আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক শামীমকে (৫১) গুলি করার ঘটনায় আরও তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাঁরা হলেন: হামলার নির্দেশদাতা বলে অভিযোগ ওঠা নূরে আলম সিদ্দিকী (৪৭) এবং হামলার পরিকল্পনা ও এতে অংশ নেওয়া নাজিমুল হক ওরফে মিঠু (৩৯) ও রানা হাওলাদার (২৫)। এর আগে ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ নিয়ে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হলো। গতকাল বুধবার ধানমন্ডি থানা
র পুলিশ এ ঘটনায় হওয়া মামলায় সবাইকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাত দিন করে রিমান্ডে নিয়েছে। পুলিশ দাবি করেছে, বেসরকারি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক সদস্য নূরে আলম সিদ্দিকীই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী। তাঁকে বেশ কিছুদিন আগে বোর্ড থেকে বহিষ্কার করা হয়। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এনামুল হক শামীম তাঁকে নিয়ে তির্যক মন্তব্য করেছিলেন। নূরে আলম সিদ্দিকী তাঁর বহিষ্কারের জন্য শামীমকে দায়ী করেন এবং তাঁকে ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার জন্য হামলার পরিকল্পনা করেন। ডিবি পুলিশ গত দুদিনে রাজধানীতে পৃথক অভিযান চালিয়ে নূরে আলম সিদ্দিকীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিন্টো রোডের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম এ বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য দেন। তিনি বলেন, শামীমকে গুলি করার ঘটনার ব্যাপারে ধানমন্ডি থানায় হওয়া মামলাটি ডিবির পাশাপাশি র্যাবও তদন্ত করে। আওয়ামী লীগের নেতা ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শামীমকে গুলি করে একটি মোটরসাইকেলে তিন ব্যক্তি পালিয়ে যাচ্ছে—এ ভিডিও ফুটেজ পুলিশের কাছে আছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মোটরসাইকেলের চালক রানাকে শনাক্ত করে ডিবি। পরে গত মঙ্গলবার পুরানা পল্টনের হোটেল প্রীতমের সামনে থেকে রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হামলায় পরিকল্পনায় অংশ নেওয়া নাজিমুলকে ওই দিনই শেরেবাংলা নগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। রানার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হামলায় ব্যবহৃত পালসার মোটরসাইকেলটি তাঁর গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির রাজাপুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। নূরে আলম সিদ্দিকীর গ্রামের বাড়িও রাজাপুর। ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, নাজিমুল ও রানার তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল সকালে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী নূরে আলমকে তাঁর নিউ ইস্কাটনের ভাড়া বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মনিরুল ইসলাম বলেন, ক্ষুব্ধ নূরে আলম সিদ্ধান্ত নেন শামীমকে গুলি করে পঙ্গু করতে হবে, তাঁকে হত্যা করা হবে না। তিনি এ হামলার জন্য তাঁর পরিচিত নাজিমুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। নাজিমুল কলকাতায় অবস্থানরত তেজগাঁওয়ের সন্ত্রাসী আশিকের আশ্রয়ে থাকা সন্ত্রাসী জসিমউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করে হামলার জন্য ছয় লাখ টাকায় চুক্তি করেন। জসিম তাঁর ভাই রানাকে হামলার দায়িত্ব দেন। যুগ্ম কমিশনার বলেন, ঘটনার তিন দিন আগে একবার গুলি করতে গিয়েও সুবিধা না হওয়ায় সন্ত্রাসীরা তা করেনি। পরে দিনক্ষণ ঠিক করে ১৯ জুন সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে শামীমকে লক্ষ্য করে গুলি করে। শামীমকে গুলি করার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে র্যাব গত সোমবার ঢাকা, রাজবাড়ী ও ময়মনসিংহে অভিযান চালিয়ে মনির হোসেন ওরফে রাসেল (২৮), মো. হারুন (২৭), মেহেদী হাসান (২২) ও নজরুল ইসলাম ওরফে জুয়েলকে (২৩) গ্রেপ্তার করে। মনির হোসেন ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি। মেহেদি শেখ রাসেল পরিষদের তেজগাঁও শাখার সদস্য। গত ১৯ জুন সকালে ধানমন্ডির ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে তিন মোটরসাইকেল আরোহী এনামুল হক শামীমকে গুলি করে পালিয়ে যান। দুটি গুলি তাঁর বাঁ হাতে লাগে।
No comments:
Post a Comment