Monday, April 13, 2015

নির্বাচনী মাঠে নেই বিএনপির অধিকাংশ কাউন্সিলর প্রার্থী:প্রথম অালো

মামলা থাকার কারণে নির্বাচনী প্রচারণায় নামতে পারছেন না বিএনপির অধিকাংশ কাউন্সিলর প্রার্থী। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৯৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে বিএনপি-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের ৫৪ জন ফৌজদারি মামলার আসামি। এঁদের মধ্যে অন্তত ১৭ জন হত্যা মামলার এবং ২২ জন হত্যা চেষ্টার মামলার আসামি। প্রার্থীদের দাবি, এসব মামলা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়ের করা এবং রাজনৈতিক হয়রানিমূলক। ১৫-২০ জন প্রার্থীর
সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের নয়জনের জামিন নেই। তাঁরা বলেন, দল-সমর্থিত প্রার্থীরা জামিনের জন্য আদালতে হাজিরা দিলে গ্রেপ্তার হওয়ার শঙ্কা থাকে। তাই ভয়ে অনেকেই জামিনের চেষ্টা করছেন না। কেউ কেউ দলীয় আইনজীবীর মাধ্যমে চেষ্টা করলেও জামিন পাচ্ছেন না। এমনকি এসব প্রার্থী ভোট চাওয়ার জন্য এলাকাতেও যেতে পারছেন না। স্ত্রী, আত্মীয়স্বজন ও দলীয় নেতা-কর্মীরা তাদের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া সাধারণ ওয়ার্ডের প্রার্থীদের হলফনামা যাচাই করে এবং তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশ মামলাই আওয়ামী লীগের বর্তমান ও আগের সরকারের মেয়াদে করা। বিশেষ ক্ষমতা আইন, দ্রুত বিচার আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে এসব মামলা করা হয়। অবশ্য নির্বাচন কমিশন বলছে, প্রার্থীদের কারও বিরুদ্ধে মামলা থাকলে, তাঁকে গ্রেপ্তার করা বা না করার বিষয়টি আদালতের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা আছে, পেট্রলবোমা ছোড়ার সরাসরি প্রমাণ আছে, তাঁদের গুলো ছাড়া অন্য মামলাগুলো নমনীয়ভাবে দেখতে হবে। নইলে নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি হবে না। উত্তর সিটিতে ২১ জন: ৩৬টি ওয়ার্ডে ৩৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ২১ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা আছে। এদের মধ্যে ১০ জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৭ ধারায় এক বা একাধিক হত্যা চেষ্টার মামলা আছে। দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় সরাসরি হত্যার মামলা আছে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী আবুল মেছের ও ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী শেখ আমির হোসেনের বিরুদ্ধে। আবুল মেছেরের বিরুদ্ধে মামলাটি আওয়ামী লীগ সরকারের আগের মেয়াদে করা। আমির হোসেনের বিরুদ্ধে মামলাটি ২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের আমলে। তাঁর বিরুদ্ধে চারটি হত্যা চেষ্টার মামলাও আছে। জানতে চাইলে আমির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৭টি মামলার মধ্যে বেশ কয়েকটিতে তাঁর জামিন নেই। জামিনের জন্য দাঁড়ালে তা নামঞ্জুর করে জেলে ঢুকিয়ে দেবে। তাই এখনো জামিনের চেষ্টা করিনি। পুলিশও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। সে জন্য এলাকায়ও ঢুকতে পারছি না।’ ৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী কাজী আলী ইমাম আসাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের দুই মেয়াদে ১৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হত্যা চেষ্টার মামলা। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ারের বিরুদ্ধে বিগত তত্ত্বাবধায়ক ও আওয়ামী লীগের দুই মেয়াদে ৪৭টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একাধিক হত্যা চেষ্টার মামলা আছে। ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল হাসেমের বিরুদ্ধে বর্তমানে চারটি মামলা। এসব মামলা ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে করা। একই সময়ে তিনি সাতটি মামলায় আদালতের রায়ে খালাস পেয়েছেন। জানতে চাইলে আনোয়ারুজ্জামান বলেন, ‘৪৭টি মামলার মধ্যে ১৮টিতে জামিন নেই। এ কারণে ভোট চাইতে এখনো এলাকায় যেতে পারিনি। আজ জামিন নেওয়ার চেষ্টা করব। তারপর এলাকায় ঢুকব।’ প্রার্থীদের আরও যাঁদের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার মামলা আছে, তাঁরা হলেন ১ নম্বর ওয়ার্ডের মোস্তাফিজুর রহমান, ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাজ্জাদ হোসেন, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল মতিন, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের মো. সাহাবুদ্দিন, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের এ জি এম সামছুল হক (দুটি মামলা), ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের মাহমুদুল আলম (তিনটি)। দক্ষিণ সিটিতে ৩৩ জন: দক্ষিণে বিএনপির ৫৭ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৩৩ জন ফৌজদারি মামলার আসামি। এদের মধ্যে অন্তত সাতজনের বিরুদ্ধে সরাসরি হত্যার এক বা একাধিক মামলা আছে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শামসুল হুদা কাজলের বিরুদ্ধে ২০০৩ সালের একটি হত্যা মামলা বিচারাধীন আছে। এর আগে ১৯৯৮ সালের একটি হত্যা মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পান। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা চেষ্টার মামলাসহ মোট ১৬টি মামলা আছে। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা ও ১১টি হত্যা চেষ্টার মামলাসহ মোট ২১টি মামলা। তবে আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে করা সব মামলা রাজনৈতিক এবং সবকটি মামলায় তিনি জামিন নিয়েছেন। ২১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী খাজা হাবিবুল্লাহর বিরুদ্ধে ২০০১ সালের একটি হত্যা মামলাসহ মোট তিনটি মামলা আছে। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের মীর আশরাফ আলী আজমের বিরুদ্ধে আছে মোট সাতটি মামলা। এর মধ্যে একটি হত্যা মামলা (২০০৬ সালে) এবং একাধিক হত্যা চেষ্টার মামলা রয়েছে। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মোহনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলার মধ্যে একটি হলো হত্যা মামলা (২০০২ সালে)। একটি করে হত্যা মামলা আছে ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুস সাহেদ (২০১৩ সালে) ও ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ফারুকের (২০০১ সালে) বিরুদ্ধে। একটি হত্যা মামলা (২০০৫ সাল) ও দুটি হত্যা চেষ্টার মামলাসহ পাঁচটি মামলা আছে ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মীর হোসেনের বিরুদ্ধে। জানতে চাইলে মীর হোসেন বলেন, গত দুই বছরে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় তাঁর বিরুদ্ধে এসব মামলা করা হয়েছে। জামিন না থাকায় তিনি এখন এলাকায় ঢুকতে পারছেন না। পুলিশ তাড়া করে বেড়াচ্ছে। গতকাল সোমবার আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করা হলেও তা নাকচ হয়ে যায়। এর বাইরে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী গোলাম হোসেনের নামে ১০টি মামলার মধ্যে নয়টিই হত্যা চেষ্টার মামলা। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের হারুনুর রশিদের বিরুদ্ধে ১৫টি হত্যা চেষ্টার মামলাসহ মোট ২৫টি মামলা আছে। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের লোকমান হোসেন ফকিরের বিরুদ্ধে আছে ৩০টি হত্যা চেষ্টাসহ ৪৫টি মামলা। এ ছাড়া ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেনের বিরুদ্ধে চারটি, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে পাঁচটি, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের মকবুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে তিনটি, ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের আতিক উল্লাহর বিরুদ্ধে সাতটি হত্যা চেষ্টার মামলা রয়েছে। এঁদের বিরুদ্ধে একাধিক অন্য মামলাও আছে।

No comments:

Post a Comment