Sunday, April 12, 2015

সাত অভিযোগ, চারটিতেই সাজা:প্রথম অালো

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ৪ জুন বিচারকাজ শুরু করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। এর মধ্যে শেরপুরের সোহাগপুর গ্রামে হত্যাযজ্ঞ ও মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফাকে হত্যার দায়ে তাঁকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ শু
ধু সোহাগপুর হত্যাযজ্ঞের দায়ে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে বহাল রাখেন। গোলাম মোস্তফা হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। বদিউজ্জামান হত্যাকাণ্ড থেকেও কামারুজ্জামানকে খালাস দেন আপিল বিভাগ। প্রথম অভিযোগ: একাত্তরের ২৯ জুন কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী ও পাকিস্তানি সেনারা শেরপুরের ঝিনাইগাতী থানার রামনগর গ্রাম থেকে বদিউজ্জামানকে অপহরণ করে আহম্মেদনগরে পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে বদিউজ্জামানকে রাতভর নির্যাতন করে পরদিন গুলি করে হত্যা করা হয়। এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। তবে আপিল বিভাগ অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি উল্লেখ করে তাঁকে খালাস দিয়েছেন। দ্বিতীয় অভিযোগ: একাত্তরের মে মাসের মাঝামাঝি কামারুজ্জামান ও তাঁর সহযোগীরা শেরপুর কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ আবদুল হান্নানকে প্রায় নগ্ন করে শহরের রাস্তায় হাঁটাতে হাঁটাতে চাবুকপেটা করেন। এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন। আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে এ সাজা বহাল রাখেন। তৃতীয় অভিযোগ: একাত্তরের ২৫ জুলাই কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে আলবদর ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালায় ও নারী ধর্ষণ করে। ওই ধ্বংসযজ্ঞে ১২০ জন প্রাণ হারান। গ্রামটি তখন থেকে ‘বিধবাপল্লি’ নামে পরিচিত। এ ঘটনায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানকে ফাঁসির আদেশ দেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের (৩: ১) মতামতের ভিত্তিতে আপিল বিভাগ এ সাজা বহাল রাখেন। চতুর্থ অভিযোগ: একাত্তরের ২৩ আগস্ট কামারুজ্জামানের নির্দেশে আলবদর সদস্যরা শেরপুরের মোস্তফাবাগ থানার গৃদ্দা নারায়ণপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফাকে কলেজ মোড় এলাকা থেকে আটক করে সুরেন্দ্র মোহন সাহার বাড়িতে স্থাপিত আলবদর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরে রাতে মোস্তফাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ অভিযোগেও ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেন। তবে আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে সাজা কমিয়ে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। পঞ্চম অভিযোগ: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পবিত্র রমজান মাসের মাঝামাঝি কামারুজ্জামান ও আলবদর সদস্যরা শেরপুরের চকবাজার এলাকা থেকে মো. লিয়াকত আলী ও মুজিবুর রহমান জনু নামের দুই ব্যক্তিকে অপহরণ করে। পরে তাঁদের সঙ্গে আরও ১১ জনকে ঝিনাইগাতীর আহম্মেদনগর সেনাক্যাম্পে পাঠানো হয়। ক্যাম্পে ওই ১৩ জনের মধ্যে ১০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তবে প্রমাণিত না হওয়ায় এ অভিযোগ থেকে কামারুজ্জামানকে খালাস দেন ট্রাইব্যুনাল। ষষ্ঠ অভিযোগ: একাত্তরের নভেম্বরে কামারুজ্জামানের নির্দেশে দিদার নামের এক লোক কয়েকজন আলবদর সদস্যকে নিয়ে টুনু নামের এক ব্যক্তিকে ময়মনসিংহের জেলা কাউন্সিল ডাকবাংলোতে নিয়ে আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যা করে। প্রমাণিত না হওয়ায় এ অভিযোগ থেকেও কামারুজ্জামানকে খালাস দেন ট্রাইব্যুনাল। সপ্তম অভিযোগ: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পবিত্র ২৭ রমজানের দিন কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে আলবদর সদস্যরা ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানার কাঁচিঝুলি গ্রামের ট্যাপা মিয়া ও তাঁর বড় ছেলে জহুরুল ইসলাম দারাকে অপহরণ করে জেলা কাউন্সিল ডাকবাংলোতে অবস্থিত আলবদর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরদিন এই দুজনসহ আরও পাঁচজনকে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে নিয়ে হত্যা করে আলবদররা। এর মধ্যে দারাসহ ছয়জন মারা যান, ট্যাপা মিয়া পালিয়ে যান। এ অভিযোগে কামারুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে আপিল বিভাগও তা বহাল রাখেন। সোহাগপুর গ্রামে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড (১২০ জন) ও নারী ধর্ষণের সাজা হিসেবে গতকাল শনিবার রাত ১০টা ৩০ মিনিটে কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

No comments:

Post a Comment