Sunday, June 14, 2015

পাঁচ জেলায় বন্যা:কালের কন্ঠ

ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গাইবান্ধা, নীলফামারী, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও শেরপুরে দেখা দিয়েছে আগাম বন্যা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন আগাম বন্যা হবে এমনটি তাঁর
া আশা করেননি। তবে বৃষ্টি কমলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে বলে তাঁরা মনে করেন। বাংলাদেশ বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের (এফএফডাব্লিউসি) ৮৪টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের পর্যবেক্ষণ অনুসারে গতকাল শনিবার ৪৯টি পয়েন্টে পানি বিভিন্ন হারে বেড়েছে এবং ২৪টি নদীর পানি কমেছে। তবে চারটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এফএফডাব্লিউসির কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া কালের কণ্ঠকে জানান, সাধারণত জুনের শেষ দিকে বা জুলাইয়ের শুরু থেকে বন্যার প্রভাব দেখা যায়। কিন্তু এবার আগাম এ প্রভাব শুরু হলো। এফএফডাব্লিউসি সূত্র মতে, সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার সর্বোচ্চ ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরপরই বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে সারিগোয়াইন নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে। সারিয়াকান্দি ও গাইবান্ধার ঘাঘট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪ ও ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় সুনামগঞ্জে ৫৯ মিলিমিটার। এরপর রয়েছে দেওয়ানগঞ্জে ৫০ এবং কানাইঘাটে ৪৯ মিলিমিটার। গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার নদীতীরবর্তী চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কয়েক স্থানে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে গতকাল সন্ধ্যায় বন্যার পানি ঢুকে বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় যমুনা নদীর পানি প্রবেশ করে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গাবতলী ও ধুনট উপজেলায় বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করেছে। গতকাল দুপুরে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বালিঘুগরী এলাকায় ২০ ফুট বাঁধ ধসে যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছে। গত কয়েক দিন বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙনে ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ চার শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিস্তারিত আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে-  গাইবান্ধার চরাঞ্চল প্লাবিত : গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার নদীতীরবর্তী চরাঞ্চল এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। নদীরতীরবর্তী এলাকার শত শত পরিবার বন্যা আতঙ্কে উঁচু জায়গা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে। ফুলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানান, অনেক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত তাদের মাঝে সরকারি-বেসরকারি কোনো ত্রাণ বিতরণ করা হয়নি। এদিকে ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর, গজারিয়া, ফুলছড়ি, এড়েণ্ডাবাড়ী, উড়িয়া ইউনিয়নের বেশ কিছু চরাঞ্চলে বসতভিটার কাছে পানি ঢুকে পড়েছে। সারিয়াকান্দিতে ধসে পড়ল বেড়িবাঁধ : পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুরে যমুনা নদীর পশ্চিম তীরে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করছে। কিন্তু শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে বাঁধের ৫০ মিটার ধসে পড়ে। এর আগে গত বছরের ২৮ আগস্ট গভীর রাতে পার্শ^বর্তী চন্দনবাইশা ইউনিয়নে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। বর্তমানে ভেঙে যাওয়া সেই বাঁধটির পেছনে এ বাঁধের নির্মাণ শুরু করে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং শাখা। পাউবোর দাবি, দুই মাসে বাঁধের প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান জানান, বাঁধের ভাঙা অংশ মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিরাজগঞ্জে নদীভাঙন : যমুনা নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে ভাঙন। গতকাল দুপুরে বালিঘুগরীতে একটি পরিত্যক্ত বাঁধের প্রায় ২০০ মিটার এলাকা ধসে যায়। এর পরও পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। যমুনার পূর্বপাড় চৌহালী উপজেলার বোয়ালকান্দি থেকে পাথরাইল পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যমুনায় ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে চৌবাড়িয়া পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বীরবাসুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আড়কাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরজাজুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রেহাইকাউলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চৌহালী মহিলা মাদ্রাসার পরিত্যক্ত ভবন নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ঝিনাইগাতীতে বন্যার অবনতি : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ভাটি এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সোমেশ্বরী, মহারশি ও কালাঘুষা নদীতে পানি বাড়ছে। এদিকে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ঝিনাইগাতীর বগাডুবি এলাকায় গ্রামীণ সড়কে একটি ব্রিজের দুই পাশের রাস্তার প্রায় ৪০ ফুট বিধ্বস্ত হওয়ায় ওই সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দৌলতদিয়ায় পারাপার ব্যাহত : দুটি ফেরি বিকল ও প্রচণ্ড স্রোতের কারণে নদী পাড়ি দিতে ফেরিগুলোর বেশি সময় ব্যয় হওয়ায় গতকাল দৌলতদিয়ায় নদী পারাপারের অপেক্ষায় আটকে ছিল পাঁচ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক। নীলফামারীর ডিমলা প্লাবিত : গত তিন দিনের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে তিস্তা নদী বেষ্টিত নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ী ইউনিয়ন ও জলঢাকা উপজেলার, গোলমুণ্ডা, ডাউয়াবাড়ী, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

No comments:

Post a Comment