Monday, April 13, 2015

সিইসির কথা না শুনেই চলে গেলেন তাঁরা:প্রথম অালো

নির্বাচন কমিশন আয়োজিত মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) বক্তব্য না শুনেই চলে গেলেন অধিকাংশ মেয়র পদপ্রার্থী। গতকাল রোববার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের জন্য এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই মতবিনিময় সভায় মেয়র প্রার্থীরা নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন। তাঁদের বেশির ভাগই বক্তব্য দিয়েই মিলনায়তন থেকে বেরিয়ে যা
ন। কমিশনের কর্মকর্তারা সিইসির বক্তব্য ও নির্দেশনা শুনে যাওয়ার অনুরোধ করলেও তাঁরা শোনেননি। সভায় উপস্থিত ১৬ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আনিসুল হক, বিএনপি-সমর্থিত তাবিথ আউয়াল, জাতীয় পার্টি-সমর্থিত বাহাউদ্দিন, বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরীসহ বেশির ভাগ প্রার্থীই চলে যান। কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনেকেই তাঁদের অনুসরণ করেন। এর মধ্যেই নির্বাচন কমিশন মতবিনিময় সভা চালিয়ে যায়। ২৫ জনের মতো কাউন্সিলর প্রার্থী বক্তব্য দেন। সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ যখন বক্তব্য শুরু করেন, ততক্ষণে মিলনায়তন অনেকটাই ফাঁকা। এ সময় উপস্থিত কিছু প্রার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁদের কেউ কেউ উচ্চ স্বরে সিইসির উদ্দেশে বলেন, ‘এঁরা নির্বাচিত হলে কী করবেন, তা এখনই বোঝা যাচ্ছে।’ সভা শেষ হওয়ার পর বেরিয়ে যাওয়ার সময় একজন নির্বাচন কমিশনার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেসব মেয়র প্রার্থী চলে গেছেন, তাঁরা খুবই অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমন ব্যবহার করা উচিত হয়নি।’ গত শনিবার চট্টগ্রামেও এ ধরনের মতবিনিময় সভা হয়েছে। তবে সেখানে প্রার্থীরা নিজেদের বক্তব্য দেওয়ার পাশাপাশি সিইসির বক্তব্যও শোনেন। জানতে চাইলে আনিসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সময় স্বল্পতা ছিল। কমিশনও বলেছে যে প্রার্থীরা খুবই ব্যস্ত। তাই আশা করি, কমিশন আমাদের সমস্যাটা বুঝতে পারবেন।’ জানতে চাইলে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘আমরা আমাদের বক্তব্য দিয়েছি। তবে আরও সময় থাকতে পারলে ভালো হতো।’ মিলনায়তনের ভেতরে মত প্রকাশ করতে গিয়ে মাহী চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনাররা অপ্রয়োজনীয় কথা বলেছেন। এগুলোর প্রয়োজন ছিল না।’ প্রার্থীদের হয়রানি না করার নির্দেশ: সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অযাচিত হয়রানি না করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি পুলিশের উদ্দেশে বলেন, ‘এমন পরিবেশ সৃষ্টি করুন যেন সবাই সমানভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারেন।’ তিনি আশ্বাস দেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে সবাই পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। গণমাধ্যমকেও প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় সমান সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান সিইসি। বাংলাদেশ টেলিভিশনকে সব প্রার্থীর নাম প্রচার করতে বলেন। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে কমিশন সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। তিনি প্রার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা আইন ভঙ্গ করবেন না। আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না।’ কমিশনার আবদুল মোবারক বলেন, ‘অনেকের কাজ শুধু সমালোচনা করা। এরা ভোট না হলে বলে ভোট কেন হচ্ছে না। তফসিল হলে বলে, তাড়াহুড়ো করা হচ্ছে। এরা আবার সাধারণ কোনো মানুষ নয়, ডিগ্রিধারী মানুষ। এঁদের বক্তব্য নির্বাচনে বাধা দেওয়ার শামিল।’ নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব না। এ জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। আইন মেনে চলতে হবে।’ অপর দুই নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী ও আবু হাফিজ প্রার্থীদের আচরণবিধি বিশেষ করে ৩, ৯ ও ১০ নম্বর ধারা মেনে চলার পরামর্শ দেন। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ তাঁরা কঠোরভাবে মেনে চলছেন। এখন পর্যন্ত বড় ধরনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, ‘ভয় দেখিয়ে, বল প্রয়োগ করে ভোটারদের প্রভাবিত করতে দেওয়া হবে না।’ অনুষ্ঠানে ঢাকার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ও উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহ আলম বক্তব্য দেন। সমান সুযোগের কথা বললেন প্রার্থীরা: প্রার্থী আনিসুল হক প্রচারণা ও নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনায় নির্বাচন কমিশনকে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির আহ্বান জানান। তিনি গণমাধ্যমকে সব প্রার্থীর সঙ্গে সমান আচরণের কথা বলেন। তাবিথ আউয়াল বলেন, তাঁকে ২০ দল ও আদর্শ ঢাকা আন্দোলন নামে একটি সংগঠন সমর্থন দিয়েছে। তিনি বলেন, তাঁর দলের নেতা-কর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, কেউ বা আত্মগোপনে আছেন। এঁদের জামিনের সুযোগ করে দেওয়া অথবা আদালতের মাধ্যমে কোনো একটি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান। সিপিবি-বাসদের সমর্থিত প্রার্থী আবদুল্লাহ আল ক্বাফী রতন বলেন, তিনি বলেছিলেন গণভবনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে আনিসুল হককে পরিচয় করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। এরপর তাঁর বাড়িতে পুলিশ গিয়েছিল। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে ভয় দেখাতে পুলিশের এ ধরনের অভিযান যেন না হয়, সে জন্য কমিশনকে ভূমিকা রাখতে হবে। মাহী চৌধুরী প্রার্থীদের ব্যয় পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে ‘সিটিজেন কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব করেন। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে কাজী মো. শহিদুল্লাহ ভোটের দিন সেনা মোতায়েনের পক্ষে মত দেন। আরেক মেয়র প্রার্থী আনিসুজ্জামান খোকন বলেন, ‘আমার খবর কোনো গণমাধ্যম প্রচার করে না। কোথাও নাম আসে না। আমার স্ত্রী বলেছে, তুমি ভণ্ডামি করছ, কীসের ইলেকশন করো। তোমার কোনো নামই দেখি না।’ আওয়ামী লীগ, বিএনপির বাইরে অন্য প্রার্থীদের খবরও প্রচার করার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে নাদের চৌধুরী, জোনায়েদ সাকী, মোয়াজ্জেম হোসেন খান, ফজলে বারী, জামান ভূঁইয়া, বাহাউদ্দিন আহমেদ, শামসুল আলম, কামরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন। কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ জন বক্তব্য দেন। তাঁরা সবাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মাসুমা খাতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি ঘর থেকে বের হয়ে আসতে চাই। কাজ করতে চাই। অথচ নির্বাচন কমিশন আমাকে প্রতীক দিয়েছে শিল-পাটা। কমিশন আমাকে আবারও ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে চায়।’ মোহাম্মদপুরের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের একজন কাউন্সিলর প্রার্থী নাম প্রকাশ না করে অভিযোগ করেন, তাঁর এলাকায় এখনো গোলাগুলির শব্দ হয়। অথচ পুলিশ কিছুই করছে না।

No comments:

Post a Comment