Thursday, May 14, 2015

পল্লবীতে বাসায় ঢুকে প্রকৌশলীর স্ত্রী ও মামাকে হত্যা:প্রথম অালো

দিনদুপুরে বাসায় ঢুকে ঢাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ কোম্পানির (ডেসকো) এক উপসহকারী প্রকৌশলীর স্ত্রী ও মামাকে কুপিয়ে এবং ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার রাজধানীর পল্লবীতে এই জোড়া হত্যাকাণ্ড ঘটে। প্রকৌশলীর পাঁচ বছর বয়সী একমাত্র ছেলের বাঁ চোখের ওপরের দিকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। নিহত দুজন হলেন ডেসকোর উপসহকারী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী সুইটি আক্তার (২৫) ও মামা আমিনুল ইসলাম (৪০)। প্রকৌ
শলীর ছেলে সাদকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী আবদুল খালেক এবং আশরাফুল আলম চিশতী ওরফে শাহীন নামের এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে। জাহিদুল জানান, শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ ও প্রকাশের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড পরিচয়ে মুন্না নামের এক ব্যক্তি মার্চে তাঁর কাছে চাঁদা দাবি করেছিল। তা না দেওয়ায় স্ত্রী-সন্তানকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল। পুলিশ বলেছে, ঘটনার নেপথ্যে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও চাঁদাবাজির কথা শোনা যাচ্ছে। পারিবারিক সূত্র জানায়, সুইটি বৈদ্যুতিক সামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার লিমিটেডের চেয়ারম্যান ছিলেন। আশরাফুল আলম ওই প্রতিষ্ঠানের অংশীদার। পল্লবী থানার পুলিশ জানায়, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, গতকাল বেলা দেড়টার দিকে একটি মোটরসাইকেলে দুই যুবক এসে আত্মীয় পরিচয়ে পল্লবীর ২০ নম্বর সড়কের সাততলা একটি বাড়িতে ঢোকে। তারা লিফটে করে ছয়তলায় জাহিদুলের বাসায় ঢুকে তাঁর স্ত্রী ও মামাকে কোপায় এবং ছুরিকাঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁরা মারা যান। আমিনুলের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তাক্ত জখম আছে। সুইটির শরীরে একটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সুইটিকে শ্বাসরোধও করা হয়েছে। এ সময় একটি চোট সাদের বাঁ চোখের ওপরের দিকে লেগেছে। এরপর সাদ বাথরুমে ঢুকে পড়ে। ঘটনাস্থল থেকে দুটি ছুরি ও একটি বঁটি উদ্ধার করা হয়েছে। ফ্ল্যাটটি জাহিদুলদের কেনা। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে দুজনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার নিশারুল আরিফ সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার নেপথ্যে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও চাঁদাবাজির কথা শোনা যাচ্ছে। সব কটি বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরেজমিনে জানা গেছে, আমিনুল ওই বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন। গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে জাহিদুল দুপুরের খাবার খেতে ডেসকোর রূপনগর কার্যালয় থেকে নিজ বাসার সামনে গিয়ে কলবেল চাপেন। অনেকক্ষণ পরও কেউ ভেতর থেকে দরজা না খোলায় তিনি দরজার হাতল ঘুরিয়ে দেখেন, দরজা খোলা। তিনি ভেতরে ঢুকে দেখেন, স্ত্রীর লাশ তাঁদের ছেলের ঘরের খাটে পড়ে আছে। তাঁর মামার লাশ পড়ে আছে তাঁদের শয়নকক্ষের মেঝেতে। বাথরুমে কাঁদছিল ছেলে। তিনি ডাকাডাকি করে বাথরুম থেকে ছেলেকে বের করে আনেন। কান্না ও ডাকাডাকি শুনে অন্যান্য ফ্ল্যাটের লোকজন আসেন। পরে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। বিকেল চারটার দিকে ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায় জাহিদুলের আত্মীয়স্বজন ও ডেসকোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভিড়। বাইরে উৎসুক জনতার ভিড়। ঘটনাস্থলে যান পুলিশ ও র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তারা। বাসার ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় রক্তের ছোপ দেখা যায়। তবে আলমারিসহ বিভিন্ন আসবাব ঠিক ছিল। জাহিদুল সাংবাদিকদের জানান, গত মার্চ মাসে শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ ও প্রকাশের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড পরিচয়ে মুন্না নামের একজন তাঁকে ফোন করে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ওই লোক জানান, রাজনৈতিক কারণে তাঁদের ১ হাজার ৫০০ কর্মী জেলে আছে। তাদের ছাড়াতে টাকা দরকার। টাকা না দিলে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় তিনি পল্লবী থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছিলেন। ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ব্যাপারে জানতে চাইলে জাহিদুল বলেন, বেশ কিছুদিন তিনি ও তাঁর স্ত্রী আলাদাভাবে ব্যবসা করতে চেয়েছিলেন। তিনি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, স্ত্রী সুইটি চেয়ারম্যান। আর আশরাফুল মহাব্যবস্থাপক। গত মঙ্গলবার রাতে ব্যবসা আলাদা করার ব্যাপারে ফ্ল্যাটেই আশরাফুলের সঙ্গে তাঁদের বৈঠক হয়। একপর্যায়ে আশরাফুল কিছুটা উত্তেজিতও হয়ে পড়েছিলেন। পরে তিনি তাঁকে শান্ত করায় কোনো বিরোধের দিকে যায়নি। তিনি জানান, ব্যবসায়িক কারণে বিভিন্ন লোক তাঁর বাসায় যেতেন। তাঁদের অনেককেই চিনতেন নিরাপত্তাকর্মী। ওই বাড়ির ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, বাড়িতে আবদুল খালেক ও মোসলেম উদ্দিন নামে দুজন নিরাপত্তাকর্মী আছেন। কেউ এলে তাঁরা ইন্টারকমে ফোন করে অনুমতি পেলে তবে ওপরে উঠতে দেন।

No comments:

Post a Comment