Wednesday, October 22, 2014

রাজনৈতিক চাপে সরকারি ৪ ব্যাংকের সিএসআর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হচ্ছে:নয়াদিগন্ত

রাজনৈতিক চাপে সরকারি চার ব্যাংকের ওপর থেকে ‘সিএসআর’ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে। করপোরেট সোস্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও অর্থের অপচয় ঠেকানোর জন্য গত আগস্ট মাসে জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল) ওপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এই চার ব্যাংকের উদ্দেশে বলা হয়, পরবর্ত
ী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সিএসআর খাতে কোনো অর্থ ব্যয় করা যাবে না। সেই থেকে এই চার ব্যাংকে সিএসআর কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এখন আবার এই কার্যক্রম চালু করার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে চাপ দেয়া হচ্ছে। এর ফলে আগামী মাসে চার ব্যাংকে সিএসআর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে বলে জানা গেছে।  ব্যাংকিং সচিব ড. এম আসলাম আলম বলেছেন, সরকারি চার ব্যাংকের সিএসআর অর্থ ব্যয় বন্ধ রাখার নির্দেশটি সাময়িক। এই ব্যাংকগুলোতে শূন্য জায়গায় চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পর্ষদ সদস্য নিয়োগ দেয়া শেষ হলেই সিএসআর কার্যক্রম আবার চালু করা হবে।  এর আগে সিএসআর অর্থ ব্যয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ব্যাংকিং বিভাগের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছিল, ‘লক্ষ করা যাচ্ছে, কয়েকটি রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদগুলো সিএসআরের আওতায় ব্যাপকভাবে অর্থ ব্যয় করছে। এতে ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে এবং সার্বিকভাবে ব্যাংকের প্রভিশনিংয়ের ওপর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে। এমতাবস্থায় পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডকে সিএসআরের আওতায় অর্থ ব্যয় বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।’ সিএসআর অর্থ ব্যয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও জনতা ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. আবুল বারকাত এ নিয়ে অনেকটা বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। আবুল বারকাত অভিযোগ করেন, সুনামগঞ্জে একটি নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় অর্থ প্রদানের জন্য অর্থমন্ত্রী জনতা ব্যাংকের কাছে সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু এই অর্থ দেয়া হয়নি বলে তিনি সিএসআর কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী এ বিষয়টি অস্বীকার করেছিলেন।  সরকারি চার ব্যাংকের সিএসআর কার্যক্রম বন্ধের বিষয়ে ব্যাংকিং বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, এই ব্যাংকগুলোতে একটি সঙ্ঘবদ্ধ সিএসআর ‘জালিয়াতচক্র’ গড়ে উঠেছিল। অনেকটা লবিস্ট হিসেবে কাজ করে এই চক্র। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সিএসআরের আওতায় অর্থ জুগিয়ে দিয়ে তার একটি নির্দিষ্ট পারসেন্টেজ তারা পেয়ে থাকে। তারাই বিভিন্ন পার্টি সংগ্রহ করে ব্যাংকে নিয়ে আসে। তাদের বলা হয়, সিএসআর অর্থ অনুমোদন করিয়ে দেয়া হবে। এর বিনিময়ে মূল অর্থের কিছু অংশ তাদের দিতে হবে। এই অংশের পরিমাণ ২০ ভাগ থেকে ৫০ ভাগ পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ চক্রের সাথে ব্যাংকের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পর্ষদ জড়িত রয়েছে। এমনকি বাইরের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই চক্রের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামেও সিএসআর অর্থ প্রদান করা হয়েছে। কাব, পিকনিক এমনকি বিয়েতে সিএসআর অর্থ দেয়ার নজির রয়েছে। মূলত এসব কারণে সিএসআর এ অর্থ ব্যয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। এখন এটি তুলে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৩ সালে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক সিএসআর আওতায় মোট ৪৪২ কোটি ব্যয় করেছে। এটি ২০০৯ সালের চেয়ে নয় গুণ বেশি। ব্যাংকগুলো সিএসআর আওতায় অর্থ ব্যয় করলে ১০ ভাগ কর রেয়াত সুবিধা পেয়ে থাকে। ২০১৩ সালে একটি ব্যাংকই সিএসআর আওতায় খরচ করেছে ৭৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। প্রতি ব্যাংকে গড়ে সিএসআর আওতায় অর্থ ব্যয়ের পরিমাণ ছিল সাত কোটি ৮৯ লাখ টাকা।

No comments:

Post a Comment