Monday, May 4, 2015

স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কাউন্সিলর প্রার্থীরা হেরেছেন:প্রথম অালো

সিটি নির্বাচনে চট্টগ্রামের ৪১টি ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের মধ্যে ২২ জনই নতুন মুখ। তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন মামলার আসামিসহ পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীও রয়েছেন। হেরেছেন স্বচ্ছ ভাবমূর্তির রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত কয়েকজন নেতা। এমন ফলাফলের জন্য ভোটকেন্দ্র দখল, বহিরাগত ক্যাডারদের প্রভাবসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। এবারের নির্বাচনে টানা চারবারের কাউন্সিলর ৩৩ ন
ম্বর ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডের জহিরুল আলম দোভাষ, ২২ নম্বর এনায়েত বাজার ওয়ার্ডের আবদুল মালেক, তিনবারের কাউন্সিলর ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ হোসেন (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত মেয়র) পরাজিত হয়েছেন। ভোটকেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের রাজনীতিতে পেরে উঠতে না পারায় তাঁদের বিদায় নিতে হয়েছে বলে কর্মী-সমর্থকেরা দাবি করেছেন। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একজন নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনীতিতে জহিরুল আলম দোভাষ, মোহাম্মদ হোসেন, নজরুল ইসলাম ও আবদুল বারেক স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষ। সংগঠন ও সমাজের জন্য নিবেদিত প্রাণ তাঁরা। নির্বাচনের পাগলা হাওয়ার তাণ্ডবে তাঁরা উড়ে গেছেন। এটা আমাদের জন্য অশনিসংকেত।’ স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত এমন প্রার্থীদের পরাজয়ের বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি অধ্যাপক সিকান্দার খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘২৮ এপ্রিলের নির্বাচনে অনেকগুলো অঘটন ঘটেছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বলে নানা সূত্র থেকে জানতে পেরেছি। নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে জনগণের মতামতের প্রতিফলন সঠিকভাবে ঘটে না। যাঁরা জিতেছেন, তাঁরা কীভাবে জিতেছেন তা কেবল তাঁরাই বলতে পারেন। এবারের নির্বাচনে যে অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তা পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।’ আগ্রাবাদ-পাঠানটুলী ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের টানা তিনবারের কাউন্সিলর নজরুল ইসলামকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেছেন পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী আবদুল কাদের ওরফে ‘মাছ কাদের’। তাঁর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা বিচারাধীন আছে। একটি অপহরণ মামলায় জননিরাপত্তা ট্রাইব্যুনাল ২০০০ সালে মাছ কাদেরকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন তিনি। আপিলটি শুনানির অপেক্ষায় আছে। তাঁর বিরুদ্ধে করা ২৯টি মামলার মধ্যে খালাস পেয়েছেন ২৩টিতে। প্রত্যাহার করা হয়েছে চারটি মামলা। এই নির্বাচনে জয়ী ১২ জন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এর মধ্যে তিন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে করা মামলা উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত রয়েছে। ১১ জন কাউন্সিলর মামলা থেকে খালাস, খারিজ বা অব্যাহতি পেয়েছেন । ১৮ জনের নামে কখনো মামলা ছিল না। এই তথ্য নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামার। ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হাসান মুরাদের কাছে পরাজিত হয়েছেন টানা চারবার নির্বাচিত কাউন্সিলর জহিরুল আলম দোভাষ। তাঁর বাবা জানে আলম দোভাষ ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ। বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রামে এলে জানে আলম দোভাষের বাড়িতে বেড়াতে যেতেন। তিনি টানা চারবার কাউন্সিলর ও নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। নির্বাচনের ফল সম্পর্কে কাউকে দোষারোপ না করে জহিরুল আলম দোভাষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জনগণের রায় মেনে নিতে হবে।’ ২২ নম্বর ওয়ার্ডে টানা চারবারের কাউন্সিলর বিএনপি-সমর্থিত আবদুল মালেক ধরাশায়ী হন আওয়ামী লীগের নতুন প্রার্থী সলিম উল্লাহর কাছে। এ বিষয়ে আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জীবনে এ ধরনের নির্বাচন আর দেখিনি। সকাল ১০টার পর সব কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে নিয়ে প্রতিপক্ষের প্রার্থীর লোকজন জাল ভোটের মহোৎসব চালায়। আমার নিশ্চিত বিজয় ছিনতাই করা হয়েছে।’ বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের টানা তিনবারের কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘অত্যাচার, নির্যাতন, জুলুম ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাকে হারানো হয়েছে। ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয়নি।’ তবে হালিশহর থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহরের নির্বাচিত কাউন্সিলর মো. আবুল হাশেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দু-একটি কেন্দ্র ছাড়া এখানে সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। আমাদের নেতা-কর্মীরা মাঠে ছিলেন। তাই কেন্দ্র দখল করা সম্ভব হয়নি। তবে এক প্রার্থী দুটি কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আমি ও মোহাম্মদ হোসেন মিলে তা প্রতিহত করি।’ ৪০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বিদায়ী কাউন্সিলর আবদুল বারেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোট হলে এই ফল হতো না। কিন্তু ফেনী থেকে আসা বহিরাগত যুবকেরা কেন্দ্র দখল করে আরেক প্রার্থীকে ভোট দেয়। এ কারণে আমি হেরে যাই।’ আওয়ামী লীগ-সমর্থিত পাঁচ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাহেদ ইকবালের নামে একটি, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কফিল উদ্দিন খানের নামে দুটি, ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের মোরশেদ আকতার চৌধুরীর নামে একটি, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনীর নামে একটি এবং ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ হাবিবুল হকের বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে। বিএনপির পাঁচ কাউন্সিলরের মধ্যে তিনজন এবং জামায়াতের একমাত্র কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে বিস্ফোরকদ্রব্য, গাড়ি ভাঙচুর ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা রয়েছে। ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত জামায়াতের মো. শফিউল আলমের বিরুদ্ধে নয়টি মামলা রয়েছে। বিএনপির তিন কাউন্সিলর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইয়াছিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুটি, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের মো. আবুল হাশেমের বিরুদ্ধে দুটি এবং ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ ইসমাইলের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে। হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত রয়েছে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৌফিক আহমদ চৌধুরী, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের নাজমুল হক ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে করা মামলা।

No comments:

Post a Comment