অবৈধ ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) ব্যবসায় এখন যোগ হয়েছে নতুন কৌশল ‘ভিপিএন’ (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক)। এর মাধ্যমে অপরাধী চক্র দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে ভিওআইপি। বিশ্বমানের ও অত্যাধুনিক এ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে অপরাধীদের অবস্থান শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, এ রিমোট নিয়ন্ত্রণকে সংক্ষেপে ‘ওয়্যারলেস’ পদ্ধতি বা ‘মোবাইল নেটওয়ার্ক’ বলা হয়। বাং
লাদেশে এর ব্যবহার র্যাব গোয়েন্দাদেরও অবাক করেছে। তারা বলছেন, শুধু ঢাকাতেই অসংখ্য গ্রুপ এভাবে অবৈধ ব্যবসা করে যাচ্ছে। এতে আন্তর্জাতিক চক্রও জড়িত। র্যাবের তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ভিপিএন অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার মাধ্যম। দ্রুতগতির ইন্টারনেট রয়েছে এমন বিশেষ কোনো স্থানে ভিওআইপি সরঞ্জামাদি স্থাপন করা হয়। এরপর নিরাপদ স্থান থেকে ল্যাপটপের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এসব সরঞ্জামাদি। সেক্ষেত্রে ল্যাপটপে টিম ভিউয়ার বা এ জাতীয় বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে অপরাধী চক্র। ফলে কোথা থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, কারা করছেন- তা শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। সম্প্রতি এমন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সাতজনকে গ্রেফতার করে র্যাব। এদের একজন আল আমিন। র্যাব-২ সূত্র জানায়, ১২ অক্টোবর গাজীপুর সদরের নয়নপুর থেকে আল আমিনকে গ্রেফতারের সময় তার কাছে নতুন পদ্ধতির ভিওআইপি সরঞ্জাম ছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানির ১৭৮টি সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়। আল আমিনের স্বীকারোক্তি মতে, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা মনিটর করতে ভিপিএন সার্ভারের সঙ্গে ‘এসবিও’ নামের সফটওয়্যার ব্যবহার করতেন তিনি। র্যাব ও বিটিআরসির বিশেষজ্ঞরা পর্যালোচনা করে দেখেন, সফটওয়্যারটির মনিটরিং অ্যাডমিন হিসেবে আল আমিনের নাম রয়েছে। তিনি ড্যাশ বোর্ডের মাধ্যমে তার অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার ইনকামিং কল মনিটরিং করতেন। আল আমিন গোয়েন্দাদের বলেছেন, এ পদ্ধতির ফলে বাংলাদেশে একশ্রেণীর ভিওআইপি ব্যবসায়ী কোন ধরনের সনদ ছাড়াই হাতের মুঠোয় এনেছেন অবৈধ বাণিজ্য। র্যাব-২ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কেএম আজাদ যুগান্তরকে বলেন, আল আমিন সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে ক্রেতাদের অনলাইনে টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়ে থাকেন। নতুন পদ্ধতির ভিওআইপি ব্যবসা সংক্রান্ত সব আর্থিক লেনদেন করতে তিনি ব্র্যাক ব্যাংকের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন। র্যাব-২ জানায়, আল আমিন এক সময় রাজধানীর মিরপুরে ইন্টারনেটের ব্যবসা করতেন। তিনি কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। নিরাপদে বাণিজ্য করতে ছয় বছর আগে তিনি গাজীপুরে চলে যান। সেখানে টেইলার্সের দোকানের আড়ালে আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে যোগসূত্রের মাধ্যমে এ ব্যবসা চালান। আল আমিন গাজীপুরে বসে ধানমণ্ডি, গুলশান ও বারিধারাসহ ঢাকার পাঁচটি এলাকা কন্ট্রোল করে থাকেন। এর আগে ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর দক্ষিণখান, উত্তরা পশ্চিম, হাজারীবাগ ও তুরাগ থানা এলাকা থেকে এ চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব-১। এরা হলেন- জাহিদুর রহমান ওরফে জাহাঙ্গীর, জাকির হোসেন, শফিকুল বারী, রিপন খান, ইলিয়াস হোসেন ও সালেহ আহমেদ সজীব। আন্তর্জাতিক চক্রের সহায়তায় অবৈধ বাণিজ্য করে আসছে তারা। এ কাজে বিভিন্ন কোম্পানির ৬৪৩টি সিমকার্ড ব্যবহার করেছে। র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ যুগান্তরকে বলেন, দূর থেকে সফটওয়্যারের মাধ্যমে অবৈধ ভিওআইপি বাণিজ্য একটি নতুন ফর্মুলা। কিন্তু অপরাধীরা যতই কৌশলী হোক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনতে র্যাবও কৌশল অবলম্বন করছে। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের তথ্য অনুযায়ী নেপথ্যে থাকা গডফাদারদের চিহ্নিত করতেও কাজ চলছে। গ্রেফতার জাহিদুরের তথ্য অনুযায়ী, ইন্টারনেটে তারা বিদেশী চক্রের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে থাকেন। জাহিদুর দীর্ঘদিন ধরেই এ ব্যবসা করছেন। কিন্তু পদ্ধতিগতভাবে মোবাইল নেটওয়ার্ক বা ওয়্যারলেস পদ্ধতি আগের বাণিজ্যের চেয়ে ঝুঁকিমুক্ত। যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর চোখ ফাঁকি দেয়া যেতে পারে। আর এ কাজে তাদের সহায়তা করে থাকেন বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির সংশ্লিষ্টরাই। তথ্যপ্রযুক্তির সম্পন্ন গোয়েন্দারা বলছেন, ভিপিএন পদ্ধতিতে ব্যবহারকারী এবং প্রাইভেট নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করে ইন্টারনেটে ভার্চুয়াল সুড়ঙ্গ তৈরি হয়। ফলে ভিপিএন নেটওয়ার্কে সব তথ্য নিরাপদ থাকে। এমনকি অবস্থান নির্ণয়ও করা যায় না। এ পদ্ধতি প্রসঙ্গে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান যুগান্তরকে বলেন, সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে র্যাব অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। কিছু ব্যক্তি তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের রাজস্ব আয়কে বাধাগ্রস্ত করছে। অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় অত্যাধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার প্রতিরোধে র্যাবের অভিযান ও প্রযুক্তিগত গোয়েন্দা তৎপরতা চলমান আছে।
No comments:
Post a Comment