প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিটি নির্বাচনে নীরব প্রতিশোধ নেওয়া প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার বক্তব্য নিয়ে বলেছেন, ‘িকসের প্রতিশোধ? কে কার প্রতিশোধ নেবে? ’ তিনি বলেন, ২০০৮ সালে জনগণ তাদের কেন ভোট দেয় নাই এবং ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে কেন জনগণ ভোট দিল, সে জন্য মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে প্রতিশোধ নিতে চেয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কথা নেই, বার্তা নেই গত ৫ জানুয়ারি থেকে আবার তিনি মানুষ হত্যা শুরু করেন। তাজা মানু
ষগুলোকে পুড়িয়ে হত্যা করা হলো। ১৫৭ জন নিরীহ নাগরিককে পুড়িয়ে মারা হলো। এখন যদি জনগণ প্রতিশোধ নেয় তা কার ওপর নেবে সেটা তাঁর ভেবে দেখা উচিত। এসব ঘটনার আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন অনুযায়ী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। গতকাল রোববার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সাম্প্রতিক ইন্দোনেশিয়া সফর নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হলেও প্রশ্নোত্তর পর্বে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রসঙ্গও উঠে আসে। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দলীয় সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে হরতাল-অবরোধে নাশকতায় মানুষ হত্যার ঘটনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘জালিম’ ও ‘খুনি’ বলে মন্তব্য করেছেন। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘খালেদা জিয়া আন্দোলনের নামে মানুষ যেভাবে পোড়াল, জঘন্য কাজ! বিশ্বে কোথাও কি কেউ দেখেছে? উনি যে মানুষকে পোড়ালেন, তিনি আবার মানুষের কাছে ভোট চান কীভাবে? কোন মুখে ভোট চান? যাদের মধ্যে বিবেকবোধ আছে, মনুষ্যত্ব আছে, তারা কেউ খালেদা জিয়ার ডাকে সাড়া দেবে না।’ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে খালেদা জিয়ার অভিযোগের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, নীলনকশা করে কীভাবে নির্বাচনে জিততে হয়, এটা তাঁর চেয়ে কেউ ভালো জানেন না। ১৯৭৯ সালে তাঁর স্বামীর দেওয়া হ্যাঁ-না ভোটে ১২০ শতাংশ ভোট পড়ে। তাঁর আমলে ’৯১ সালে মাগুরা ও মিরপুর উপনির্বাচনে কী হয়েছিল, তা দেশবাসী জানে। ২০০১ সালে নির্বাচিত হয়ে তাঁর প্রিয় ব্যক্তিত্ব ফালুকে (মোসাদ্দেক আলী ফালু) কীভাবে জয়ী করা হয়েছিল, এটাও মানুষ জানে। আর ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে কয় পার্সেন্ট ভোট পড়েছিল—এই প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘আমি প্রায়ই বলি ঋতু বদলায়, স্মৃতিও বদলায়। তবে আমার ভরসা দেশের মানুষ। তারা সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে না।’ গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে একপেশে সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনী প্রচারে খালেদা জিয়ার আক্রান্ত হওয়ার ছবি সংবাদমাধ্যমে এলেও বাংলামোটরে তাঁর নিরাপত্তাকর্মীদের (সিএসএফ) গাড়ির নিচে চাপা পড়া এক তরুণের ছবির সংবাদ পরিবেশন করা হয়নি। এ সময় এই ছবি সাংবাদিকদের দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ছবি তো আপনারা দেখাননি।’ কারওয়ান বাজারের ঘটনার অপর একটি ছবি সাংবাদিকদের দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিএসএফ জনগণকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে। এটাও আপনারা ছাপাননি। পরে জনগণ যখন একসঙ্গে হয়ে প্রতিরোধ করেছে, সেটাই বড় হয়ে গেল। খালেদার আগুনে স্বজনহারা মানুষ যদি তাঁকে কালো পতাকা দেখায় তখন আমরা কী করব?’ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী আচরণবিধি পড়ে শুনিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়া নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচার চালালেও তা গণমাধ্যমে আসেনি। তিনি ১৯৬টি মোটরসাইকেল ও ৯৫টি গাড়ি নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। খালেদা জিয়া নির্বাচনী আইন মানেন না। এ আইন তো তাঁর জন্যও প্রযোজ্য। সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি মিথ্যার ফুলঝুরি দিয়ে গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের ভুয়া বিবৃতি এবং ভারতের বিজেপিপ্রধান অমিত শাহের ফোনালাপ নিয়ে তিনি মিথ্যাচার করেছেন। দেশের ভেতরে তো মিথ্যাচার করেই যাচ্ছেন, বিদেশিদেরও ছাড় দেননি। চমৎকারভাবেই উনি মিথ্যা বলতে পারেন। আগুনে মানুষ মারার জন্য খালেদা জিয়া সরকারকে দায়ী করায় প্রধানমন্ত্রী তার জবাব দিয়ে বলেন, ‘মানুষ খুন করেছেন উনি, আর দায়দায়িত্ব আমার! যারা হাতেনাতে ধরা পড়েছে, সেই ৬৬৫ জন বিএনপি-জামায়াতের। সাধারণ মানুষের হাতে বিএনপির ৭০ জন গণধোলাই খেয়েছে। বোমা বানাতে গিয়ে পুরান ঢাকায় তাদের দলের নেতার হাতের কবজি উড়ে গেছে। চট্টগ্রামে বোমাসহ বিএনপির নেতা ধরা পড়ল। এত কিছুর পরও উনি মিথ্যা কথা খুব চমৎকারভাবে বলতে পারেন। ভোটারদের অর্থ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে খালেদার বক্তব্যের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, উনি অর্থ নেওয়াটা ভালো বোঝেন। ক্ষমতায় থাকতে অর্থ নিয়ে গেছেন। অর্থ নেওয়া, বেআইনি করাটা ওনার স্বভাব। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারচুপির আশঙ্কা নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জনগণ যাকে চায় তাকেই ভোট দেবে। এখানে জাতীয় নির্বাচনের কোনো প্রতিফলন ঘটবে না। আর নির্বাচনে হার-জিত আছেই। জনগণ ভোট দিলে জিতব, না দিলে হারব।’ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ভূমিকম্প মোকাবিলায় তাঁর সরকারের নানা প্রস্তুতি ও পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ইন্দোনেশিয়া সফর সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। এ সফরে প্রধানমন্ত্রী ইন্দোনেশিয়া, চীন, ইরান ও মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট এবং জাপান, সিঙ্গাপুর, ফিলিস্তিন ও নেপালের প্রধানমন্ত্রীসহ কাতারের উপপ্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার বক্তব্য বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন ছিল ইন্দোনেশিয়া সফর নিয়ে। কিন্তু তাঁর পুরো বক্তব্য ছিল খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য রাজনৈতিক। এসব কথা নতুন কী? নির্বাচন সামনে রেখে মানুষের সহানুভূতি পাওয়ার আশায় তিনি পুরোনো কথাগুলো বলেছেন। যেগুলো তিনি ও মন্ত্রীরা আন্দোলনের শুরু থেকেই বলে আসছিলেন। এর মধ্য দিয়ে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যে প্রতিহিংসার চর্চা চলে আসছিল, তারই প্রকাশ ঘটল আবার।’ বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের সদস্যসচিব শওকত মাহমুদ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে তাঁর পুরোনো অবস্থান বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বক্তব্যে সংলাপ-সমঝোতার একটি আবেদন আছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে তা আবারও অগ্রাহ্য হয়েছে, যা মানুষ আশা করেনি। বরং প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ায় মনে হয়েছে, খালেদা জিয়ার ওপর তিনি যে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চালিয়ে যাচ্ছেন, তা অব্যাহত রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর অবস্থান ও ভাষা থেকে এক বিন্দুও সরেননি।’
No comments:
Post a Comment