সাভারে রানা প্লাজা ধসের ১৭ দিন পর ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে রেশমার জীবিত উদ্ধারের ঘটনা দেশব্যাপী চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ঘাটে লঞ্চডুবির পঞ্চম দিনে গতকাল শুক্রবার ‘জীবিত এক যাত্রীর সন্ধান’ ক্ষণিকের জন্য হলেও চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল মাওয়া ঘাট এলাকায়। তাঁর নাম সারওয়ার হাওলাদার (২৫)। তবে সাংবাদিকদের অনুসন্ধিৎসু জিজ্ঞাসার বেড়াজাল পেরিয়ে নিজের দাবিকে সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি তিনি।
সারওয়ার হাওলাদারকে যে ব্যক্তি প্রথম দেখেন তাঁর নাম মো. সাগর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বেলা আড়াইটার দিকে মাওয়া ঘাটে পদ্মার পাড়ে দাঁড়িয়ে এক যুবককে কাঁদতে দেখেন তিনি। জিজ্ঞাসা করলে যুবক জানান, তিনি লঞ্চ দুর্ঘটনার পর গত পাঁচ দিন একটি চরে পড়ে ছিলেন। কিছু খাননি। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে নিয়ন্ত্রণকক্ষে নিয়ে যান সাগর। এর পরই চারদিকে খবর ছড়িয়ে পড়ে, পাঁচ দিন পর একজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ, প্রশাসনের কর্মকর্তারাসহ ঘাটে উপস্থিত শত শত লোক হুমড়ি খেয়ে পড়েন সেখানে। এরই মধ্যে দু-একটি টেলিভিশনে খবরও প্রচার করা হয়। এর মধ্যে লঞ্চ উদ্ধারে নিয়োজিত নৌবাহিনীর একটি দল তাঁকে নিয়ে ডুবে যাওয়া লঞ্চটি শনাক্ত করতে নদীতে নেমে পড়ে। ওই যুবকের দেখানো মতে ঘাট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে লঞ্চ শনাক্তকারী জাহাজ জরিপ-১০ ও কান্ডারি-২ তল্লাশি চালায়। নৌবাহিনীর যে জাহাজে করে তাঁকে দুর্ঘটনাস্থল চিহ্নিত করতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেই অভিযানের নেতৃত্ব দেন নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন নজরুল ইসলাম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা তাঁর কথাকে গুরুত্ব দিয়ে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে লঞ্চটি শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। তিনি যেখানে দেখিয়েছেন, তার আশপাশে জরিপ-১০ দিয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছে।’ সারওয়ার হাওলাদারকে নিয়ন্ত্রণকক্ষে আনার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করেন চিকিৎসক নুরুন নাহার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর পালস (নাড়ি) স্বাভাবিক চলছিল। দেখে সুস্থই মনে হচ্ছিল। তবে তিনি বলছিলেন, আমি ক্ষুধার্ত। এই জন্য তাঁকে কিছু খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। পুলিশের নিয়ন্ত্রণকক্ষের দায়িত্বে থাকা মুন্সিগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ছেলেটির মুখ দেখেই বোঝা যায় আজকে দাড়ি কেটেছে। তাহলে পাঁচ দিন নিখোঁজ থাকে কী করে। এর মধ্যে ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। সেই ধকলও তাঁর চেহারায় নেই। তার পরও পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের নিখোঁজ ১৪৬ জনের নামের তালিকা দেখা হয়েছে। তাঁর নিজের বা তাঁর ভাই ও ভাবির নাম তালিকায় নেই।’ এর মধ্যে নৌবাহিনী সারওয়ারকে ঘাটে নিয়ন্ত্রণকক্ষে নিয়ে আসে। সেখানে জানতে চাইলে সারওয়ার হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ও তাঁর ভাই মামুন হাওলাদার এবং ভাবি রোকসানা মোল্লা ডুবে যাওয়া লঞ্চের যাত্রী ছিলেন। তাঁদের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায়। লঞ্চডুবির সঙ্গে সঙ্গে তিনি ভেসে উঠলে একটি স্পিডবোট অন্যদের সঙ্গে তাঁকেও উদ্ধার করে পাশের একটি চরে নিয়ে যায়। সেখান থেকে অন্য যাত্রীরা চলে গেলেও তিনি এক দিন ছিলেন। পরের দিন আরেকটি স্পিডবোট গিয়ে তাঁকে কাওড়াকান্দি ঘাটে নিয়ে যায়। সেখানে তিনি এক বাড়িতে গেলে তারা তাঁকে খেতে দেয়। ওই বাড়িতে দুই দিন থাকেন। তারা তাঁকে দাড়ি কামিয়ে দেয়। গতকাল ভাই ও ভাবির খোঁজেই নিয়ন্ত্রণকক্ষে যোগাযোগ করতে তিনি মাওয়া ঘাটে আসেন। সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সারওয়ারকে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে। গতকাল দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই যুবককে নিয়ে হেপা সামলাতে হয়েছে পুলিশকে। মাওয়া ঘাট পুলিশের নিয়ন্ত্রণকক্ষের দায়িত্বরত পুলিশ পরিদর্শক মজিবুর রহমানের কথায়ও তা স্পষ্ট, ‘চিলে কান নিয়ে গেছে, সবাই চিলের পেছনে ছুটছে।’
No comments:
Post a Comment