Tuesday, April 28, 2015

অর্ধশতাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী ভোট দিতে পারছেন না:কালের কন্ঠ

প্রায় এক যুগ পর আজ মঙ্গলবার উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেবেন রাজধানী ঢাকার ভোটাররা; তবে এবার দুই সিটি করপোরেশনে ভাগ হয়ে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন। তাঁদের ভোটেই নির্বাচিত হবেন মেয়র ও কাউন্সিলররা। দুই সিটির ৯৩টি ওয়ার্ডে বিএনপির সমর্থিত ও বিদ্রোহী মিলে প্রায় ২০০ কাউন্সিলর পদপ্রার্থী রয়েছেন। তবে অর্ধশতাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলেও ভোট দিতে পারবেন
না। ফৌজদারি মামলাসহ একাধিক মামলা মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে থাকায় এসব কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আজ ভোটকেন্দ্রে যেতে পারছেন না। তবে আত্মগোপনে থাকলেও মুঠোফোনে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তাঁরা আত্মীয়স্বজন ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। অন্যদিকে গ্রেপ্তারের শঙ্কা মাথায় নিয়েই আজ ভোটকেন্দ্রে যাবেন বেশ কয়েকজন প্রার্থী। ঝুঁকি নিয়েই নগরীর ভোট উৎসবে শামিল হতে চান তাঁরা। কয়েকজন কাউন্সিলর পদপ্রার্থী দাবি করেন, ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাঁরা গ্রেপ্তার হলে ব্যালটের মাধ্যমেই জনগণ জবাব দেবে। পেট্রলবোমায় গাড়ি পোড়ানোসহ একাধিক নাশকতার মামলা রয়েছে ওই সব কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর বিরুদ্ধে। আবার কোনো কোনো কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আদালত থেকে জামিন পেলেও প্রকাশ্যে আসছেন না, অন্য কোনো মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে। আজ ভোটও দেবেন না তাঁরা। তাঁদের ধারণা, ভোটকেন্দ্রে গেলেই পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করবে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ঢাকার দুই সিটিতে বিএনপির সব কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধেই একাধিক মামলা রয়েছে। অনেকে জামিনে আছেন। তবে অর্ধশতাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী গ্রেপ্তারের ভয়ে আত্মগোপনে আছেন। ফলে তাঁরা ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না।' তিনি আরো বলেন, 'কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সবগুলো মামলাই রাজনৈতিক হয়রানিমূলক।' ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার ও মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, 'ঢাকা ও চট্টগ্রামে শতাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী আত্মগোপনে আছেন। যাঁরা মামলায় জামিন নেননি, যাঁদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে তাঁদের ছাড়ার প্রশ্নই ওঠে না। আমরা সক্রিয় আছি। নির্বাচনের দিন অতিরিক্ত ফোর্স ও নজরদারি থাকবে।' ঢাকা উত্তরের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী শেখ আমির হোসেন বলেন, 'আগের সব মামলায় জামিনে আছি, এখন নতুন কোনো মামলা হয়েছে কি না জানি না। তবু পুলিশ আমার বাড়ি এবং নেতা-কর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালায়। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রে গিয়ে আমার ভোট দেওয়া হবে না।' উত্তরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি দুটি ফৌজদারি মামলার আসামি। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গত দুই দিনে আমার আট মহিলা কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। অনেকের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে এবং শাসিয়ে আসছে। আমার বিরুদ্ধেও মামলা আছে। তবে গ্রেপ্তারের শঙ্কা উপেক্ষা করেই ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে যাব। পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করলে জনগণ ভোটের মাধ্যমে আমাকে মুক্ত করবে।' ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আফতাব উদ্দিন জসিম বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রতিটি মামলায় জামিনে আছি। আমি আমার ভোট দেবই। কিন্তু খবর পাচ্ছি, ভোটের দিন আমাকে ভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার করা হতে পারে। এমনটি হলে জনগণই ভোটের মাধ্যমে জবাব দেবে।' ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির প্রার্থী মো. এনায়েতুল হাফিজ বলেন, 'তিন মাস ধরে আত্মগোপনে আছি। আমার বিরুদ্ধে একটি মামলা আছে, সেটাতে আমি জামিন নিয়েছি। তার পরও আত্মগোপনে আছি, কারণ অন্য কোনো মামলায় আমাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। আমার ভোটটি দিতে পারব কি না সেটা নিয়ে আমি চিন্তিত।' বিএনপির আত্মগোপনে থাকা প্রার্র্থীরা বের হলেই গ্রেপ্তার হবেন জানিয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, 'শুধু প্রার্থী নয়, তাঁদের কর্মী-সমর্থক যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা আছে এবং জামিন নেননি তাঁদের তালিকাও আমাদের কাছে আছে। আমরা তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। নির্বাচনের দিন পাওয়া গেলে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে।' মনিরুল ইসলাম আরো বলেন, 'নির্বাচন কমিশন বা সরকারের এমন কোনো নির্দেশনা নেই যে ভোটের দিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা যাবে না।'    

No comments:

Post a Comment