Monday, May 25, 2015

প্রভাবশালীদের দখলে রাতের থানা:যুগান্তর

১২ জুন রাত পৌনে ১০টা। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় ওসির (অপারেশন) এবং তদন্তের রুমে জমজমাট আড্ডা চলছে। আড্ডার ফাঁকে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতারা করছেন তদবির। কথা শুনতে না চাইলে ওসিকে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে একটু চাপও দিচ্ছেন। বিনিময় হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। তদবিরের ফাঁকে নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে উচ্চস্বরে গল্প করছেন। চা-সিগরেট ফুঁকছেন বিরামহীনভাবে। চেয়ারের ওপর পা তুলে বসে হুকুম দিচ্ছেন ওসির অডারলিকে। এ অবস্থায়
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ফোন রিসিভ করতে অনেক সময় ওসিকে রুম ছেড়ে বাইরে চলে যেতে হচ্ছে। থানায় বিভিন্ন কাজে আসা সাধারণ মানুষকে ওসির কক্ষে দাঁড়িয়ে থেকেই কাজ সেরে ফিরতে হচ্ছে। যাত্রাবাড়ী থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাহিদ হোসেন জুয়েল, স্থানীয় থানা আওয়ামী লীগের নেতা কমল গোস্বামী, রফিকুল ইসলাম, ৫০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব আলম, কমল গোস্বামী, সেলিম খান, শেখদি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মান্নান, সাবেক যুবলীগ নেতা মোক্তার হোসেন, স্থানীয় ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম ও মাহবুব আলমসহ ১০-১৫ নেতাকর্মী দুই ওসির রুম দখল করে বসে আছেন। আসর জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। নিজেদের মধ্যে গল্পের ফাঁকে আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম খান ও রফিকুল ইসলাম শনির আখড়া এলাকায় একটি ছিনতাই মামলায় গ্রেফতারকৃত এক আসামি কামালকে ছাড়িয়ে নেয়ার তদবির করছেন। ছিনতাইকারী কামালকে স্থানীয় ইউনিট পর্যায়ের কর্মী দাবি করে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য ওসিকে চাপ দিচ্ছিলেন। অন্যদিকে সাবেক যুবলীগ নেতা মোক্তার হোসেন তদবির করছিলেন সম্প্রতি ২০ দলীয় জোটের সহিংসতা মামলায় এজাহারভুক্ত এক আসামিকে ছাড়াতে। তার দাবি আওয়ামী লীগ কর্মীকে ভুলে নাশকতার মামলায় গ্রেফতার করেছে। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম ও মাহবুব আলমসহ ১০-১৫ নেতাকর্মী তদবির করছেন অন্য মামলার। এদের মধ্যে দুই নেতা মামলায় চার্জশিট থেকে এক আসামিকে বাদ দেয়ার তদবিরে ব্যস্ত। রাত বাড়ে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জমে ওঠে রাজধানীর বিভিন্ন থানার আড্ডা। এক নেতা চলে যান, আসেন আরও দু’জন। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি (অপারেশন) অবনি শংকর কর এবং ওসি (তদন্ত) কাজী শহীদুজ্জামানদের মতো অন্য থানার ওসিরাও তাদেও কক্ষের আড্ডার অসহায় অংশীদার। চুপচাপ দেখে যাওয়া ছাড়া তাদের করার তেমন কিছুই থাকে না। তবে ব্যতিক্রমও আছে। অনেক ওসি এসব আড্ডার মধ্যমণি হয়ে ওঠেন প্রায়ই। এ ধরনের আসরে তারা সক্রিয়ভাবেই অংশ নেন। সব মিলে যাত্রাবাড়ী থানার অবস্থা ভায়বহ। রাতে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে এসব দৃশ্য। পরিচয় দিয়ে এই থানায় গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা দেয়া নেতাদের কাছে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা কমল গোস্বামী যুগান্তরকে বলেন, ‘থানায় কত কাজ থাকে। দল করি, তাই বিভিন্ন কাজেই আসতে হয়। আজ এসেছি (১২ জুন রাত) ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ওসিকে দাওয়াত দিতে।’ অপর নেতা রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, দলের এক কর্মীকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। তাই এ ব্যাপারে তিনি পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলেন। একই কথা বলেন অপর নেতা সেলিম খান। যুবলীগ নেতা মোক্তার হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব আলমের কাছে থানায় আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন. ‘ভাই আমি প্রতিদিন আসি না। মাঝে-মধ্যে আসি। দলের কেউ বিপদে পড়লে আসতে হয়।’ থানায় সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের ভিড় প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে ওসি অবনি শংকর কর কিছুই জানাতে চাননি। শুধু যাত্রাবাড়ী নয়, রাজধানীর ৪৮ থানার চিত্র প্রায় একই। ব্যতিক্রম শুধু ক্যান্টনমেন্ট থানা। রাতে নয়, দিনের বেলাও এই থানায় দলীয় নেতাকর্মীদের দেখা পাওয়া যায় না। বাকি ৪৮টি থানায় প্রায় প্রতি রাতেই বসে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাকর্মীদের আড্ডার আসর। এই আসর থেকেই চলে নানা ধরনের তদবির। কেউ মামলা দেয়ার আবার কেউ মামলা না দেয়ার, অথবা আসামি গ্রেফতার না হয় ছেড়ে দেয়ার তদবির নিয়ে বসেন তারা। আড্ডা এদের কাছে মুখ্য নয়, তদবিরই আসল। এই তদবিরের মাধ্যমেই প্রতি রাতেই মোটা অংকের অর্থও লেনদেন হচ্ছে বলে সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে থানায় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরাই জানিয়েছেন কিভাবে তদবির হয়, কোন কাজের জন্য কত টাকা ধার্য ইত্যাদি বিষয়। জানা গেছে, রাজধানী ঢাকাকে ৮টি ক্রাইম জোনে ভাগ করা হয়েছে। যুগান্তরের প্রতিনিধি ৯ জুন থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত প্রতি রাতে ক্রাইম জোনের অধিকাংশ থানা সরেজমিন ঘুরেছেন। ১৩ দিনের অনুসন্ধানে প্রতিটি থানা থেকে প্রায় একই ধরনের চিত্র উঠে এসেছে। রাতের থানার চিত্রগুলো নিয়ে কথা হয় ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, এ ধরনের ঘটনা পুলিশের জন্য বিব্রতকর। এতে স্বাভাবিক কাজকর্মের ব্যাঘাত ঘটে এবং সাধারণ মানুষের মনে পুলিশ সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি হয়। তিনি বলেন, এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এজন্য অল্প সময়ের মধ্যে তিনি থানার ওসিদের উদ্দেশে এ ব্যাপারে নির্দেশনা জারি করবেন বলেও জানান। ৯০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বাবুল আহমেদ, স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত হোসেন, সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ও রমজান, সেলিম ও মাসুদকে দেখা গেল শ্যামপুর থানার ওসির রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। সেটা ছিল ৯ জুন রাতের ঘটনা। গভীর রাত পর্যন্ত ওসি নূরে আজম মিয়ার কক্ষে বিভিন্ন মামলা প্রসঙ্গে কথা বলছিলেন ক্ষমতাসীন দলের এসব স্থানীয় নেতা। আওয়ামী লীগ নেতাদের মামলা সম্পর্কে কোনো পরামর্শ দেয়ার এখতিয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওসি নূরে আজম মিয়া কথা বলতে চাননি। অবশ্য কয়েকদিন আগে নূরে আজম মিয়া শ্যামপুর থানা থেকে ধানমণ্ডি থানায় বদলি হয়েছেন। ১০ জুন রাত ১১টার দিকে সরেজমিন দক্ষিণখান থানায় গিয়ে দেখা মেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সামসুল হক, আবদুল গাফফার, লুৎফর রহমান, তোফাজ্জল হোসেন, যুবলীগ নেতা মাসুম ব্যাপারী ও ছাত্রলীগ নেতা মিঠুর সঙ্গে। এরাও গল্পের ফাঁকে ফাঁকে তদবির করছেন। একই অবস্থা উত্তরখান থানারও। সরেজমিন পরিদর্শনকালে ওসির কক্ষে যুবলীগ নেতা শিপন মিয়া, ছাত্রলীগ নেতা নাসিম, রাসেল, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মনির হোসেন ওরফে মনির মাস্টার, ফাইজুল ইসলাম, নূরুল ইসলাম, সবুজ, আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে দেখা মেলে। ওসি ইউনুস আলী এ সময় থানায় না থাকলেও সরকারদলীয় এসব স্থানীয় নেতা তার কক্ষে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন। ১১ জুন রাত সোয়া ১০টার দিকে সরেজমিন মিরপুর থানা পরিদর্শনের সময় স্থানীয় নেতা আয়নালকে দেখা যায় ডিউটি অফিসারের কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে এক মহিলার সঙ্গে কথা বলছেন। পাশে গিয়ে জানা যায়, মাদক আইনে গ্রেফতার এক আসামিকে ছাড়িয়ে দেয়ার জন্য তাদের স্বজনদের সঙ্গে টাকার চুক্তি করছেন তিনি। তার সঙ্গে রয়েছেন আরও ৪ থেকে ৫ জন। আওয়ামী লীগ নেতা আয়নালের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভুক্তভোগী মহিলা তার পরিচিত। তার স্বামীকে পুলিশ আটক করেছে। তাই তিনি পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে ওই মহিলাকে নিয়ে থানায় এসেছেন। এ সময় তিনি টাকা-পয়সা লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেন। একই রাত সাড়ে ১১টার দিকে শাহ আলী থানায় গিয়ে দেখা মেলে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মান্নান শেখের সঙ্গে। গভীর রাতে তিনিও একজনের পক্ষ হয়ে একটি মামলা রেকর্ড করতে ওসির সঙ্গে দেনদরবার করছিলেন। আলাপকালে যুগান্তরকে তিনি জানান, তার পরিচিত এক ব্যক্তির মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। এ চুরির ঘটনায় মামলা দায়ের করতে তিনি ওই পরিচিত জনকে নিয়ে থানায় এসেছেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতি রাতে নয়, তিনি মাঝে মধ্যে থানায় আসেন। ১২ জুন রাত পৌনে ১২টার দিকে কদমতলী থানায় গিয়ে দেখা হয় স্থানীয় থানা ওলামা লীগ সভাপতি আদম আলী, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও বুড়িগঙ্গা সেতুর ইজারাদার ও মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী নাজমা আক্তারের। এর মধ্যে নাজমা আক্তার ওসি আবদুস সালাম মিয়াকে একটি মামলার আসামিকে গ্রেফতারের ব্যাপারে অনুরোধ করছিলেন। ওলামা লীগ নেতা আদম আলী জানান, থানার পাশেই তার বাসা। বাসায় যাওয়ার পথে মাঝে মধ্যে তিনি থানায় আসেন বলে যুগান্তরকে জানান। ওসির কক্ষে মহিলা নেত্রী নাজমা আক্তারের সঙ্গে আরও অন্তত ৭ জন নারী-পুরুষ ছিলেন। ওসি (তদন্ত) আরশেদুল হকের কক্ষেও ছিল একই চিত্র। ওই কক্ষে গিয়ে দেখা মিলল ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আবদুস সালাম ও মাইনুদ্দিন মাইনুর সঙ্গে। তারাও এসেছেন একটি মামলার তদবির নিয়ে। যুগান্তরের পক্ষ থেকে আবদুস সালামের সঙ্গে থানায় আসার বিষয়ে কথা বলতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তিনি কথা বলতে রাজি হননি। ১৪ জুন রাত পৌনে ১১টার দিকে পল্লবী থানা পরিদর্শনের সময় দেখা গেছে আরও ভয়াবহ চিত্র। স্থানীয় থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম বাপ্পীকে দেখা যায় অন্তত ১০ থেকে ১২ জনকে নিয়ে ওসির কক্ষে আড্ডা দিচ্ছেন। কথার ফাঁকে ফাঁকে মামলা সংক্রান্ত কাজে ওসিকে নানা নির্দেশনা-পরামর্শ দিচ্ছেন। কোন মামলা নেয়া যাবে আর কোন মামলা নেয়া ঠিক হবে না এমন অযাচিত হস্তক্ষেপ করছেন কেউ কেউ। আবার কেউ ফোনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে (ফোনের অপর প্রান্তে কে আছেন তা অজানা) কথা বলছেন। কথার ফাঁকে টেলিফোনে ওসির সামনে বসে সুনামও করছেন কেউ কেউ। সরকারদলীয় এসব নেতার যন্ত্রণায় ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের ফোন এলে কয়েক দফা উল্টো ওসিকেই তার কক্ষ থেকে বেরিয়ে গিয়ে কথা বলতে দেখা যায়। এ ব্যাপারে পল্লবী থানার ওসি দাদন ফকিরের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি রাজি হননি। যুবলীগ নেতা তাজুল ইসলাম বাপ্পীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তাজুল ইসলাম বাপ্পী বলেন, ‘কি কারণে থানায় এসেছি সেটাও কি আপনাকে জানাতে হবে?’ তিনি উল্টো এ প্রতিবেদক কি কারণে থানায় এসেছেন তা জানতে চান। ১৫ জুন রাত পৌনে ১০টার দিকে উত্তরা পশ্চিম থানা পরিদর্শনের সময় ওসি রফিকুল ইসলামের কক্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা আজাদ, মোতালেব হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নাঈম ও যুবলীগ নেতা রাশেদের সঙ্গে দেখা মেলে। এছাড়া ওসি তদন্ত মঈনুল কবীরের কক্ষে দেখা যায় সরকারদলীয় স্থানীয় ওয়ার্ড পর্যায়ে নেতা আক্তার ও এনা চৌধুরীকে। রাত ১১টার দিকে উত্তরা পূর্ব থানায় গিয়ে দেখা মেলে ছাত্রলীগ নেতা রুবেলের সঙ্গে। ১৯ জুন রাতে হাজারীবাগ থানা সরেজমিন পরিদর্শনের সময় দেখা মেলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি এমএ খান মজলিশ চপল, ২২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধরণ সম্পাদক মো. বিল্লাল হোসেন পারভেজ, যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাইসুল ইসলাম রবিনসহ ক্ষমতাসীন দলের ১০ থেকে ১২ জন ওসি কাজী মঈনুল ইসলামের কক্ষে চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। স্থানীয় এসব নেতাকর্মীদের কারণে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে থানায় আসা লোকজন ওসির কক্ষে ঢুকতেই পারছেন না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, থানা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাইসুল ইসলাম রবিনের নিয়ন্ত্রণে হাজারীবাগ সুইপার কলোনির মাদক ব্যবসা। প্রায় প্রতি রাতেই তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত থানায় আড্ডা দেন। মামলা নেয়া থেকে শুরু করে কাকে ছাড়তে হবে কাকে গ্রেফতার করতে হবে তার দিকনির্দেশনাও দেন তিনি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এমএ খান মজলিস যুগান্তরকে বলেন, প্রতি রাতে নয়, তিনি মাঝে মধ্যে থানায় আসেন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেন। এমএ খান মজলিশ চপল বলেন, দলের ছেলেদের বিভিন্ন প্রয়োজনে মাঝে মধ্যে তাকে থানায় আসতে হয়। তিনি কোনো তদবির করেন না বলেও দাবি করেন। একই রাতে কামরাঙ্গীরচর থানা পরিদর্শনের সময়ও একই চিত্র দেখা যায়। ওই থানায় গিয়ে ওসি এবং ডিউটি অফিসারের কক্ষে দেখা মেলে কামরাঙ্গীরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সলেমান মাতবর, ৬৫ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহ আলম কিরণ, থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফেরদৌস মোল্লা ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সভাপতি স্বপন দেবনাথসহ স্থানীয় ৭ থেকে ৮ জন নেতাকর্মীকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় প্রতি রাতেই স্থানীয় এসব নেতা থানায় আড্ডা দেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা সলেমান মাতবর বলেন, দলের ছেলেদের বিপদে-আপদে মাঝে মধ্যে থানায় আসতে হয়। এছাড়া সমাজের বিভিন্ন কাজে পুলিশের কাছে আসতে হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর বেশ কয়েকটি থানার ওসি যুগান্তরকে বলেছেন, এ চিত্র রাজধানীর ৪৮ থানার। তবে কোনো কোনো থানার অবস্থা খুবই নাজুক। তারা বলেন, স্থানীয় এসব নেতাকে থানায় ভিড় করতে নিষেধ করলেও তারা শোনেন না। তদবির না শুনলে অনেকে কেন্দ্রীয় নেতা কিংবা মন্ত্রীর ভয় দেখান। সব মিলিয়ে সরকারি দলের স্থানীয় নেতাদের কারণে বিপর্যস্ত থানা প্রশাসন। থানা পুলিশের জন্য বিব্রতকর এ বিষয়টি বেশ কয়েকটি থানার ওসি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ভুক্তভোগী এসব ওসির বেশ কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেছেন, এখন মুখ বুজে তাদের এসব সহ্য করা ছাড়া আর কিছু করার নেই।  

No comments:

Post a Comment