সাবেক টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর ছেলে অনিক সিদ্দিকী দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে সাভারের আশুলিয়ায় প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠানের কাজ ছাড়া অন্য সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার গুলশানে তাঁর ব্যবসায়ের প্রধান কার্যালয়টিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ম্যাজেস্টিকা হোল্ডিংস লিমিটেড নামের ওই অফিসে বসেই অনিক নিজের ও বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। অনিক ব্যব
সা গুটিয়ে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের পরিকল্পনা করছেন। বাবার মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের পরিপ্রেক্ষিতেই এ ভাবনা বলে জানিয়েছে তাঁর ঘনিষ্ঠজনরা। ম্যাজেস্টিকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, তাঁদের দুই মাসের বেতন না দিয়েই অনিক সিদ্দিকী কার্যালয়টি বৃহস্পতিবার বন্ধ করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে কাউকে কিছু না বলার জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কঠোর নির্দেশ দেন তিনি। কিন্তু দুই মাসের বেতন না পাওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবার ও নিকটাত্মীয়দের মধ্যে এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। অনিক সিদ্দিকীর ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, বাবা মন্ত্রী হওয়ার সুবাদে অনিক বাংলাদেশে প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, ভবন নির্মাণ ও বিক্রি করা, আইটি ফার্ম, রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা শহরে জমি কেনাবেচা প্রভৃতি ব্যবসা করে আসছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি লতিফ সিদ্দিকীকে নিয়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা এবং মন্ত্রিসভা থেকে তাঁর অপসারণের পরিপ্রেক্ষিতে অনিক সিদ্দিকী ম্যাজেস্টিকা হোল্ডিংসের অধীনে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ১৫ কাঠা জমির ওপর একটি বহুতল ভবন নির্মাণের প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছেন। এ ছাড়া টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুসংলগ্ন এলাকায় প্রধান সড়কের পাশে কয়েক শ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জানা গেছে, লতিফ সিদ্দিকীর একমাত্র ছেলে অনিক সিদ্দিকী বাংলাদেশে জমি কিনে বড় বড় প্রতিষ্ঠান গড়তে শুরু করেছিলেন। তাঁর একটি কারখানা রয়েছে টাঙ্গাইলে, বঙ্গবন্ধু সেতুর এপারে। জমির পরিমাণ কয়েক শ বিঘা। স্থানীয় বহু মানুষকে ভিটামাটিছাড়া করে ওই জমি দখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই এলাকার একজন দরিদ্র মহিলা বারবার লতিফ সিদ্দিকীর কাছে জমি ফেরত পাওয়ার জন্য ধরণা দিয়েছেন। লতিফ সিদ্দিকী তাঁকে এক টুকরো জমি দেন। পরে দেখা গেল, ওই জমিটি একটি মসজিদের নামে দান করা হয়েছে। লতিফ সিদ্দিকীর নামেও দেশের বিভিন্ন স্থানে জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। জানতে চাইলে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগীর খান মিনু বলেন, ‘অনুসন্ধান করে দেখা উচিত লতিফ সিদ্দিকী স্থানীয় কত মানুষের জমি জবরদখল করেছেন। সেসব চিহ্নিত করে প্রকৃত মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।’ এ বিষয়ে সরকারের সহায়তা কামনা করেন তিনি। প্রধান কার্যালয়ের জমিটি এরশাদের দেওয়া : লতিফ সিদ্দিকীর ছেলে অনিক সিদ্দিকী রাজধানীর গুলশানের যে অফিসটি তাঁর ব্যবসার প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতেন, সেখানকার জমি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে দান করা। তাঁর মা লায়লা সিদ্দিকী এরশাদের আমলে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সে সময় অন্য এমপিদের সঙ্গে তিনিও রাজধানীতে এক খণ্ড জমি পান। কানাডায় স্থায়ী হচ্ছেন : লতিফ সিদ্দিকী আর দেশে ফিরতে পারছেন না এ খবরের মধ্যে আরেকটি খবর হচ্ছে, তাঁর ছেলে অনিক সিদ্দিকীও কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের পরিকল্পনা করেছেন। অনিকের ছোট ফুফা জানান, ‘এমন কথা আমরা শুনেছি। তবে বিস্তারিত কিছু বলতে পারব না।’ পরে তিনি বলেন, ‘অনিকের বাবা লতিফ সিদ্দিকী আমাদের আত্মীয়, তবে আমাদের সঙ্গে সে রকম যোগাযোগ নেই। তবে মন্ত্রণালয়ে লতিফ সিদ্দিকীর পিএস অর্ধেন্দু শেখর রায়ের কাছে মাঝেমধ্যে যাই।’ বকেয়া বেতন না পাওয়ার আশঙ্কা : অনিক সিদ্দিকী তাঁর ম্যাজেস্টিকা হোল্ডিংসের কার্যালয় বন্ধ করে দিয়েছেন ঠিক, কিন্তু ওখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখনো দুই মাসের বেতন পাননি। জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের ভয় হচ্ছে, অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর মিডিয়ায় জানাজানি হলে হয়তো অনিক স্যার আমাদের বেতন দিবেন না।’ তিনি বলেন, ‘অনিক স্যার ছাড়াও এ অফিসে বসে ব্যবসা পরিচালনা করতেন তাঁর বন্ধু মুশফিক স্যার ও জাইগাম।’ জাইগামকে তাঁরা বিদেশি হিসেবে চেনেন। শুনেছেন, জাইগামের বাংলাদেশেও বাড়ি আছে; তবে কোথায় তা বলতে পারেননি তিনি। কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে অনিকের ওই অফিসে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে; তবে কারো সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, পরিস্থিতি অনুকূলে না আসা পর্যন্ত অনিক বাংলাদেশে আর ব্যবসা চালাবেন না।
No comments:
Post a Comment