মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতা-বিরোধী অপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম মারা গেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল মজিদ ভূঁইয়া রাত পৌনে ১২টার দিকে সাংবাদিকদের জানান, রাত ১০টা ১০ মিনিটে গোলাম আযমের লাইফ সাপো
র্ট খুলে ফেলা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকতা শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে। গোলাম আযমের বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছর তাঁকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাঁর এই কারাভোগের অবসান ঘটল। গণহত্যার নকশাকার গোলাম আযমের মৃত্যু হয়েছে বলে গত রাত ১০টা থেকেই প্রবল গুঞ্জন শুরু হয়। প্রথমে পরিবার ও আইনজীবী সূত্র তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করে। গোলাম আযমের একান্ত সচিব (পিএস) আবুল কালাম আজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘খবরটি সঠিক।’ গোলাম আযমের আইনজীবী তাজুল ইসলাম রাত সোয়া ১০টার দিকে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গোলাম আযম মারা গেছেন।’ গোলাম আযমের ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আযমীর বরাত দিয়ে আইনজীবী তাজুল ইসলাম রাত ১০টা ২০ মিনিটে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গোলাম আযম মারা গেছেন বলে পরিবারের সদস্যরা নিশ্চিত হয়েছেন। মৃত্যুর আগে তিনি শেষ ইচ্ছা হিসেবে বাবার কবরের পাশে তাঁর লাশ দাফন করার কথা বলে গেছেন।’ তবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী রাত ১১টায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমি এইমাত্র আইসিইউ থেকে গোলাম আযমকে দেখে এসেছি। তিনি লাইফ সাপোর্টে আছেন। লাইফ সাপোর্ট না খোলা পর্যন্ত বলা যাবে না তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’ এর কিছুক্ষণ পর গোলাম আযমের ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আযমী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি যেমন দেখে এসেছি তাতে মনে হয়েছে আবার বাবা আর নেই। তবে তাঁর মৃত্যুর বিষয়ে ডাক্তাররা এখনো আমাকে কিছু জানাননি।’ রাত ১০টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের পরিচালক আবদুল মজিদ ভুঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাতে গোলাম আযমের অবস্থার অবনতি হলে আমরা তাঁকে ৯টার দিকে লাইফ সাপোর্টে দিই। তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন।’ আইজি প্রিজনস ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন রাত ১০টায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গোলাম আযমের মৃত্যুর বিষয়ে আমাদের অবগত করেনি।’ তিনি আরো জানান, গোলাম আযম বিএসএমএমইউ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত বুধবার তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাঁকে সিসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়। হাসপাতাল সূত্র জানায়, গতকাল সকাল থেকে দ্রুত তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। কমে যায় রক্তচাপ। রাতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল তাঁকে দেখে লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার পরামর্শ দেন। বিডিনিউজ জানায়, গোলাম আযমকে রাজধানীর মগবাজারে পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের পরিকল্পনা নিয়েছে তাঁর পরিবার। তবে কবে দাফন হবে এবং জানাজা কবে হবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন তাঁর ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আযমী। তিনি হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘মগবাজারে পারিবারিক কবরস্থানে উনার বাবার কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হবে।’ আযমী জানান, দাফন দুই বা তিন দিন পর হবে। কারণ তাঁর ছয় ছেলের মধ্যে পাঁচজনই দেশের বাইরে আছেন। তাঁরা ফিরলে দাফন হবে। জানাজার বিষয়ে গোলাম আযমের ছেলে বলেন, ‘বাবার শেষ ইচ্ছা ছিল মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী জানাজা পড়াবেন। কিন্তু তাঁরা দুজনেই কারাগারে থাকায় জানাজা কে পড়াবেন, তা দলের নেতারা ও পরিবারের সদস্যরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।’ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গোলাম আযমের ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেন। গোলাম আযমের পক্ষে সাজার বিরুদ্ধে করা এবং সাজা বাড়াতে সরকারের পক্ষে পৃথক দুটি আপিলের ওপর আগামী ২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির দিন ধার্য ছিল। প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ গত বুধবার এক আদেশে এ দিন ধার্য করেন। