Thursday, May 21, 2015

অন্যের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা চলছে:প্রথম অালো

ভূমধ্যসাগর দিয়ে অবৈধভাবে আসা অভিবাসীদের গ্রহণ করা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যদের মতান্তর বেড়ে চলেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনপ্রণেতারা গতকাল বুধবার অভিযোগ করেছেন, সাগরপথে আসা অবৈধ অভিবাসী গ্রহণের কোটার প্রস্তাব নাকচ করে আঞ্চলিক জোটটির কয়েকটি দেশ অন্যের ওপর দায় চাপাতে চাইছে। এদিকে মঙ্গলবার ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজি বলেছেন, অভিবাসী ও শরণার্থীবিষয়ক অনেক প্রস্তাব জোটে গৃহীত হলেও তা বাস্
তবায়নে কিছু সদস্যরাষ্ট্র ‘গড়িমসির’ করছে। এ সময় তিনি মার্চে সাগরে ডুবে যাওয়া ৬০০ অভিবাসীর লাশ তুলে আনার ঘোষণা দিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের একদল আইনপ্রণেতা গতকাল অভিযোগ করেছেন, সাগরপথে আসা অবৈধ অভিবাসী গ্রহণের কোটার প্রস্তাব নাকচ করে আঞ্চলিক জোটটির কয়েকটি দেশ অন্যের ওপর দায় চাপাতে চাইছে। রক্ষণশীল ইউরোপিয়ান পিপলস পার্টির নেতা জার্মানির মানফ্রেড ওয়েবার বলেন, ‘সদস্যরাষ্ট্ররাই কি না, ইউরোপের উদ্যোগের পক্ষে যাচ্ছে না। কিন্তু কমিশন যে ভালো উদ্যোগ নিয়েছে, তার প্রতি আমাদের সমর্থন থাকবে।’ ইউরোপিয়ান পিপলস পার্টি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বৃহত্তম দল। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে প্রধান দলগুলোর সদস্যরা এ বিষয়ে গত সপ্তাহে দেওয়া ইউরোপীয় কমিশনের প্রস্তাব সমর্থন করেছেন। এতে বলা হয়েছে ইতালি, গ্রিস ও মাল্টার মতো একেবারে সামনে থাকা দেশগুলোর অভিবাসীর বোঝা যেন জোটের অন্য সদস্যরাও ভাগ করে নেয়। গত কয়েক দিনে এ ধরনের প্রস্তাব থেকে দূরে সরে যাওয়ায় ফ্রান্স ও স্পেন বিশেষ রকম সমালোচনার মুখে পড়েছে। যুক্তরাজ্যসহ জোটের আটটি দেশ এ ধরনের কোটার বিরোধী। জার্মানি নেবে সর্বোচ্চ: সংঘাত ও দাঙ্গাপীড়িত আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অসংখ্য মানুষের ভূমধ্যসাগরে সলিলসমাধির ঘটনায় ইউরোপে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। এর মুখে ইইউর পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের যৌথ বৈঠকে অভিবাসনপ্রার্থীদের মৃত্যু রুখতে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াও পরিকল্পিতভাবে অভিবাসীদের পুনর্বাসনে ইউরোপজুড়ে পাঁচ হাজার স্থান নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়। গত বছর যাঁরা অবৈধভাবে ইউরোপে গেছেন, তাঁদের মধ্যে পাঁচ হাজার মানুষকে থাকতে দেওয়ার প্রস্তাব গৃহীত হয়। ইইউর পরিসংখ্যান দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, গত বছর ইউরোপে ৬ লাখ ২৭ হাজার মানুষ রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন। ২০১৩ সালের তুলনায় এ সংখ্যা ৪৪ শতাংশ বেশি। কিন্তু ব্রাসেলসে গত সপ্তাহে ইউরোপীয় কমিশনের অভিবাসী সমস্যা-সংক্রান্ত সর্বশেষ বৈঠকে ৪০ হাজার অভিবাসীকে ইইউভুক্ত ২৮টি দেশে জনসংখ্যার তারতম্য অনুযায়ী বণ্টনের যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, তা মানতে রাজি হচ্ছে না প্রায় ১২টি দেশ। এই অভিবাসী বণ্টন বিষয়ে ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে জার্মানি সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার অভিবাসী নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। দক্ষিণ ইউরোপের ভূমধ্যসাগরের উপকূলীয় দুই দেশ গ্রিস ও ইতালিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাগর পাড়ি দিয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের চাপ কমানোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু ইইউভুক্ত কয়েকটি দেশের ‘অসহযোগিতামূলক’ মনোভাবের বিরুদ্ধে ইউরোপের মানবাধিকার ও অভিবাসীবিষয়ক সংগঠনগুলো তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। লাশ তুলবে ইতালি: এমন প্রেক্ষাপটে ভূমধ্যসাগরে গত মাসে ডুবে মরা ৬০০-এর বেশি আশ্রয়প্রার্থীর লাশ সাগরের তলা থেকে তুলে আনার ঘোষণা দিয়েছে ইতালির সরকার। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজি মঙ্গলবার এই ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, বিশ্বকে তিনি জানাতে চান, এ ঘটনা আর চলতে দেওয়া যায় না। মাত্তিও রেনজি বলেছেন, ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়া ৬০০ অভিবাসীর লাশ উত্তোলন এবং দ্বীপ দেশ মাল্টায় শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে দেড় থেকে দুই কোটি ডলার খরচ হবে। এই খরচ ইইউ বহন না করলে ইতালি তা বহন করবে। গত ১৮ এপ্রিল ভূমধ্যসাগরে লিবিয়ার উপকূলে প্রায় ৮০০ আশ্রয়প্রার্থীবোঝাই একটি নৌযান ডুবে যায়। তখন মাত্র ২৮ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

No comments:

Post a Comment