১২ উপজেলায় বন্ধ : ময়মনসিংহ জেলা সদর ছাড়া ময়মনসিংহ জেলার অন্য ১২টি উপজেলায় বিএনপির অফিস থাকলেও গত ৫ জানুয়ারির পর থেকে বেশিরভাগ অফিস বন্ধ রয়েছে। শুধু ময়মনসিংহ জেলা বিএনপি (সদর দক্ষিণ) জেলা অফিস খোলা থাকে এবং প্রতিদিনই জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও মিটিং চলে। তবে তাও আবার সীমিত এলাকায়। আবু ওয়াহাব আকন্দ বলেন, অনেক জায়গায় অফিস বন্ধ থাকে তার কারণ গ্রেফতার আতংক। জেলার ফুলবাড়ীয়া, মুক্তাগাছা, নান্দাইল, গফরগাঁয়ে বিএনপির অফিস থাকলেও তা বন্ধ। নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দিয়েছেন। হালুয়াঘাট, ফুলপুর, ত্রিশাল ও তারাকান্দায় বিএনপির অফিস থাকলেও কার্যক্রম নেই। ঈশ্বরগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের অফিস থাকলেও মূলত তা বন্ধ থাকে। ঢাকা থেকে যখন নেতারা আসেন তখন তা খোলা হয়। ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মঈনুল হক জানান, ময়মনসিংহ জেলায় পুলিশের পক্ষ থেকে কোথাও বিএনপির অফিস বন্ধ করা বা তালা দেয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। কিশোরগঞ্জ সদরসহ প্রত্যেকটি উপজেলা কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। জেলা সভাপতি এলাকায় না থাকায় সদরে আন্দোলন কর্মসূচি তেমন চোখে পড়ে না। গ্রেফতারের ভয়ে নেতাকর্মীরা আÍগোপনে থাকায় কার্যালয়গুলো বন্ধ রয়েছে। অনেক এলাকায় কার্যালয় পুলিশ পাহারা দিচ্ছে। বৃহত্তর ফরিদপুরের প্রায় সব কার্যালয় বন্ধ : বৃহত্তর ফরিদপুরের ৫ জেলার মোট ২৯টি উপজেলার বেশিরভাগ কার্যালয় বন্ধ। আবার অনেক এলাকায় দলীয় অফিসই নেই। দলের সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদকের বাসা কিংবা হোটেল-রেস্তোরাঁয় তাদের দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে থাকে। ফরিদপুর সদরসহ ৯টি উপজেলার মধ্যে ফরিদপুর শহরে বিএনপির দলীয় কোনো অফিস নেই। শহরে বিএনপির এক গ্রুপ সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের কমলাপুরে ময়েজ মঞ্জিলের বাড়িতে এবং অপর গ্রুপ জেলা বিএনপির সভাপতি জহিরুল হক শাহাজাদা মিয়ার ঝিলটুলীর বাড়িতে দলীয় মিটিং করে থাকেন। অন্য ৮টি উপজেলার মধ্যে বোয়ালমারী, মধুখালী, আলফাডাঙ্গা, চরভদ্রাসন, সদরপুর উপজেলায় অফিস থাকলেও বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকছে। এ ছাড়া ভাঙ্গা, সালথা, নগরকান্দা উপজেলায় বিএনপির দলীয় কোনো অফিস নেই। রাজবাড়ী সদরসহ ৫টি উপজেলার মধ্যে রাজবাড়ী সদর, বালিয়াকান্দি, পাংশা, কালুখালীতে দলীয় অফিস রয়েছে। তবে গোয়ালন্দ উপজেলায় দলীয় অফিস না থাকলেও দলীয় কর্মকাণ্ড সাংগঠনিক সম্পাদকের বাড়িতে হয় বলে জানা গেছে। রাজবাড়ী সদরে অফিস খোলা রাখা সম্ভব হলেও অন্যান্য উপজেলার অফিসগুলো বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে। গোপালগঞ্জ সদরসহ ৫টি উপজেলা টুঙ্গীপাড়া, কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মুকসুদপুরের মধ্যে শুধু গোপালগঞ্জ সদরে বিএনপির ২টি অফিস থাকলেও তা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। মাদারীপুর সদরসহ ৪ উপজেলা কালকিনি, রাজৈর, শিবচরের মধ্যে শুধু কালকিনি ও শিবচর উপজেলায় দলীয় অফিস রয়েছে। মাদারীপুর সদরে জেলা বিএনপির কোনো অফিস নেই। যদিও কালকিনিতে উপজেলাসংলগ্ন ও শিবচর উপজেলার পাচ্চরের অফিস নেতাকর্মীদের মামলা ও পুলিশি হয়রানির কারণে বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকছে বলে জানা গেছে। শরীয়তপুর সদরসহ ৬টি উপজেলার মধ্যে জেলা শহরের কোর্টসংলগ্ন, ডামুড্যা উপজেলা বাজার রোডে, নড়িয়া উপজেলার বাজার দুধপট্টি, গোসাইরহাট ব্যাংক রোডের কাঁচাবাজারের নিকট বিএনপির অফিস থাকলে তা কখনোই খোলা হয় না। আর ভেদরগঞ্জ উপজেলা ও জাজিরা উপজেলায় বিএনপির অফিস নেই।
No comments:
Post a Comment