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত গোলাম আযমের মুক্তি চেয়ে গতকালই বিবৃতি দিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ এক বিবৃতিতে বলেন, গোলাম আযম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁকে সিসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর রক্তচাপ বিপজ্জনক স্তরে নেমে এসেছে। তাঁর শরীরের পেছনের অংশে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। আর শরীরের নিচের অংশ অবশ হয়ে গেছে। তাঁর অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। গুরুতর অসুস্থতার খবরে পরিবার-পরিজনসহ সবাই গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তাঁকে মুক্তি দিয়ে জীবনের এই কঠিন মুহূর্তে মুক্ত পরিবেশে পরিবারের তত্ত্বাবধানে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ প্রদান করা প্রয়োজন। গণহত্যার নকশাকার : ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী বাহিনী গড়ার হোতা এবং গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনাকারী বা নকশাকার ছিলেন তখনকার পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমির গোলাম আযম। মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলার রায়েও বিষয়টি উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল; যদিও তাঁর বিরুদ্ধে সব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে তাঁকে দেওয়া হয়েছে ৯০ বছরের কারাদণ্ড। গত বছরের ১৫ জুলাই গোলাম আযমকে পাঁচ ধরনের অপরাধে বিভিন্ন মেয়াদে মোট ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ট্রাইব্যুনাল রায়ে উল্লেখ করেছেন, স্বাধীনতাযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতি বিবেচনায় গোলাম আযমের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্য। তবে তাঁর ৯১ বছর বয়স ও স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিবেচনায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো না। রায়ে বলা হয়, গোলাম আযম একটি দলের প্রধান হিসেবে সারা দেশে সংঘটিত অপরাধের নেতৃত্বে ছিলেন। তিনি ছিলেন মানবতাবিরোধী অপরাধের নির্দেশদাতা, এমনকি পরিকল্পনাকারীও। রায়ে আরো বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে গোলাম আযম তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমির ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় আলবদর, আলশামস, রাজাকার গঠিত হয়েছিল জামায়াত ও এর ছাত্রসংগঠন ছাত্রসংঘের নেতা-কর্মীদের দ্বারা। তারা যেসব অপরাধ করেছে তার দায় গোলাম আযমের- এ কথা উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল রায়ে বলেছেন, অধীনদের নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব ছিল গোলাম আযমের। কিন্তু তিনি তা না করে উসকানি দিয়েছেন। নির্দেশ দিয়েছেন। এ প্রেক্ষাপটেও এসব বাহিনীর সব কৃতকর্মের দায় গোলাম আযমকেই নিতে হবে। গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী পাঁচ ধরনের অপরাধের মধ্যে রয়েছে- মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, উসকানি, সহযোগিতা এবং হত্যা-নির্যাতনে সম্পৃক্ততা। মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ১০ বছর, পরিকল্পনার দায়ে ১০ বছর, মানবতাবিরোধী অপরাধের উসকানিদাতা হিসেবে ২০ বছর, পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতার দায়ে ২০ বছর এবং কুমিল্লার এসআই সিরু মিয়া ও তাঁর ছেলে আনোয়ার কামালসহ ৩৮ জনকে হত্যা ও নির্যাতনে বাধা না দেওয়ার অভিযোগে ৩০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয় গোলাম আযমকে। রায়ে বলা হয়, এসব সাজা একটির পর একটি কার্যকর হবে। সহযোগী বাহিনীর কৃতকর্মের দায় তাঁর : রায়ে আরো বলা হয়, গোলাম আযম অধীনদের ইশারা দিয়ে কার্যত হত্যাযজ্ঞে অংশ নিয়েছেন। এই ফৌজদারি অপরাধের দায় তিনি এড়াতে পারেন না। ১৯৭১ সালে গোলাম আযম তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমির ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় আলবদর, আলশামস, রাজাকার গঠিত হয়েছিল জামায়াত ও এর ছাত্রসংগঠন ছাত্রসংঘের নেতা-কর্মীদের দ্বারা। সংগঠনের আমির হিসেবে গোলাম আযমের দায়িত্ব ছিল তাঁর অধীনদের নিয়ন্ত্রণ করা, যা তিনি করতে পারেননি এবং করেননি। সুতরাং এ প্রেক্ষাপটেও এসব বাহিনীর সব কৃতকর্মের দায় গোলাম আযমকেই নিতে হবে। যেসব অপরাধের সঙ্গে তিনি