Saturday, August 30, 2014

এডিপির বরাদ্দ ব্যবহারে ব্যর্থ সওজ : সড়কের বেহাল দশা:নয়াদিগন্ত

বিশাল আকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) করা হলেও অর্থবছরের সূচনাতেই এটি বাস্তবায়নের হার হতাশাব্যঞ্জক। বর্ষার কারণে দেশব্যাপী সড়কের বেহালদশা হলেও এডিপির বরাদ্দকৃত টাকা খরচ করতে পারেনি সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ)। চলতি অর্থবছরে সড়ক বিভাগের অধীনে রাখা হয়েছিল চার হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। এক মাসে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৯ লাখ টাকা। এডিপিতে পদ্মা সেতুর জন্য ৮ হাজার এক শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অতীতের বছরগুলো
তে এডিপি বাস্তবায়নে সরকারের ব্যর্থতার দায় রাজনৈতিক অস্থিরতার ওপর চাপিয়ে দেয়া হতো। কিন্তু এবার কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগও নেই। তারপরও ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এডিপি বাস্তবায়ন মাত্র ২ শতাংশ, যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দকৃত কোনো অর্থই এ পর্যন্ত খরচ করতে পারেনি ১৯টি মন্ত্রণালয়।  এবারের প্রস্তাবিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই সর্ববৃহৎ এডিপি। জুলাই মাসে মাত্র ২ ভাগ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। সেই হিসেবে এক ধরনের হতাশা দিয়েই ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়ন শুরু হলো। তবে ২০১১-১২, ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে একই সময়ে এক শতাংশ বেশি এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরেও প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অগ্রগতি ছিল মাত্র ১৫ শতাংশ। প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) এডিপির অগ্রগতি ছিল মাত্র ২৭ শতাংশ। এবার তার চেয়েও বেহাল অবস্থা।  সওজ তাদের প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে কোনো সময়ই শেষ করতে পারে না। আর এই বিভাগের প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোই একটা সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে মেয়াদ বাড়ানোর জন্য যখন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) উপস্থাপন করা হয় তখনই বেরিয়ে আসে প্রকল্পের অনিয়ম আর দুর্নীতি। সড়ক খাতে ২০০০, ২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ সাল থেকে চলছে এমন প্রকল্পের সংখ্যা প্রায় ২০টি, যা প্রতি বছর এডিপিতে টেনে আনা হচ্ছে। কোনোভাবেই প্রকল্প শেষ হচ্ছে না। বাড়ছে প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ। সওজের গত বছর জুলাইয়ে বাস্তবায়নের হার ছিল মাত্র ৩ শতাংশ, জুলাই-আগস্ট দুই মাসে এই হার ৫ শতাংশে উন্নীত হয়। আর এবার কোনোই ব্যয় নেই। বিশাল আকারের এডিপি কম বাস্তবায়নে হতাশা নেই পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রী বলছেন, প্রথম মাস বলেই এডিপি বাস্তবায়ন কম হয়েছে। কারণ টাকা খরচের বিষয়ে পরিকল্পনা প্রণয়নসহ নানা কাজ দেখতে দেখতে চলতি অর্থবছরের এক মাস চলে গেছে, যা পরে ঠিক হয়ে যাবে। ১৭টি সেক্টর এবং উন্নয়নসহায়তা খাতে মোট বরাদ্দ ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ২৭ হাজার সাত শ’ কোটি টাকা এবং স্থানীয় মুদ্রা ৫২ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মূল এডিপির মধ্যে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা খাতে পাঁচ হাজার ৬৮৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা যোগ করে আকার নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এডিপির বরাদ্দের টাকা ব্যয়ে ব্যর্থদের মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ও রয়েছে। অথচ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কৃষি খাতে পাঁচ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা, পল্লী উন্নয়ন খাতে ছয় হাজার ৮৭১ কোটি টাকা, পানিসম্পদ খাতে দুই হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা, শিল্প খাতে এক হাজার ৫৩০ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ খাতে ৯ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা, তেল-গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ খাতে দুই হাজার ২২২ কোটি টাকা, সেতু খাতে আট হাজার ৭১৩ কোটি টাকা, ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে সাত হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা, শিা ও ধর্ম খাতে ৯ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি খাতে ১৮২ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য খাতে চার হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা, গণসংযোগ খাতে ১১৮ কোটি টাকা, সমাজকল্যাণ খাতে ৫৭৬ কোটি টাকা, জনপ্রশাসন দুই হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে তিন হাজার ১২১ কোটি টাকা এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান খাতে ৩৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও ব্যয় করতে পারেনি এরা।  

No comments:

Post a Comment