আমিনুল ইসলাম বেগ একটি মাল্টিন্যাশনাল কোমল পানীয় কম্পানির বাংলাদেশের আইটি বিভাগের চিফ। মালয়েশিয়া থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে লেখাপড়া করেছেন। আর ভেতরে ভেতরে দেশবিরোধী ভয়ংকর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। আমিনুল ও তাঁর সহযোগী সাকিব বিন কামাল দেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছিলেন। এমনকি তাঁরা ইরাক-সিরিয়ায় গণহত্যা চালানো আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসকে সমর্থন করে সেখানে 'জিহাদের' উদ্দেশ্যে ল
োক পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বাংলাদেশেও 'ইসলামী খেলাফত' প্রতিষ্ঠায় 'জিহাদ' করার জন্য আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণদের উদ্বুদ্ধ করে আসছিলেন। এ জন্য তাঁরা গড়ে তুলেছেন ২০ জনের একটি গ্রুপ। গতকাল সোমবার সকালে গ্রেপ্তার এই দুজনকে ডিএমপি কার্যালয়ে হাজির করে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কর্মকর্তারা। এর আগে রাজধানীর উত্তরা থেকে আমিনুল ইসলাম বেগ ও মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া থেকে সাকিব বিন কামালকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে গ্রেপ্তার আমিনুল ইসলাম বেগ ও সাকিব বিন কামালকে তিন দিন করে রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল তদন্তের স্বার্থে ১০ দিন করে রিমান্ড চাওয়া হলে ঢাকার মহানগর হাকিম মোস্তাফিজুর রহমান আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, গত রবিবার রাতে রাজধানীর উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর সড়কের একটি বাসা থেকে আমিনুল ইসলামকে (৫০) প্রথম গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাঁর সহযোগী সাকিব বিন কামালকে (৩৩) মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, চার্জার, ডায়েরি ও তিনটি দামি মোবাইল ফোনসেটসহ কিছু জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়। ডিবি সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আমিনুল ইসলাম উচ্চশিক্ষিত। মালয়েশিয়া থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে মাল্টিন্যাশনাল একটি কোমল পানীয় কম্পানি বাংলাদেশের আইটি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁর সহযোগী সাকিব দেশের একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে লালমাটিয়ার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিক্ষকতা করছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে এ দুজনের জঙ্গি কানেকশন সম্পর্কে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আমিনুল ইসলাম বেগ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা'আতুল মুজাহিদীনের (জেএমবি) আঞ্চলিক সমন্বয়ক। এই জঙ্গি নেতা আইএসের প্রতিনিধি হিসেবে দেশে কাজ করছিলেন। আর সাকিব জেএমবির পাশাপাশি আইএসের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁরা দুজনই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ। আইএসের নির্দেশিত খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে, অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য সংগ্রহ করে নাশকতার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে দেশে কথিত খেলাফত প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল তাঁদের। পাশাপাশি ইরাক-সিরিয়ায় জিহাদের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে লোক পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। পাশাপাশি বাংলাদেশেও 'ইসলামী খেলাফত' প্রতিষ্ঠায় জেহাদ করার জন্য শিক্ষিত তরুণদের উদ্বুদ্ধ করছিলেন। ইতিমধ্যে ২০ সদস্যের একটি আইএস গ্রুপ গড়ে তোলার কথা স্বীকার করেছেন তাঁরা। ডিবি সূত্র জানায়, জেএমবি সমন্বয়ক আমিনুল যে ২০ জনের একটি গ্রুপ তৈরি করেছেন তার মধ্যে সাকিব বিন কামাল একজন। তিনি স্কুলের শিক্ষকতার পাশাপাশি আমিনুলকে সব বিষয়ে সহযোগিতা করতেন। ২০ জনের এ গ্রুপের সবাই আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। তাঁরা জিহাদের জন্য জঙ্গি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। নাম ঠিকানাসহ অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আমিনুল ইসলাম ইন্টারনেটে আইএসের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। ডিবির সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এর আগে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা এবং গাজীপুর এলাকা থেকে চার জঙ্গির কাছ থেকে পাওয়া তথ্য সম্পর্কে অনুসন্ধান চলছিল। দীর্ঘ অনুসন্ধান ও আমিনুলকে পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখা হয়েছিল। অবশেষে নিশ্চিত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে গত রবিবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বলেন, আইএসের কাছ থেকে অর্থ ও মারাত্মক অস্ত্র সংগ্রহ করে এবং বিস্ফোরকদ্রব্যের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা করে ক্ষতিসাধন, হুমকি সৃষ্টি ও 'খেলাফত' রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য। তাঁরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবির সদস্য হলেও বর্তমানে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আইএসের সঙ্গে গোপন যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে তাদের সংগঠন তৈরি, সদস্য সংগ্রহ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন বলে স্বীকার করেছেন। তাঁদের সংগঠনের অনেক সদস্য বর্তমানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তৎপর রয়েছেন। সম্প্রতি যেসব ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ও বিশিষ্ট নাগরিকদের জঙ্গি হামলার হুমকি দেওয়া হয়েছে এসব কর্মকাণ্ডে গ্রেপ্তারকৃতদের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের কাছ থেকে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। রিমান্ডে নিয়ে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তিন দিনের রিমান্ড : আদালত প্রতিবেদক জানান, গ্রেপ্তারকৃত আমিনুল ইসলাম বেগ ও সাকিব বিন কামাল নামের দুইজনের প্রত্যেককে তিন দিন করে রিমান্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল রাজধানীর পশ্চিম মডেল থানার একটি সন্ত্রাসবিরোধী আইনের এক মামলায় আসামিদের হাজির করে তদন্তের স্বার্থে ১০ দিন করে রিমান্ড চায় পুলিশ। ঢাকার মহানগর হাকিম মোস্তাফিজুর রহমান আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতে রিমান্ড শুনানির সময় আসামিদের পক্ষে কোনো আবেদন ছিল না। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, 'আটককৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ-জেএমবির পরীক্ষিত সদস্যদের সমন্বয় করে আইএসের জন্য কর্মী সংগ্রহ করে সেখানে পাঠানোই ছিল তাঁদের মিশন বা মূল কাজ। ইতিমধ্যে তাঁরা আইএসের জন্য ২০ জন কর্মী সংগ্রহ করেছেন। এদের মধ্যে একজনকে আটক করা হয়েছে।' 'আসামিরা আইএস প্রধান আবু বকর আল বাগদাদীকে খলিফা মেনে তাঁরা বাংলাদেশে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছেন। সারা বিশ্বে একটি অখণ্ড ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠাই তাঁদের স্বপ্ন। আর এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাঁদের হত্যাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা রয়েছে।' 'মামলার তদন্তের স্বার্থে আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাঁদের কাছ থেকে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে। প্রার্থিত রিমান্ড মঞ্জুর করা হোক।'
No comments:
Post a Comment