নিজ মাঠে বিশ্বকাপ আয়োজন করে ট্রফি জেতা যায়। ১৯৭৮-এ আর্জেন্টিনা, ১৯৬৬-তে ইংল্যান্ড স্বাগতিক হয়েই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তাদের চেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপ জেতার কৃতিত্ব এক দেশেরই। ব্রাজিল। অবশ্য তা অন্যের মাটিতে। হোম গ্রাউন্ড কখনোই তাদের ফেভার করল না। ১৯৫০-এ তাদের বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছিল উরুগুয়ে। দীর্ঘ ৬৪ বছর পর এবার আবার নিজ মাঠে বিশ্বকাপ আয়োজন করল ল্যাটিনের সর্ববৃহৎ দেশটি। দেশবাসীসহ বিশ্বের অনেক ফুটবল বো
দ্ধার ভবিষ্যদ্বাণী ছিল ফাইনালে খেলবে ব্রাজিল। সেমিফাইনালের আগ পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। কিন্তু গত পরশু জার্মানির কাছে সেমিতেই সব শেষ ব্রাজিলের। সাথে লজ্জা আর লজ্জা। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এই প্রথম নকআউট পর্বে ৭ গোল খেল কোনো দেশ। তাও কি না সেটি আবার পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। আর বিশ্বকাপে তো তাদের জালে এই প্রথম গেল ৭ গোল। ১৯৩৮-এ পোল্যান্ড তাদের জালে পাঁচবার বল ফেললেও ব্রাজিল ম্যাচ জিতেছিল ৬-৫-এ। টানা গত দুই বিশ্বকাপে ব্যর্থতা। ওটা মুছে ফেলার সাথে ছিল ’৫০-এর মারাকানার দুঃখ ভুলিয়ে দেয়ার সুযোগ। অথচ সে দুঃখ তো মোছা গেলই না উল্টো বিশ্বকাপের ইতিহাসে বড়সড় একটা লজ্জা পেতে হলো পেলে, রোমারিও, রোনালদোর দেশকে। ব্রাজিলিয়ানদের ভাষায়, ’৫০-এর ফাইনালে মারাকানায় হারটা ছিল একটা ট্র্যাজেডি। কিন্তু ২০১৪-এর সেমিতে বিধ্বস্ত হওয়াটা ট্র্যাজেডি নয়, লজ্জা। ইনজুরির জন্য নেইমারকে সেমিতে পায়নি ব্রাজিল। দুই হলুদ কার্ডের জন্য জার্মানির বিপক্ষে নিষিদ্ধ ছিলেন অধিনায়ক থিয়েগো সিলভাও। আক্রমণে নেইমার নেই। ডিফেন্সে থিয়েগোর অনুপস্থিতি। এই দু’জন ছিল না বলে ব্রাজিল ১-৭ গোলে হারবে জার্মানির কাছে এটা মানতেই পারছেন না সাধারণ ব্রাজিলিয়ানরা। ২৯ মিনিটের মধ্যে ৫ গোল হজমের পর থেকেই ক্ষোভে ফাটছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাউডিও স্টাভিও। আর ম্যাচ শেষে তো মিডিয়াকর্মীদের ডেকে ডেকে নিজের ুব্ধ প্রতিক্রিয়ার কথা জানাতে থাকেন বর্ষীয়ান এই ব্রাজিলিয়ান। ‘ব্রাজিলের এমন জঘন্য খেলা আমি জীবনে দেখিনি। এখন মনে হচ্ছে এই বিশ্বকাপ খেলার জন্য প্রস্তুত ছিল না ব্রাজিল। দলের তো ট্যাকটিস বলতে কিছুই নেই।’ জার্মানির সাথে ব্রাজিলের এই হারকে কি ’৫০-এ উরুগুয়ের কাছে ব্রাজিলের হারের তুলনা চলে। এমন প্রশ্ন করতেই তরুণ ব্রাজিলিয়ান লিওনার্দো লরেঞ্জোর প্রতিক্রিয়া, ‘মোটেই না। মারাকানায় উরুগুয়ের কাছে ফাইনালে ব্রাজিলের ১-২ গোলে হারটা ছিল একটা ট্র্যাজেডি। আর ৮ জুলাই জার্মানির কাছে ব্রাজিলের হারটা স্রেফই একটা লজ্জা।’ কামিলা ও ভিক্টর জুটির এক কথার উত্তর, আমাদের কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার ভাষা নেই। এমন লজ্জাজনক হারে ভাষা শেষ হয়ে গেছে আমাদের। নেইমার ও থিয়েগো সিলভা না থাকতেই কি দলের এ অবস্থা হয়েছে? এর উত্তরে জিয়াগুসো পেরেইরার বক্তব্য, দু’জন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় নেই। তাই বলে কি ৭ গোল খাবে ব্রাজিল। জার্মানির মতো দলের বিপক্ষে ১-০ বা পেনাল্টিতে হারটা মানা যায়। কিন্তু ২৯ মিনিটে পাঁচ গোল আর ৯০ মিনিট শেষে ৭ গোলের হার আমাকে বলতে বাধ্য করছে, ব্রাজিলের এই জাতীয় দলের চেয়ে সে কাব দলই এর চেয়ে ভালো। সেমিতে জার্মানি হেরে বিমানে চড়ে দেশে ফিরছে এমন প্ল্যাকার্ড নিয়ে আসা মাঝ বয়সী কার্লোস ক্ষোভে ওই প্ল্যাকার্ড ছিঁড়তে ছিঁড়তে বলেন, ‘আমার খুব লজ্জা হচ্ছে এমন পরাজয়ে। এটা কি বিশ্বকাপের ব্রাজিল দল? তারা কি চ্যাম্পিয়ন হতে এসেছে? এটা ব্রাজিলের ফুটবলের সবচেয়ে বিব্রতকর মুহূর্ত। বিষয়টা খুবই লজ্জাজনক। খুবই।’ ‘এই ম্যাচের চেয়ে বাসায় বসে টিভিতে সিনেমা দেখাই ভালো ছিল’Ñ জানান ইয়া মোটা দর্শক হবসন। আর ম্যাচ শেষেই নতুন করে প্ল্যাকার্ড লিখে স্টাভিও তুলে ধরেন, ‘ওসোহো আর্কাবোর্ডো’ অর্থাৎ স্বপ্নের করুণ মৃত্যু।
No comments:
Post a Comment