নিজে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন না, সেসব অপরাধের দায়দায়িত্বও তাঁর ওপরই বর্তায়। তাঁর সম্পৃক্ততা সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি হিসেবে গণ্য হয়, যার দায়দায়িত্ব তাঁকেই নিতে হবে। তাঁর নির্দেশেই তাঁর অধীনরা এসব অপরাধ করেছে। রায়ে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের পরদিন ২৬ মার্চ গোলাম আযম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গুলিস্তান এলাকা পরিদর্শন করেন। এটা অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আযমীর সাক্ষ্যে উঠে এসেছে। এমনকি গোলাম আযমের লেখা ‘জীবনে যা দেখলাম’ বইয়ে এটা উল্লেখ রয়েছে। তিনি পাকিস্তান বাহিনীর এ গণহত্যা দেখার পরও পাকিস্তানের প্রধান সামরিক আইন শাসক ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ ও বৈঠক করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা দিতে শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী গঠন করেন। এসব বাহিনী তাঁর নিয়ন্ত্রণে ছিল। ১৯৭১ সালের ২৩ নভেম্বর লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি রাজাকার বাহিনীর সদস্যসংখ্যা বাড়ানো ও তাদের অস্ত্র সরবরাহের জন্য পাকিস্তান সরকারের কাছে আহ্বান জানান। তাঁর এই বক্তব্য অধীন দলীয় কর্মীদের বাঙালি হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সম্পৃক্ততা প্রমাণ করে। ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনায় জড়িত : রায়ে বলা হয়, গোলাম আযম মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানের শত্রু ও দুষ্কৃতকারী বলেছেন। তাঁর এই বক্তব্য ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত হয়েছে। এ থেকে প্রমাণিত হয়, গোলাম আযম উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনায় জড়িত। পাকিস্তান বেতার (রাষ্ট্রীয়) থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণদান করার জন্য গোলাম আযমকে নির্বাচন করা কিংবা আরব রাষ্ট্রপ্রধানদের প্রতি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আহ্বান জানানো কিংবা জাতিসংঘের কাছে দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া শরণার্থীদের পুনরায় দেশে ফিরতে বাধ্য করার লক্ষ্যে আহ্বান জানানো ইত্যাদি ঘটনা তাঁর ঊর্ধ্বতন অবস্থানকেই সন্দেহাতীতভাবে নির্দেশ করে। নকশাকার ছিলেন গোলাম আযম : রায়ে বলা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনার সময় গোলাম আযম সশরীরে উপস্থিত ছিলেন না বা সরাসরি নির্দেশ দেননি। তবে ওই সময় গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার নকশাকার ছিলেন গোলাম আযম। তিনি জামায়াতে ইসলামীর আমির ছিলেন। এই জামায়াতে ইসলামীর সদস্য ও তাদের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যদের নিয়ে আধাসামরিক বাহিনী শান্তি কমিটি, আলবদর, আলশামস, রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। এসব বাহিনীর অপরাধের দায় তাঁর। রায়ে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৯ জুলাই জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামে গোলাম আযমের বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘হিন্দুরা মুসলমানদের শত্রু। তারা মুসলমানদের বন্ধু হতে পারে না।’ হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে এই বক্তব্য হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার ঐতিহ্য ধ্বংস করার একটি উৎকৃষ্ট দলিল। বিচার যেভাবে শুরু : আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন গঠন করা হয়। তদন্ত সংস্থা ২০১০ সালের ১ আগস্ট গোলাম আযমের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন। তবে তা ‘অবিন্যস্ত’ ও ‘অগোছালো’ উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ পুনরায় দাখিলের নির্দেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ পুনরায় দাখিল করলে ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নিয়ে গত বছরের ১১ জানুয়ারি গোলাম আযমকে হাজির হতে বলেন। সে অনুযায়ী তিনি ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন জানালে তা খারিজ করে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে পরে বার্ধক্যজনিত কারণে তাঁকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের কারাকক্ষে রাখা হয়। ১৩ মে তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচ ধরনের অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। ১ জুলাই থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
No comments:
Post a Comment